ডাক্তার বলেছিলেন ‘বাঁচবেন না’: তারপর এক জিম দিয়ে বাংলাদেশে পাওয়ারলিফটিং খেলার বিপ্লব ঘটালেন তিনি
কোনো এক কর্মদিবসে বিকেল ৫টার পর আদাবরের 'মেটাল কেভ' জিমে ঢুকলে দেখবেন, কেউ শুধু পেশি বাড়াতে ব্যস্ত, আবার কেউ ওজন কমাতে ট্রেডমিলে দৌড়াচ্ছেন, আর কেউ কেবল 'ফিট' থাকার জন্য এসেছেন।
কিন্তু যদি আপনি ওপরের তলায় যান, সেখানে এক দল পাওয়ারলিফটারদের দেখা মিলবে। তাদের লক্ষ্য একটাই: যতটা সম্ভব ভারী ওজন তোলা।
'ভারী' বলতে ঠিক কতটা ভারীকে বোঝায়? এটি নির্ভর করে কোন ওজনশ্রেণিতে [ওয়েট ক্লাস] প্রতিযোগী অংশ নিচ্ছেন তার ওপর। সাধারণভাবে, নিজের শরীরের ওজনের দ্বিগুণ ডেডলিফট করতে পারাকে সম্মানজনক হিসেবে ধরা হয়।
তবে প্রতিযোগী পাওয়ারলিফটারদের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা আরও বেড়ে দাঁড়ায় দেড় থেকে আড়াই গুণেরও বেশি। অর্থাৎ ৯০ কেজি ওজনের একজন ব্যক্তি ২২৫ কেজিরও বেশি ডেডলিফট করে থাকেন।
দেশে এখনো পাওয়ারলিফটিং তুলনামূলকভাবে সীমিত পরিসরেই হয়ে থাকে। তবে গত পাঁচ বছরে এটি নীরব বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেছে। এখন বাংলাদেশি অ্যাথলেটরাও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছেন।
আর মেটাল কেভের হাত ধরেই এই খেলাটি ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বিভিন্ন জিমনেশিয়ামে।
পাওয়ারলিফটিং প্রতিযোগিতার পেছনের মানুষ
মেটাল কেভের স্বত্বাধিকারী ৪৮ বছর বয়সী আতিকুর রহমান স্মৃতিচারণ করে বলেন, '২০১৮ সালে একটা পাওয়ারলিফটিং প্রতিযোগিতার বিজ্ঞাপন প্রথম দেখেছিলাম।'
তিনি জানান, ইন্টারন্যাশনাল পাওয়ারলিফটিং ফেডারেশন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৭২ সালে। তবে বাংলাদেশে এটি স্থানীয়ভাবে তখনও আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়নি। তবে ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিভিন্ন প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হচ্ছিল।
তখন মেটাল কেভে আদিব জিহান নামের ২০ থেকে ২২ বছর বয়সী এক তরুণ নিয়মিত প্রশিক্ষণ নিতেন।
আতিকুর বলেন, 'আমি তাকে বললাম প্রতিযোগিতায় নাম লেখাতে, কোচ হব আমি। সে ৬৬ কেজি ওজনশ্রেণিতে অংশ নিয়ে চ্যাম্পিয়নও হলো। পরের বছর আমি নিজেই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই।'
তিনি বলেন, 'আমার বয়সভিত্তিক গ্রুপ তখন ছিল না, তাই মাস্টার্স ক্যাটাগরির বদলে সাধারণ শ্রেণিতেই অংশ নিই। পরে মাস্টার্স বিভাগে ২০২২ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত টানা তিনবার চ্যাম্পিয়ন হই এবং ২৪৫ কেজি ডেডলিফট করে একটি রেকর্ড গড়ি।'
এর পরপরই আয়োজকেরা তাকে সংগঠনে যুক্ত হওয়ার প্রস্তাব দেন। 'আমি রাজি হই। পরে আমরা একসঙ্গে বাংলাদেশ পাওয়ারলিফটিং অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) গঠন করি। এখন আমি এর যুগ্ম মহাসচিব।'
হতাশা থেকে ভারোত্তোলন শুরু
ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলায় আগ্রহ ছিল আতিকুরের, যদিও পরিবার চাইত তিনি পড়াশোনাতেই মনোযোগী হোন।
