বাড়ি থেকে পালিয়েও বাঁচার উপায় নেই! গাজায় নির্বিচারে বোমাবর্ষণ চলছেই

গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে গাজায় ক্রমাগত বিমান হামলা করছে ইসরায়েল। আর এতে করে নিজ বসতবাড়ি কিংবা জীবন হারানো যেন গাজাবাসীর নিত্যদিনের শঙ্কায় পরিণত হয়েছে।
ঠিক তেমনি একজন সেন্ট্রাল গাজার দেইর আল-বালাহ অঞ্চলের বাসিন্দা মোহাম্মদ আবুজওয়া। গত ১৩ অক্টোবর ইসরায়েলের বোমাবর্ষণে তার বাড়ি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়।
হামলায় আবুজওয়ার আট জন স্বজন নিহত হন। তাই জীবন বাঁচাতে বাড়িঘর ছেড়ে তিনি গাজার দক্ষিণাঞ্চলে আশ্রয় নেন। কিন্তু তাতেও স্বস্তি নেই। প্রতিনিয়ত বোমা হামলায় মৃত্যুর পরোয়ানা হাতে নিয়ে তিনি বেঁচে রয়েছেন।
ঠিক তেমনি গত রবিবার আবুজওয়া যে বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন, সেটি ভূমিকম্পের মতো কেঁপে ওঠে। একটু খেয়াল করলে দেখতে পারেন যে, বাড়িটির জানালা ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে এবং দরজার ফ্রেমও ভেঙ্গে গেছে।
প্রথমদিকে ঠিক বোঝা যাচ্ছিল না যে, ঠিক কী হচ্ছে। অবস্থা বুঝতে বাইরে বেড়িয়ে আসেন আবুজওয়া। তখন তিনি দেখতে পান, ঠিক পাশের বাড়িতেই বিমান হামলা করেছে ইসরায়েল। কিছুক্ষণ পর সবাই সেই ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কারের কাজ শুরু করে।
বেসামরিক নাগরিকের নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে ইসরায়েল গাজার বাসিন্দাদের উত্তরাঞ্চল থেকে দক্ষিণাঞ্চলে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু সেই দক্ষিণাঞ্চলেও হচ্ছে বিমান হামলা; নিহত হয়েছেন অনেকেই।
আবুজওয়া জানান, তার পরিবার উত্তরাঞ্চলে ফিরে যাওয়ার কথা ভাবছে। কিন্তু যুদ্ধবিরতি না হলে তিনি পরিবারসহ আপাতত এখানে থাকারই পরিকল্পনা করেছে।
আবুজওয়ার চিন্তাভাবনা অনেকটা এমন যে, "বজ্রপাত একই স্থানে দুবার আঘাত করে না।" যদিও তার প্রতিবেশীর বাড়ি এবং রাস্তার উপরে একটি বাড়ি বোমা হামলার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে এবার অনেকটা বাজি ধরেছেন যে, তিনি আশ্রয় নেওয়া বাড়িটি হয়তো বোমা হামলা থেকে রক্ষা পাবে।
আবুজওয়া বলেন, "এখানে থাকাটা নিরাপদ নাও হতে পারে। কিন্তু আমরা আসলে জানি না, কোনটা করা ঠিক হবে। কারণ গাজার কোনো জায়গায়ই এখন আর নিরাপদ নয়।"
অন্যদিকে গত সোমবার গভীর রাত থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত গাজা উপত্যকা জুড়ে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নারী ও শিশুসহ অন্তত ১১০ জন নিহত হয়েছে বলে আল জাজিরাকে জানিয়েছে একটি মেডিকেল সূত্র।
গত কয়েক ঘণ্টায় উত্তর গাজার শরণার্থী শিবির আল-শাতি এবং জাবালিয়ার আল-বালাদ; মধ্য গাজার আল-বুরেজ শরণার্থী শিবির এবং দক্ষিণের দুটি এলাকা রাফাহ ও খান ইউনিসে ইসরায়েলি বিমান হামলার খবর পাওয়া গেছে।
ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফা-ও খবরটি নিশ্চিত করে বলেছে, রাফাহ-তে সবচেয়ে বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। নিহত হয়েছে ৩০ জনেরও বেশি মানুষ।
এদিকে, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রোববার (২২ অক্টোবর) জানিয়েছেন, ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি বোমা হামলায় ৫,০৮৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে; এরমধ্যে রয়েছে ২,০৫৫ শিশু।
আর ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত ১৫ হাজার ২৭৩ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে আরব নিউজ।