ইউক্রেনে শান্তি রক্ষার্থে সেনা মোতায়েন করতে ‘প্রস্তুত’ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেছেন, একটি শান্তি চুক্তির অংশ হিসেবে ইউক্রেনের নিরাপত্তা রক্ষার্থে তিনি ব্রিটিশ সেনা মোতায়েন করতে 'প্রস্তুত ও আগ্রহী'। খবর বিবিসি'র।
কিয়ার স্টারমার বলেন, 'পুতিনকে ভবিষ্যতে আরও আগ্রাসন থেকে বিরত রাখতে চাইলে ইউক্রেনে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।'
সোমবার প্যারিসে ইউরোপীয় নেতাদের জরুরি সম্মেলনে যোগ দেওয়ার আগে তিনি বলেন, যুক্তরাজ্য ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং প্রয়োজনে 'আমাদের নিজস্ব সেনা মোতায়েন' করতেও প্রস্তুত।
তিনি 'ডেইলি টেলিগ্রাফ'-এ লিখেছেন, 'আমি এই কথা হালকাভাবে বলছি না। ব্রিটিশ সেনাদের বিপদের মুখে ফেলার সম্ভাব্য সিদ্ধান্তের সঙ্গে যে গুরুদায়িত্ব আসে, তা আমি গভীরভাবে অনুভব করি।'
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, 'ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যে কোনো ভূমিকা রাখা মানে আমাদের মহাদেশ ও নিজ দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।'
তিনি বলেন, রাশিয়ার যুদ্ধ শেষ হলেও 'তা এমন এক সাময়িক বিরতি হয়ে থাকতে পারে না, যার পর পুতিন আবার আক্রমণ চালাবেন'।
যুক্তরাজ্যের সেনাদের ইউক্রেনীয় ও রুশ নিয়ন্ত্রিত এলাকার সীমান্তে অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের সেনাদের সঙ্গে মোতায়েন করা হতে পারে।
কিয়ার স্টারমারের এ ঘোষণার আগে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান লর্ড ড্যানাট বিবিসিকে জানান, যুক্তরাজ্যের সামরিক বাহিনী এতটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে যে, তারা ইউক্রেনে ভবিষ্যৎ শান্তিরক্ষা মিশনের নেতৃত্ব দিতে পারবে না।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শুধু ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, যুদ্ধবিরতির পর ব্রিটিশ সেনারা ইউক্রেনের নিরাপত্তায় ভূমিকা রাখতে পারে।
এই মাসের শেষ দিকে ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে কিয়ার স্টারমারের। তিনি বলেন, 'স্থায়ী শান্তির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা অপরিহার্য, কারণ একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রই পুতিনকে পুনরায় আক্রমণ চালানো থেকে বিরত রাখতে সক্ষম।'
স্টারমার ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন, কারণ যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার সঙ্গে এমন শান্তি আলোচনা এগিয়ে নিচ্ছে, যেখানে ইউরোপকে উপেক্ষা করা হতে পারে এবং এ নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও আসন্ন দিনগুলোতে সৌদি আরবে রুশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করার পরিকল্পনা করছেন।
শনিবার ইউক্রেনবিষয়ক বিশেষ মার্কিন দূত কিথ কেলোগ বলেন, ইউরোপীয় নেতাদের শুধু পরামর্শ নেওয়া হবে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যকার আলোচনায় তারা অংশ নেবেন না।
রোববার এক ঊর্ধ্বতন ইউক্রেনীয় সরকারি সূত্র বিবিসিকে জানায়, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে আলোচনার জন্য কিয়েভকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
এই সপ্তাহের শুরুর দিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করেছেন এবং ইউক্রেনে 'এই হাস্যকর যুদ্ধ' বন্ধে 'তাৎক্ষণিকভাবে' আলোচনা শুরু হবে।
এরপর ট্রাম্প তার পরিকল্পনার বিষয়ে জেলেনস্কিকে 'অবহিত' করেন।
রোববার ট্রাম্প জানান, তিনি আশা করেন যে জেলেনস্কি আলোচনায় অংশ নেবেন। তিনি আরও জানান, ইউক্রেনের জন্য ইউরোপীয় দেশগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র কিনতে দেওয়া হবে।
যুদ্ধ শেষ করার সময়সূচি নিয়ে বিবিসির প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, 'আমরা এটি শেষ করতে কাজ করছি' এবং এর জন্য আগের প্রশাসনের ইউক্রেন নীতিকে দায়ী করেন।
'দ্য টেলিগ্রাফ'-এ লেখা এক নিবন্ধে কিয়ার স্টারমার বলেন, 'শান্তি যে কোনো মূল্যে আসতে পারে না। এই আলোচনায় ইউক্রেনকে অবশ্যই থাকতে হবে, কারণ এর কম কিছু মেনে নেওয়া মানেই পুতিনের সেই অবস্থান স্বীকার করা– যে ইউক্রেন কোনো প্রকৃত রাষ্ট্র নয়।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা আফগানিস্তানের মতো আরেকটি পরিস্থিতি তৈরি করতে পারি না, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি তালেবানের সঙ্গে আলোচনা করেছিল এবং আফগান সরকারকে বাইরে রেখেছিল।' এটি ট্রাম্পের প্রথম প্রশাসনের সময়কার একটি চুক্তি, যা পরে বাস্তবায়ন করেন বাইডেন।
স্টারমার বলেন, 'আমি নিশ্চিত, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও এটি এড়াতে চাইবেন।'
তিনি বলেন, ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদের পথ 'অপরিবর্তনীয়', এবং ইউরোপীয় দেশগুলোকে 'নিজেদের প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়াতে হবে এবং জোটে আরও বড় ভূমিকা নিতে হবে।'
যুক্তরাজ্য বর্তমানে প্রতিরক্ষায় মোট জিডিপির প্রায় ২.৩ শতাংশ ব্যয় করছে এবং এটি অর্থনীতির ২.৫ শতাংশ পর্যন্ত ব্যয় বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা উল্লেখ করা হয়নি।
ট্রাম্প ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোকে জিডিপির ৫ শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় করার আহ্বান জানিয়েছেন। আর ন্যাটোর মহাসচিব মার্ক রুত্তে মিত্রদের ৩ শতাংশের বেশি ব্যয় করার পরামর্শ দিয়েছেন।
২০০৬ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা লর্ড ড্যানাট বিবিসিকে বলেন, ইউক্রেনে শান্তিরক্ষা মিশনের জন্য পর্যায়ক্রমে ৪০ হাজার ব্রিটিশ সেনা প্রয়োজন, 'কিন্তু আমাদের কাছে এত সংখ্যক সেনা নেই'।
তিনি আরও বলেন, শান্তি রক্ষার জন্য মোট (প্রায়) ১ লাখ সেনার প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য অংশ যুক্তরাজ্যকে দিতে হবে। 'কিন্তু বাস্তবে আমরা তা করতে পারব না।'
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর আহ্বানে প্যারিসে আয়োজিত বৈঠকে কিয়ারে স্টারমারের সঙ্গে জার্মানি, ইতালি, পোল্যান্ড, স্পেন, নেদারল্যান্ডস ও ডেনমার্কের নেতারা উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া ইউরোপীয় কাউন্সিল ও ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্টদের সঙ্গেও বৈঠকে যোগ দেবেন মার্ক রুত্তে।