সবচেয়ে কম সময় প্রধানমন্ত্রী থাকার তালিকায় যুক্ত হবেন বরিস জনসন

নানা কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে নিজ দলের মন্ত্রী এবং সদস্যদের তোপের মুখে পড়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। এমন পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) ব্রিটেনের কনজারভেটিভ পার্টি থেকে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাজ্যের ইতিহাসের সবচেয়ে স্বল্পমেয়াদী প্রধানমন্ত্রীদের তালিকায় শীর্ষ সারিতে নিজের নাম লেখাতে চলেছেন বরিস জনসন।
চলুন জেনে নেওয়া যাক, এই তালিকায় বরিস জনসনের অবস্থান কততম এবং তার আগে অন্য কারা রয়েছেন শীর্ষস্থানে।
৮. থেরেসা মে, ৩ বছর ১১ দিন

কনজারভেটিভ পার্টির সাবেক প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে-কে হয়তো সবচেয়ে বেশি মনে রেখেছেন সবাই। ব্রেক্সিট চুক্তি নিয়ে কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে ২০১৯ সালের জুন মাসে তিনি পদত্যাগ করেন এবং বরিস জনসনের হাতে দায়িত্ব দিয়ে যান। তার ক্ষমতার মেয়াদ ছিল ৩ বছর ১১ দিন।
৭. বরিস জনসন, ২ বছর ৩৪৯ দিন
ক্ষমতার শুরু থেকেই বিভিন্ন কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েছে বরিস জনসন সরকার। এছাড়া পার্লামেন্টের রক্ষণশীল দলের এক সদস্যের যৌন অপরাধের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর নেয়া পদক্ষেপ নিয়েও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। যে কারণে বরিস জনসনের ওপর পদত্যাগের চাপ জোরালো হয়।
দুই দিনের হাই-ভোল্টেজ রাজনৈতিক নাটকীয়তার পর সদ্য পদত্যাগের ঘোষণার মাধ্যমে থেরেসা মে কে পেছনে ফেলে সবচেয়ে কম সময় প্রধানমন্ত্রী থাকার তালিকার সপ্তম স্থানে জায়গা করে নিয়েছেন বরিস জনসন।
৬. নেভিল চ্যাম্বারলেইন, ২ বছর ৩৪৮ দিন
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার সময়টায় সবচেয়ে খ্যাতি পেয়েছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী নেভিল চ্যাম্বারলেইন। ১৯৩৮ সালে হিটলারের সাথে একটি চুক্তির জন্য বিখ্যাত হয়ে আছেন তিনি। চুক্তিটি হিটলার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে তিনি আর আগ্রাসন চালাবেন না, যদিও সেই শর্ত তিনি রাখতে পারেননি। মার্গারেট থ্যাচারের মতো করেই ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি।
৫. গর্ডন ব্রাউন, ২ বছর ৩১৮ দিন
ব্রিটিশ ইতিহাসের সবচেয়ে আলোচিত এক প্রধানমন্ত্রীর নাম গর্ডন ব্রাউন। বিভিন্ন কারণে যুক্তরাজ্যের জনসাধারণের কাছে প্রিয় ছিলেন তিনি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, ভোটের ক্ষেত্রে তিনি প্রিয়পাত্র হতে পারেননি।

ইতিহাসের সবচেয়ে বড় এক অর্থনৈতিক মন্দার সময়ে টনি ব্লেয়ারের থেকে দেশের দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নেন তিনি। ডেভিড ক্যামেরন ও নিক ক্লেগের কোয়ালিশন সরকার গঠনের পথ করে দেন গর্ডন ব্রাউন।
৪. স্যার হেনরি ক্যাম্পবেল-ব্যানারম্যান, ২ বছর ১২২ দিন
গ্লাসগোতে জন্ম নেওয়া ব্যানারম্যান ছিলেন এমন একজন ব্যক্তি প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে 'প্রধানমন্ত্রী'র খেতাব দেওয়া হয়। তিনি 'সিবি' নামে পরিচিত ছিলেন।
১৯০৭ সালে 'ফাদার অব দ্য হাউজ' খেতাবে ভূষিত হওয়ার পরপরই তার শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে শুরু করে। দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করে ১৯০৮ সালের ৩ এপ্রিল তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
৩. স্যার অ্যান্থনি ইডেন, ১ বছর ২৭৯ দিন

পঞ্চাশের দশকে 'সুয়েজ ক্যানাল ক্রাইসিস' এর কারণে প্রধানমন্ত্রীর পদ টলোমলো হয়ে যায় কনজারভেটিভ পার্টির নেতা স্যার অ্যান্থনি ইডেনের। শারীরিক অসুস্থতা দেখিয়ে এরপর নিজেই পদত্যাগ করেন তিনি। যদিও গুজব আছে যে তিনি ইসরায়েল ও ফ্রান্সের সাথে গোপনে আঁতাত করে সংসদকে ভুল পথে চালিত করেছিলেন।
২. স্যার অ্যালেক ডগলাস-হোম, ১ বছর ১ দিন
বড় ধরনের শারীরিক অসুস্থতার কারণে প্রধানমন্ত্রীত্ব ত্যাগ করতে হয়েছিল ডগলাস-হোমকে। ১৯৬৩ সালে প্রধানমন্ত্রীর পদে আসীন হওয়া অভিজাত পরিবারের সন্তান স্যার অ্যালেক ডগলাস-হোম ট্রেড ইউনিয়নের সাথে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছিলেন।
১. অ্যান্ড্রু বোনার ল, ২১১ দিন

লয়েড জর্জকে কনজারভেটিভ সদস্যরা উৎখাত করার পর রাজা নিজে কানাডিয়ান বংশোদ্ভূত বোনার ল কে নতুন সরকার গঠন করতে বলেন। মাত্র ২১১ দিন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে থাকার পর শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি সরে দাঁড়ান এবং এর ৬ মাস পরেই তিনি মারা যান।
সূত্র: দ্য মিরর