শাস্তি হিসেবে বুলডোজার দিয়ে বাড়ি ভাঙা যাবে না: ভারতের সুপ্রিম কোর্ট

কোনো ব্যক্তি ফৌজদারী মামলায় অভিযুক্ত বা দোষী সাব্যস্ত হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে বুলডোজার দিয়ে তার ঘরবাড়ি ভেঙে ফেলা যাবে না বলে রায় দিয়েছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। এ সংক্রান্ত একাধিক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে আজ বুধবার আদালত এ রায় ঘোষণা করেন। খবর বিবিসির।
সুপ্রিম কোর্ট বলেন, নির্বাহী [সরকার] বিচারক হতে পারে না এবং সম্পত্তি গুঁড়িয়ে দিতে পারে না।
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বিশেষ করে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) শাসিত রাজ্যগুলোতে অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তির বাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়ার প্রচলন রয়েছে।
এদিকে বাড়ি ভাঙার কারণ হিসেবে কর্তৃপক্ষ সেগুলোকে অবৈধ সম্পত্তি বা স্থাপনা হিসেবে উল্লেখ করলেও বিশেষজ্ঞরা সরকারের এ পদক্ষেপের আইনি বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আগেই।
বিরোধীদলীয় নেতাদের পাশাপাশি মানবাধিকার কর্মীরাও জানান, অনেক সময় বুলডোজার দিয়ে হিন্দু পরিবারগুলোর বাড়ি ভেঙে দেওয়া হলেও মুসলিমদের লক্ষ্য করেই এ নীতির বেশি প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। আর বিশেষ করে ধর্মীয় সহিংসতা বা আন্দোলনের পর এ ঘটনা বেশি দেখা যায়।
বিজেপি অবশ্য এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং দলটির বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা বুলডোজার দিয়ে বাড়ি ভেঙে ফেলাকে অপরাধের বিরুদ্ধে তাদের কঠোর অবস্থান হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
আজ শুনানির সময় আদালতের পক্ষ থেকে বলা হয়, সাংবিধানিক গণতন্ত্রে এ ধরনের উচ্ছৃঙ্খল ও স্বেচ্ছাচারী কাজের স্থান নেই। যারা আইন হাতে তুলে নেবে, তাদের জবাবদিহি করতে হবে।
পরে আদালতের জারি করা এক নির্দেশনায় বলা হয়, কারো কথিত অবৈধ সম্পত্তি ভেঙে ফেলার আগে অবশ্যই ওই সম্পত্তির ভোগদখলকারীকে অন্তত ১৫ দিনের নোটিশ দিতে হবে। এতে বাড়ি ভাঙার সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ থাকতে হবে। যদি ১৫ দিনের মধ্যে অভিযুক্ত ব্যক্তি নোটিশের জবাব না দেন, তখন কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিতে পারবে। এছাড়াও ওই ব্যক্তিকে অবশ্যই সরকারের এ আদেশ চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ দিতে হবে।
আরও বলা হয়, এ নির্দেশনার লঙ্ঘন আদালত অবমাননা বলে গণ্য হবে।
শুনানির পুরো সময় আদালত বিচারবহির্ভূত বাড়ি ভাঙার কঠোর সমালোচনা করেন। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ঘরবাড়ি ভেঙে দেওয়া ঠেকাতে এ রায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে। মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এ রায়ের প্রশংসা করে বলেছে যে দেরিতে হলেও জনগণের অধিকার সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
অনুবাদ: রেদওয়ানুল হক