দক্ষিণ আফ্রিকায় পাচার ঠেকাতে গন্ডারের শিঙে প্রবেশ করানো হলো তেজস্ক্রিয় পদার্থ

পাচার ঠেকাতে জীবন্ত গন্ডারের শিংকেই এবার 'তেজস্ক্রিয়' করে ফেলেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিজ্ঞানীরা। আসলে গন্ডারের শিঙে পদার্থ প্রবেশ করিয়েছেন তারা। এর মাধ্যম সীমান্ত চৌকি দিয়ে পাচার করার সময় গন্ডার শনাক্ত করা সহজ হবে।
গন্ডারে শিঙে তেজস্ক্রিয় পদার্থ বসানোর প্রকল্পের দায়িত্বে আছেন ইউনিভার্সিটি অভ উইটওয়াটার্সর্যান্ডের রেডিয়েশন অ্যান্ড হেলথ ফিজিকস ইউনিটের পরিচালক জেমস লারকিন। তিনি এএফপিকে বলেন, তারা একটি গন্ডারের 'শিঙে দুটো ছোট্ট তেজস্ক্রিয় চিপ ঢুকিয়ে' দিয়েছেন।
বিশ্বের অধিকাংশ গন্ডারের নিবাস দক্ষিণ আফ্রিকায়। এশিয়ায় ঐতিহ্যবাহী কিন্তু বৈজ্ঞানিকভাবে অপ্রমাণিত ওষুধ বানানোর জন্য প্রাণীটির শিঙের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কালোবাজারে গন্ডারের শিং চড়া দামে বিক্রি হয়। একসময় ভিয়েতনামে কোকেনের চেয়ে দামি হয়ে উঠেছিল গন্ডারের শিং। ফলে দক্ষিণ আফ্রিকায় গন্ডার পাচার বড় সমস্যা।
কিন্তু তেজস্ক্রিয় পদার্থ প্রবেশ করানোর ফলে গন্ডারের শিং আর মানুষের ভক্ষণের উপযোগী থাকবে না। সংরক্ষণবিদ আরি ভ্যান ডিভেন্টার একে পাচার ঠেকানোর 'সেরা বুদ্ধি' বলে উল্লেখ করেছেন।
তেজস্ক্রিয় পদার্থ প্রবেশ করানো হয়েছে ইনজেকশনের মাধ্যমে। এর জন্য প্রথমে গন্ডারকে ঘুম পাড়িয়ে নেওয়া হয়। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকার ওয়াটারবার্গ এলাকায় লিমপোপো গন্ডার সংরক্ষণ এলাকায়।
তেজস্ক্রিয় পদার্থটি গন্ডারের শিংকে মানুষের জন্য বিষাক্ত করে তোলে।
তবে পদার্থ খুব কম মাত্রায় প্রবেশ করানো হচ্ছে। ফলে এটি প্রাণীটির স্বাস্থ্য বা পরিবেশের কোনো ক্ষতি করছে না বলে জানান লারকিন।
গন্ডারগুলোকে কার্যকরভাবে রক্ষা করা যাচ্ছে, তা নিশ্চিত করার জন্য তার দল ফলো-আপ হিসেবে রক্তের নমুনা নেবে।
এ তেজস্ক্রিয় পদার্থ গন্ডারের শিঙে পাঁচ বছর টিকে থাকবে। ১৮ মাস পরপর প্রাণীটির শিং কেটে ফেলার চাইতে এ প্রক্রিয়ায় খরচ অনেক কম বলে জানান বিজ্ঞানীরা। পাচারকারীদের কাছে দাম কমিয়ে দেওয়ার জন্য গন্ডারের শিং কেটে ফেলা হয়।

এছাড়া শিং ফের গজালেও পাচারকারীরা শিং কাটার সময় গন্ডারকে ঘুম না পাড়িয়ে হত্যা করে ফেলে। এটি প্রতিরোধেই ১৮ মাস পরপর গন্ডারের শিং কেটে ফেলার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু তাতেও খুব একটা কাজ হয়নি।
রাইসোটোপ নামক এ প্রকল্পে ২০টি গন্ডার অংশ নিচ্ছে। লারকিন বলেন, আন্তর্জাতিক সীমান্ত চৌকিতে ডিটেক্টরে ধরা পড়ার মতো পর্যাপ্ত তেজস্ক্রিয় পদার্থ প্রবেশ করানো হবে গন্ডারগুলোর শরীরে।
কাজেই কোনো পাচারকারী যদি তেজস্ক্রিয় চিপযুক্ত ছিং পাচার করতে চায়, তাহলে সেটি শনাক্ত করা যাবে।
সীমান্ত এজেন্ট প্রায়ই রেডিয়েশন ডিটেক্টর দিয়ে অবৈধভাবে আমদানি করা পণ্য ধরে ফেলেন। এছাড়া বন্দর ও বিমানবন্দরে স্থাপন করা হাজার হাজার রেডিয়েশন ডিটেক্টর আছে যেগুলো এসব চিপ শনাক্ত করতে পারবে।
দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রায় ১৫ হাজার জীবিত গন্ডার রয়েছে বলে উঠে এসেছে ইন্টারন্যাশনাল রাইনো ফাউন্ডেশনের এক প্রাক্কলনে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দেশটির পরিবেশ মন্ত্রণালয় বলেছিল, অবৈধ বাণিজ্য ঠেকাতে সরকারের আপ্রাণ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ২০২৩ সালে ৪৯৯টি গন্ডার হত্যা করা হয়েছে, বেশিরভাগই রাষ্ট্রচালিত পার্কে। এ সংখ্যা ২০২২ সালের ১১ শতাংশ বেশি।
লিমপোপো গন্ডার সংরক্ষণ এলাকার প্রতিষ্ঠাতা আরি ভ্যান ডিভেন্টার বলেন, গন্ডারের শিং কেটে ও শিঙে বিষ মিশিয়ে পাচারকারীদের ঠেকানো সম্ভব হয়নি। তবে তেজস্ক্রিয় পদার্থ প্রবেশ করানোর এ উদ্যোগ সফল হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।