ব্রাজিলের এলিমেন্টারি ও হাই স্কুলের শিক্ষার্থীদের স্মার্টফোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা

ব্রাজিলের স্কুলে শিক্ষার্থীদের স্মার্টফোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে নতুন আইন পাস করা হয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা সোমবার (১৪ জানুয়ারি) নতুন আইনটি স্বাক্ষর করেছেন। আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে এই আইন এলিমেন্টারি এবং হাই স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য কার্যকর হবে।
এই নতুন আইন অনুযায়ী, শিক্ষার্থীরা শুধু জরুরি পরিস্থিতি ও বিপদ, শিক্ষা সংক্রান্ত প্রয়োজনে অথবা প্রতিবন্ধকতা থাকলে স্মার্টফোন ব্যবহার করতে পারবে।
শিক্ষামন্ত্রী কামিলো সান্তানা সাংবাদিকদের বলেন, "শিশুরা এখন খুব অল্প বয়সে অনলাইনে চলে যাচ্ছে, যার ফলে অভিভাবকদের জন্য তাদের কার্যকলাপে নজর রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে। স্কুলে স্মার্টফোন ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা তাদের জন্য সহায়ক হবে।"
কামিলো বলেন, "আমরা চাই অন্যান্য অনেক দেশের মতো, স্মার্টফোন শুধু শ্রেণীকক্ষে শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে এবং শিক্ষকের নির্দেশনায় ব্যবহার করা হোক।"
এই আইনটি রাজনৈতিকভাবে বিরল সমর্থন পেয়েছে। বামপন্থী প্রেসিডেন্ট লুলা এবং তার ডানপন্থি প্রতিপক্ষ ও সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারো উভয়ের পক্ষ থেকেই এটি এসেছে।
অনেক অভিভাবক ও শিক্ষার্থীও এই পদক্ষেপকে সমর্থন জানিয়েছেন। ব্রাজিলিয়ান পোলস্টার ডেটাফোলিয়া অক্টোবর মাসে প্রকাশিত এক জরিপে জানিয়েছে, প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ জনগণ স্কুলে শিশু এবং কিশোরদের স্মার্টফোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পক্ষে। ৭৫ শতাংশের বেশি উত্তরদাতা জানিয়েছেন, এই ডিভাইসগুলো তাদের সন্তানদের জন্য অনেক ক্ষতিকর ।
২০২৩ সালের তথ্য অনুযায়ী, ব্রাজিলের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ স্কুলে মোবাইল ফোন ব্যবহারে কিছু বিধিনিষেধ রয়েছে। ব্রাজিলিয়ান ইন্টারনেট স্টিয়ারিং কমিটি গত বছরের আগস্ট মাসে প্রকাশিত এক জরিপে জানায়, ২৮ শতাংশ স্কুল সম্পূর্ণভাবে এটি নিষিদ্ধ করেছে।
ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরো, মারানহাও এবং গোইয়াস রাজ্য ইতোমধ্যেই স্কুলে স্মার্টফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করার জন্য স্থানীয় আইন পাস করেছে। তবে, কর্তৃপক্ষ এসব আইন কার্যকর করতে সংগ্রাম করছে।
পাবলিক এবং প্রাইভেট স্কুলে স্মার্টফোন নিষিদ্ধ করা উচিত কি না, তা নিয়ে ব্রাজিলের সর্ববৃহৎ রাজ্য সাও পাওলো কর্তৃপক্ষ এখন আলোচনা করছে।
২৫ বছর বয়সী গ্যাব্রিয়েল আলেক্সান্দ্রা হেনরিকেস পিনহেইরো একটি বিউটি পার্লারে কাজ করেন। তিনি অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত এক ছেলে সন্তানের মা। তিনি এ ধরনের নিষেধাজ্ঞার পক্ষে। তবে, তিনি মনে করেন, প্রাপ্তবয়স্করা স্মার্টফোন ব্যবহারের খারাপ উদাহরণ হিসেবে থাকবেন।
তিনি বলেন, "এটা কঠিন। আমি চেষ্টা করি আমার ছেলের স্ক্রীন দেখার সময় সীমিত রাখতে। তবে যখনই আমাকে কোন কাজ করতে হয়, তখন আমাকে স্মার্টফোন ব্যবহার করতে হয় যাতে সব কাজ করতে পারি।"
বছরের পর বছর ধরে প্রতিষ্ঠান, সরকার, অভিভাবক ও অন্যান্যরা শিশুদের স্মার্টফোন ব্যবহারের সাথে বুলিং, আত্মহত্যার চিন্তা, উদ্বেগ এবং শেখার জন্য প্রয়োজনীয় মনোযোগের অভাবকে যুক্ত করেছে। গত বছর চীন শিশুদের স্মার্টফোন ব্যবহারের ওপর সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছে। আবার ফ্রান্সে ৬ থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশুদের জন্য স্কুলে স্মার্টফোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে সেল ফোন নিষেধাজ্ঞা গ্রহণের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সেখানে আটটি রাজ্য মোবাইল ফোন ব্যবহারের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে বা আইন পাস করেছে, যাতে ছাত্রদের মোবাইল ফোন ব্যবহারের হার কমানো যায় এবং শ্রেণীকক্ষে ব্যাঘাত কমানো যায়।
ইউরোপের বড় সংখ্যক অভিভাবক এখন উদ্বিগ্ন , কারণ শিশুদের স্মার্টফোন ব্যবহারে তাদের নিরাপত্তা ও মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি হচ্ছে।
ইউনেস্কোর সেপ্টেম্বর মাসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পৃথিবীর এক চতুর্থাংশ দেশ ইতোমধ্যেই স্কুলে স্মার্টফোন ব্যবহারের ওপর সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছে।
গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট শুনানিতে মেটার সিইও মার্ক জাকারবার্গ সামাজিক মাধ্যমে শিশুদের শোষণ, বুলিং বা আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেওয়ার জন্য অভিভাবকদের কাছে দুঃখপ্রকাশ করেন। তিনি উল্লেখ করেন, মেটা "বিভিন্ন শিল্পে" শিশুদের সুরক্ষার জন্য ধারাবাহিকভাবে বিনিয়োগ করছে।