মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলের আরেকটি পুলিশ স্টেশনের নিয়ন্ত্রণ আরাকান আর্মির হাতে

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রাথেডং টাউনশিপের সামরিক জান্তা পরিচালিত একটি পুলিশ স্টেশন গতকাল শুক্রবার দখল করেছে আরাকান আর্মি।
স্থানীয় একটি সূত্র বলছে, বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) স্থানীয় সময় সকালে জাতিগত সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি রাখাইনের রাজধানী সিত্তে থেকে কয়েক মাইল উত্তরে অবস্থিত একটি বৃহৎ উপকূলীয় গ্রামের কোয়ে তান কাউক সীমান্তরক্ষী পুলিশ স্টেশনে আক্রমণ করে।
রেডিও ফ্রি এশিয়ার (আরএফএ) খবরে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকাল পর্যন্ত জান্তা সৈন্যরাও বিমান ও নৌবাহিনী এবং ভারি কামান দিয়ে আরাকান আর্মিদের প্রতিহত করার চেষ্টা করে। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়।
ওই সূত্রটি বলে, 'আমি নিশ্চিত করতে পারি যে এটির (পুলিশ স্টেশন) নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ কারণেই গোলাগুলিও থেমে গেছে। তারা (সরকারি বাহিনী) যুদ্ধবিমান দিয়ে আক্রমণ করছিল। কিন্তু এখন তারা চলে গেছে।'
বৃহস্পতিবার ম্রাউক-ঊ শহরের জান্তা নিয়ন্ত্রিত প্রধান এলাকাটি দখলের পর এবার পুলিশ স্টেশনটিরও দখল নিল বিদ্রোহীরা।
২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি এক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে মিয়ানমারের শাসন ক্ষমতা দখল করে দেশটির সামরিক বাহিনী। এর পর জান্তার সঙ্গে আরাকান আর্মির একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়। গত বছরের নভেম্বরে এ যুদ্ধবিরতি শেষ হয়। এখন রাখাইনে জান্তা সরকারের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তু দখলে নিতে এগোচ্ছে বিদ্রোহীরা।
জাতিগত সশস্ত্র বিদ্রোহী জোট থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স এক বিবৃতিতে জানায়, বৃহস্পতিবার ম্রাউক-ঊ শহরের জান্তার ৩১ পুলিশ ব্যাটালিয়নকে আটক করে আরাকান আর্মি। ওই শহরের কার্যত নিয়ন্ত্রণ এখন আরাকান আর্মির হাতে। এর ঠিক আগে ওই এলাকার তিন ব্যাটালিয়ন জান্তা সৈন্যকে আত্মসমপর্ণের জন্যও বাধ্য করে তারা।
আরাকান আর্মি এই জোটের সদস্য। এ জোটে আরও রয়েছে তা'য়াং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি ও মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি।
গত ২৭ অক্টোবর থেকে ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স রাখাইন ও উত্তরাঞ্চলীয় শান রাজ্যে জান্তাবিরোধী অভিযান শুরু করে। ধারাবাহিক এসব অভিযানে ব্যাপক সাফল্য পায় জোটটি। তাদের হামলা ঠেকাতে ব্যর্থ হয়ে সরকারি বাহিনীর কয়েক হাজার সদস্য আত্মসমর্পণ কিংবা পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে পালিয়ে যায়।
নিরাপত্তাজনিত কারণে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা জানান, বৃহস্পতিবার ম্রাউক- ঊ শহরের জান্তা বাহিনী ও পুলিশ উভয়ই আত্মসমর্পণ করেছে।
শুক্রবার তিনি আরএফএ-কে বলেন, 'ম্রাউক-ঊ শহরে লড়াই শেষ। স্থানীয়দের এই মুহূর্তে শহরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। আমি শুনেছি তারা (জান্তা বাহিনী ও পুলিশ) আত্মসমর্পণ করেছে। আরাকান আর্মি সামরিক ব্যাটালিয়নের ওপর আক্রমণ করেছিল। ব্যাটালিয়নের কমান্ডার নিহত হওয়ার পর জান্তা সৈন্যরা আত্মসমর্পণ করে।'
তবে ঠিক কতজন পুলিশ ও জান্তা বাহিনীর সদস্য আত্মসমর্পণ করেছে এবং আরাকান আর্মির হেফাজতে রয়েছে, তা সুস্পষ্ট করে জানা যায়নি।

বর্তমানে জান্তার কিয়াকতাউভিত্তিক নাম্বার ৯ মিলিটারি অপারেশন কমান্ড হেডকোয়ার্টারের অধীন ১০ ব্যাটালিয়নের সবগুলোর নিয়ন্ত্রণ এখন আরাকান আর্মির হাতে। এছাড়াও রাখাইনজুড়ে ম্রাউক-ঊ, কিয়াকতাউ ও মিনবায়া টাউনশিপের নিয়ন্ত্রণও এখন আরাকান আর্মির হাতে। সবগুলো টাউনশিপই ম্রাউক-ঊ ডিস্ট্রিক্টে অবস্থিত।
বাসিন্দারা জানান, এই তিনটি টাউনশিপে পুলিশ কিংবা সামরিক বাহিনীর একজন সদস্যও নেই। তাদের বেশিরভাগই আত্মসমর্পণ করেছে, পালিয়েছে, আক্রমণের সময় মারা গেছে, আর নয়তো আরাকান আর্মির হাতে আটক হয়েছে।