রাশিয়ার কেএইচ-২২ মিসাইল, থামানোর অস্ত্র নেই কিয়েভের কাছে!

১৪ জানুয়ারি কেএইচ-২২ মিসাইল নিক্ষেপ করে ইউক্রেনের নিপ্রোতে একটি নয়তলা ভবনে হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। ইউক্রেনের বিমানবাহিনী জানিয়েছে, এ মিসাইল হামলা ঠেকানোর কোনো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নেই তাদের কাছে। খবর দ্য ইউরেশিয়ান টাইমস-এর।
রাশিয়ার তৈরি কেএইচ-২২ জাহাজ-বিধ্বংসী মিসাইলটি সময়ের সাথে সাথে 'বিমানবাহী রণতরী ঘাতক' তকমা পেয়েছে।
ইউক্রেনের সশস্ত্রবাহিনীর একজন মুখপাত্র ইউরি ইহনাত বলেছেন, '৯৫০ কেজি ওজনের এ মিসাইলটির নকশা করা হয়েছে সমুদ্রের এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার গ্রুপ ধ্বংস করার জন্য।'
'এ মিসাইলে পারমাণবিক ওয়্যারহেড যুক্ত করাও সম্ভব। এ ধরনের একটি মিসাইল ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় নিক্ষেপ করা হয়েছে। এমন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কোনো ব্যাখা বা ন্যায্যতা নেই,' ইহনাত আরও বলেন।
ওই হামলার সময় প্রাথমিকভাবে পাঁচটি টিইউ-২২এম৩ দূরপাল্লার বোমারু বিমান থেকে মোট পাঁচটি কেএইচ-২২ ক্রুজ মিসাইল নিক্ষেপ করে রাশিয়া। এরপর আজভ সাগর ও কার্স্ক অবলাস্ট থেকে আরও মিসাইল ছোঁড়ে দেশটি। সেগুলোর একটিতেই ধ্বংস হয় নিপ্রোর ওই ভবনটি।
'এ ধরনের মিসাইল ভূপাতিত করার ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর কোনো সক্ষমতা নেই,' জানায় দেশটির বিমানবাহিনী।
ইউক্রেনযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এ ধরনের ২১০টির অধিক মিসাইল ইউক্রেনে নিক্ষেপ করেছে রাশিয়া। ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত একটিও ভূপাতিত করতে পারেনি।

কেএইচ-২২ মিসাইলের সর্বোচ্চ পাল্লা ৬০০ কিলোমিটার। কেবল বিমান-বিধ্বংসী মিসাইল ব্যবস্থা দিয়ে কেএইচ-২২ মিসাইলকে প্রতিহত করা সম্ভব বলে ইউক্রেনের বিমানবাহিনীর কমান্ডার জানিয়েছেন।
প্যাট্রিয়ট পিএসি-৩ ও এসএএমপি-টি ইত্যাদি মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে কেএইচ-২২ মিসাইল ধ্বংস করা সম্ভব। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি উভয় দেশই ইউক্রেনকে প্যাট্রিয়ট পিএসি-৩ দেওয়ার কথা জানিয়েছে।
এ উদ্দেশ্যে এ সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমার ফোর্ট স্টিল-এ প্রায় ১০০ ইউক্রেনীয় সেনা প্যাট্রিয়ট পরিচালনার প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করবেন বলে জানা গেছে।
এর পাশাপাশি ইউক্রেনের গণমাধ্যম সম্প্রতি জানিয়েছে, কিয়েভের আকাশ প্রতিরক্ষাকে আরও শক্তিশালী করার জন্য ইতালি অবশেষে কাটিং-এজ প্রযুক্তির এসএএমপি-টি ইউক্রেনকে সরবরাহ করতে রাজি হয়েছে।
সোভিয়েত আমলে কেএইচ-২২ বুরিয়া (ঝড়) মিসাইল তৈরি করা হয়। এটিকে তখন দূরপাল্লার মিসাইল হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল। মার্কিন বিমানবাহী রণতরী ও নৌবহরকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে এটি তৈরি করেছিল সোভিয়েতরা।
এর পর অল্প সময়ের মধ্যে এ মিসাইলের বিভিন্ন সংস্করণ তৈরি করা হয়। কিছু সংস্করণ ভূমিতে অবস্থিত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার জন্য নকশা করা হয়েছিল।
ইউক্রেনযুদ্ধে বোমারু বিমান থেকে নিয়মিত বিভিন্ন ইউক্রেনীয় লক্ষ্যবস্তুতে কেএইচ-২২ মিসাইল নিক্ষেপ করেছে রাশিয়া।
সাধারণত নিক্ষেপের সময় মাক ১.৫ গতিতে ছুটে এ মিসাইল। এরপর লক্ষ্যবস্তুর দিকে তির্যকভাবে পতনের সময় এটির গতি মাক ৩-এ পৌঁছে। ঘণ্টায় ১২২৫.০৪ কিলোমিটার গতিকে এক মাক হিসেবে ধরা হয়।
আঘাত হানার চূড়ান্ত মুহূর্তে মিসাইলটির গতি মাক ৪-এ পরিণত হয়। রাশিয়া ইউক্রেনে এ পর্যন্ত কেএইচ-২২এন সংস্করণের মিসাইল বেশি ব্যবহার করেছে।
এখন পর্যন্ত এ যুদ্ধে মিসাইলগুলো খুব একটা নিখুঁত হিসেবে প্রমাণিত হয়নি। বিশেষত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এগুলো লক্ষ্যবস্তু থেকে কয়েকশ মিটার দূরে বেসামরিক স্থাপনায় আঘাত হানার অনেকগুলো নজির রয়েছে।
নিখুঁতভাবে লক্ষ্যে হামলা চালাতে সক্ষম এমন মিসাইলের মজুত দ্রুত কমে আসায় রাশিয়া কেএইচ-২২ মিসাইল বেশি ব্যবহার করছে। আর এর দাম চোকাতে হচ্ছে ইউক্রেনের সাধারণ মানুষদের।