স্কুল–কলেজ পর্যায়ে ফুটবল খেলতেন তিনি। ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ আইসিসি ট্রফি জেতার পর তার মনোযোগ ঘুরে যায় ক্রিকেটের দিকে। ছিলেন পেস বোলার; কিন্তু ইনজুরির আঘাতে থেমে যায় ক্রিকেট–স্বপ্ন। সেই হতাশাই পরে তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
স্থানীয় মেহেদি নামের এক ব্যক্তি তাকে জিমে যেতে পরামর্শ দেন। 'কয়েক দিন যেতেই আমার ভালো লাগতে শুরু করে। শারীরিক গঠনও এমন ছিল যে অন্যদের তুলনায় দ্রুত উন্নতি করতে পারছিলাম,' বলেন আতিকুর।
এরপর আসে এক ট্র্যাজেডি। হৃদরোগে হঠাৎ মারা যান তার বাবা আব্দুল খালেক। সেসময়ের স্মৃতিচারণ করে আতিকুর বলেন, 'এতে আমাকে সেই বিলাসবহুল শখটা (জিমে যাওয়া) বন্ধ করতে হয়। বড় ছেলে হিসেবে আমাকে কাজ খুঁজে বের করতে হয়েছিল যেমনটা মধ্যবিত্ত পরিবারে হয়ে থাকে।'
তিনি বনানীর একটি বায়িং হাউসে জুনিয়র মার্চেন্ডাইজার হিসেবে চাকরি শুরু করেন এবং প্রায় আট বছর সেখানে ছিলেন। ধীরে ধীরে আর্থিক স্থিতিশীলতা আসে। 'বাবার টিনশেডের বাড়িটা আমি ছয়তলা করে ফেলেছিলাম। কিন্তু বুঝলাম, এই চাকরিতে কাজের শেষ নেই— অবিরাম দৌড়ঝাঁপ, দুশ্চিন্তা আর চাপ। স্ত্রী–সন্তানের সঙ্গে সময় কাটাতে পারতাম না। শরীরও ভেঙে পড়ছিল।'
এর কিছুদিন পর এক স্বাস্থ্যপরীক্ষায় ধরা পড়ে আতিকুরের কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, 'ডাক্তার আমাকে সতর্ক করে বলেন, আমি হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিতে আছি। যখন তিনি জানতে পারেন যে আমি কোনো ধরনের শারীরিক পরিশ্রম করি না, তখন তিনি বললেন, 'এভাবে চললে আমি বেশিদিন বাঁচব না।'
তখন আতিকুর বিবাহিত (২০০৫ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ) এবং এক ছেলে ও এক মেয়ের বাবা। পরিবার ও নিজের স্বাস্থ্যের জন্য তিনি পেশা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, ৪০ বছর বয়সে এমন পেশাগত পরিবর্তন প্রায় অদ্ভুত বলা চলে। তার মা, দেলোওয়ারা বেগম, তার এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শক্ত বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু আতিকুর শেষ পর্যন্ত নিজেকে বিশ্বাস করেছিলেন এবং এই পথ বেছে নেন।
তিনি বলেন, 'খেলাধুলা সবসময়ই আমার হৃদয় থেকে এসেছে। ব্যায়াম করাও আমার কাছে যেন এক ধরনের খেলা মনে হত। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিলাম একটি জিম খোলার। পুর্বাচলে থাকা একটি জমি বিক্রি করি এবং কিছু সঞ্চয় ব্যবহার করে ২০১৬ সালে আমার ব্যবসা শুরু করি।'
জিম থেকে পাওয়া আয় বায়িং হাউজের চাকরির সঙ্গে মেলে না, তবে তা দিয়ে পরিবার সচ্ছলভাবে চলে। এছাড়াও তিনি তার ভবন থেকে ভাড়া পান। তবে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, তিনি সেই মানসিক চাপ ও শারীরিক সমস্যা থেকে মুক্তি পেয়েছেন যা তাকে আগে নিরবচ্ছিন্নভাবে কষ্ট দিত।
২০১৮ সালে আতিকুর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ স্ট্রেংথ অ্যান্ড ফিটনেস থেকে একটি সার্টিফিকেট অর্জন করেন। এখন তিনি একজন সার্টিফায়েড পার্সোনাল ট্রেইনার, পাওয়ারলিফটিং কোচ এবং এই খেলায় সার্টিফায়েড রেফারি।
কেন পাওয়ারলিফটিং?
যেমনটি আগে বলা হয়েছে, পাওয়ারলিফটিং মূলত যতটা সম্ভব ভারী ওজন তোলার খেলা। প্রত্যেক খেলোয়াড়কে তিনটি নির্দিষ্ট ওজন উত্তোলন করতে হয়—স্কোয়াট, বেঞ্চ প্রেস এবং ডেডলিফট—প্রতিটিতে তিনবার চেষ্টা করার সুযোগ থাকে। প্রতিটি উত্তোলনে সর্বোচ্চ সফল ওজন গণনা করা হয়, এবং তিনটি উত্তোলনের মোট যোগফল চূড়ান্ত স্কোর নির্ধারণ করে।
যারা ওজন তোলায় আনন্দ খুঁজে পান এবং নিজের শক্তি পরীক্ষা করতে ভালোবাসেন, তারা প্রায়শই পাওয়ারলিফটিংয়ের দিকে আকৃষ্ট হন। আতিকুরের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, সাধারণ ফিটনেস প্রশিক্ষণ এবং পাওয়ারলিফটিংয়ের মধ্যে মূল পার্থক্য হলো উদ্দেশ্য।
আতিকুর বলেন, 'সাধারণ ব্যায়াম মূলত শরীরকে সুস্থ এবং আকর্ষণীয় রাখার জন্য করা হয়। কিন্তু পাওয়ারলিফটিং একটি খেলা। যেকোনো খেলায় যেমন হয়, এতে সফল হতে হলে নিয়মিত অনুশীলন, প্রতিশ্রুতি, শৃঙ্খলা এবং মনোযোগ প্রয়োজন।'
তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, 'আমাদের প্রায়ই মেঝেতে থাকা ভারী জিনিস তোলা লাগে। আমরা জিনিসপত্র বা এমনকি সন্তানদেরও মাথার ওপর তুলি। ভারী আসবাবপত্র এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরাই। পাওয়ারলিফটিং আমাদেরকে ভারসাম্য ও শরীর নিয়ন্ত্রণ শেখায়, যা পড়ে যাওয়া এবং চোট-আঘাত এড়াতে সাহায্য করে। এটি শরীরের নমনীয়তাও উন্নত করে।'
তিনি আরও বলেন, 'প্রথমেই বলতে হবে, এই খেলা অন্য যে কোনো খেলাই যেমন, প্রতিযোগিতামূলক এবং মজাদার। ভালো করতে হলে খাবার ও জীবনধারায় শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে। এটি আপনাকে শক্তি, সক্ষমতা এবং রোগমুক্ত জীবন প্রদান করে। এটি টেস্টোস্টেরন বৃদ্ধি করে, পেশি গড়ে, হাড় শক্তিশালী করে এবং যৌবন ও শক্তি ধরে রাখে। এর ফলে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় এবং সামাজিক ও পারিবারিক ক্ষেত্রে সম্মানও অর্জিত হয়। আপনার আত্মবিশ্বাস অন্যদেরকেও প্রভাবিত করতে পারে।'
বাংলাদেশে পাওয়ারলিফটিংয়ের উত্থান
বাংলাদেশে প্রথম পাওয়ারলিফটিং প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালে। এটি মূলত বাংলাদেশের পাওয়ারলিফটিং অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক মোমিনুল হক রনের ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়। তার সংস্থা এম৩৬০ ডিগ্রীর অধীনে এ আয়োজন করা হয়।
'শুধু সাত বছরের মধ্যে,' আতিকুর বলেন, 'আমাদের দেশে এখন প্রতি বছর পাঁচটি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে রয়েছে নারী প্রতিযোগিতা, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতা এবং বয়সভিত্তিক ইভেন্ট। এছাড়া, ঢাকা থেকে বাইরে অনিয়মিতভাবে বিভাগীয় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।'
এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক স্তরে পাওয়ারলিফটিংয়ে ওয়ার্ল্ড পাওয়ারলিফটিং চ্যাম্পিয়নশিপে একটি রৌপ্য, একটি ব্রোঞ্জ পদক; এশিয়ান পাওয়ারলিফটিং চ্যাম্পিয়নশিপে ৩ টি স্বর্ণ, ৫টি রৌপ্য, ৩টি ব্রোঞ্জ পদক; এশিয়ান-আফ্রিকান-প্যাসিফিক পাওয়ারলিফটিং চ্যাম্পিয়নশিপে ৯টি স্বর্ণ, একটি রৌপ্য, দুটি ব্রোঞ্জ পদক অর্জন করে বাংলাদেশ।
পাওয়ারলিফটার আদিত্য পারভেজ জাতীয় পাওয়ারলিফটিং প্রতিযোগিতায় পাঁচ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে চূড়ান্ত চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। তিনি এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে একটি ব্রোঞ্জও জিতেছেন।
তিনি উল্লেখ করেন, দেশে এই খেলা তরুণদের মধ্যে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। 'এখন অনেক ১৬–১৭ বছর বয়সী তরুণ পাওয়ারলিফটিংয়ে যুক্ত হচ্ছে। এটি একটি খুবই ইতিবাচক। যারা সঠিকভাবে অনুশীলন করে এবং নিয়ম মেনে চলে, তাদের চোট পাওয়ার সম্ভাবনা কম। কিন্তু কেউ যদি যথাযথ জ্ঞান ছাড়া অনুশীলন করে, তবে আঘাত পাওয়ার সম্ভাবনা অবশ্যই বেশি থাকে।'
বাইশ বছর বয়সী তাসবিহুন নূর তুলনা নারীদের পাওয়ারলিফটিং বিষয়ে কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, 'নারীদের জন্য পাওয়ারলিফটিং শুরু করা কঠিন। সামাজিকভাবে এটি সবসময় ইতিবাচকভাবে দেখা হয় না, যা অনেককে নিরুৎসাহিত করে। কিন্তু সবকিছুর পরেও আমি এগিয়ে চলেছি। এই জুলাই মাসে আমি জাপানে এশিয়ান পাওয়ারলিফটিং চ্যাম্পিয়নশিপে জুনিয়র চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। আগামী বছর চীনে পরবর্তী প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে, এবং সেখানে রেকর্ড ভাঙার লক্ষ্য নিয়ে আমি অনুশীলন করছি।'
আতিকুর বলেন, 'সময়ের সঙ্গে আমাদের অগ্রগতি বিবেচনায় বাংলাদেশে পাওয়ারলিফটিংয়ে আমাদের সাফল্য বেশ উৎসাহব্যঞ্জক, যদিও মিডিয়ার কাছে আমরা কখনো বেশি মনোযোগ পাইনি।'
তিনি আরও বলেন, 'বাংলাদেশে এখনো পাওয়ারলিফটিংকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করা সম্ভব নয়। কেবল কিছু খেলোয়াড় কোচিংয়ের মাধ্যমে ভালো আয় করেন, কিন্তু সংখ্যা এখনও খুব কম। একটি খেলা পেশা হিসেবে পরিণত হয় যখন স্পনসররা এগিয়ে আসে। বাংলাদেশে ফুটবল ও ক্রিকেটের বাইরে মানুষের আগ্রহ কম, তাই স্পনসররাও ততটা আগ্রহী নন।'
তবে আতিকুর বিশ্বাস করেন, অপ্রচলিত খেলাগুলোর মধ্যে পাওয়ারলিফটিংয়ের অবস্থান সবচেয়ে খারাপ নয়। গত দশকে দেশে জিমের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। একটি বড় জিম সম্প্রদায় গড়ে উঠেছে এবং সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে সবাই একে অপরকে চেনে।
তবুও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে, বিশেষ করে বিদেশে প্রতিযোগিতা করার ক্ষেত্রে।
আতিকুর বলেন, 'যখন আমরা বিদেশে প্রতিযোগিতা করি, তখন খেলোয়াড়দের নিজের খরচ বহন করতে হয়। ফলে অনেক প্রতিভাবান খেলোয়াড় আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে আন্তর্জাতিক পদক অর্জন থেকে বঞ্চিত হন। যদি কর্পোরেট স্পনসররা এগিয়ে আসত, আমাদের খেলোয়াড়রা আরও অনুপ্রাণিত হতেন, এবং বাংলাদেশ এমন খেলোয়াড়ও গড়ে তুলতে পারত যাদের জিনগত গঠন এবং দক্ষতা আরও ভালো।'
তিনি গর্বের সঙ্গে বলেন, মেটাল কেভ দেশের সবচেয়ে বেশি পাওয়ারলিফটার তৈরি করেছে, সবচেয়ে বেশি পদক জিতেছে এবং সেরা জিমের খেতাবও অর্জন করেছে।
বাংলাদেশে প্রথম বাণিজ্যিক জিম হিসেবে মেটাল কেভে ডেডলিফট প্ল্যাটফর্ম এবং ক্যালিব্রেটেড প্লেট রাখা হয়েছিল। মেটাল কেভ জাতীয় প্রতিযোগিতার জন্য সরঞ্জাম সরবরাহ করেও খেলাটির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
আতিকুর বলেন, 'বাংলাদেশি পাওয়ারলিফটিং এবং মেটাল কেভের ইতিহাস অপরিবর্তনীয়ভাবে যুক্ত—একটির ইতিহাস লেখা ছাড়া অন্যটির ইতিহাস লেখা সম্ভব নয়। এটিই আমার সবচেয়ে বড় অর্জন।'
তবে তার এ আকাঙ্ক্ষা কেবল নিজের অর্জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।
তিনি বলেন, 'আমি চাই আমাদের যুবকরা, একটি জাতি হিসেবে, শক্তির খেলায় বিশ্বের সঙ্গে পিছিয়ে না পড়ুক। এটি তাদের আত্মবিশ্বাস দেবে—একটি বিশ্বাস, হ্যাঁ, আমরা পারি। আমি চাই না যে আমাদের যুবকরা তাদের শারীরিক সক্ষমতার বিষয়ে কোনোভাবে অধীনতার অনুভূতি বহন করুক। আমি চাই তাদেরকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ফিরতে দেখব, যাতে কেউ কখনো বলতে না পারে যে বাংলাদেশিরা শক্তির খেলায় দুর্বল বা অক্ষম।'
