আপনার প্রিয় পোষা প্রাণীর যত্নে কাজ করেন তারা

হাজার বছর আগে থেকেই মানুষ পশু-পাখি পুষে আসছে। চাষাবাদে সহায়তা, হিংস্র বন্য প্রাণী থেকে নিরাপত্তা কিংবা নিছক সঙ্গ দেওয়ার উদ্দেশ্যে—প্রাণীকে পোষ মানানোর প্রথা খুবই পুরোনো।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঘরের ভেতর পশু-পাখি পালা আমাদের শখে পরিণত হয়েছে। নানা রকম পাখি, কুকুর, বিড়াল, খরগোশ—এমনকি ইঁদুরও এখন অনেকেই পালেন।
বাংলাদেশে ঘরে পোষার জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রাণী হলো বিড়াল ও কুকুর। অনেকে খাঁচায় পাখিও পালন করেন। এক সময় সবাই দেশি কুকুর বা বিড়ালই পুষাতেন, কিন্তু এখন নানা জাতের বিদেশি কুকুর ও বিড়াল পালার প্রবণতা বেড়েছে।
তবে দেশি প্রাণীর তুলনায় বিদেশি কুকুর-বিড়ালের যত্নের প্রয়োজন অনেক বেশি। প্রিয় পোষা প্রাণীর বিশেষ যত্নের মধ্যে রয়েছে অতিরিক্ত লোম কাটা, নখ ছাঁটা, কান ও দাঁত পরিষ্কার করা, টিকা দেওয়া এবং থাবার লোম পরিষ্কার করা ইত্যাদি।
দেশি কুকুর-বিড়ালের এসব যত্ন অনেকটাই ঘরোয়া উপায়ে করা গেলেও বিদেশি প্রাণীদের ক্ষেত্রে তা বেশ কঠিন। কারণ, তারা আমাদের দেশের আবহাওয়ার সঙ্গে সহজে খাপ খাওয়াতে পারে না। ঘরোয়া পদ্ধতিতে এসব করতে গিয়ে প্রিয় পোষা প্রাণীর প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে থাকে।
বিদেশে পোষা প্রাণীর যত্ন নেওয়ার জন্য রয়েছে গ্রুমিং সেন্টার, যেখানে পেশাদার কর্মীরা এসব কাজ করেন। আমাদের দেশে আগে এসব কাজ সাধারণত ভেটেরিনারি ডাক্তারদের চেম্বারেই হতো। ডাক্তারদের সহকারীরা নখ কাটা ও লোম ছাঁটার কাজ করলেও তাতে যথেষ্ট যত্ন নেওয়া হতো না, ফলে প্রাণীরা অনেক সময় ক্ষতিগ্রস্ত হতো।
অহনা রহমান ঢাকায় বড় হয়েছেন। ছোটবেলা থেকেই বিদেশি কুকুর পালেন তিনি। তবে প্রিয় পোষা প্রাণীর গ্রুমিংয়ের জন্য কখনোই ঢাকা শহরে ভালো সেবা পাননি তিনি।
এই অভিজ্ঞতা থেকেই ২০২১ সালে নিজ উদ্যোগে ঢাকার বনানীতে দেশের প্রথম পোষা প্রাণীর জন্য গ্রুমিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেন অহনা।
'প্যাম্পারড প' নামের এই সেন্টারে কুকুর, বিড়াল এবং খরগোশের নানাবিধ সেবা দেওয়া হয়। পাশাপাশি এখানে আছে প্রাণীদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র ও হোটেল। আরও আছে 'ডগ-ওয়াকিং সার্ভিস'। ঘরে পোষা কুকুরকে প্রতিদিন হাঁটানো প্রয়োজন। কিন্তু অনেকেই সময়ের অভাবে তা করতে পারেন না, ফলে এই সেবা নিয়ে থাকেন।
'প্যাম্পারড প'-এর এই যাত্রা নিয়েই আজকের আয়োজন।

যেভাবে শুরু
থাইল্যান্ড থেকে পড়াশোনা শেষে দেশে ফেরার সময় শিতজু জাতের একটি কুকুর সঙ্গে করে এনেছিলেন অহনা রহমান। ছোট এই কুকুরটির শরীরজুড়ে বড় বড় লোম, যা কিছুদিন পরপর ছেঁটে দিতে হয়।
কিন্তু দেশে ফিরে এসে এ কাজের জন্য অভিজ্ঞ কাউকে পাচ্ছিলেন না অহনা। ভেটের কাছে নিয়ে গেলে ভেটের অ্যাসিস্ট্যান্ট স্টেশনারি কাঁচি দিয়ে কোনোরকমে লোম কেটে দিতেন। এতে প্রাণীটির ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকতো।
পেশাদার কারও অভাবে অহনা ভাবলেন, নিজেই এই কাজ শুরু করবেন। এর আগে তিনি দীর্ঘদিন রেডিও স্বাধীনে আরজে হিসেবে কাজ করেছেন। ছোটবেলা থেকেই পোষা প্রাণীর প্রতি তার ছিল প্রবল ভালোবাসা। সেই ভালোবাসার টানেই তিনি ২০১৯ সালে ভারতে যান পেট গ্রুমিং শেখার জন্য। কলকাতায় একটি মাসব্যাপী কোর্সে অংশ নিয়ে শিখে আসেন প্রিয় পোষা প্রাণীর যত্ন নেওয়ার পদ্ধতি।
দেশে ফিরে তিনি চিন্তা করতে থাকেন—কীভাবে দেশের প্রথম পেট গ্রুমিং সেলুন চালু করা যায়। তবে একজন বিনিয়োগকারী খুঁজে পেতে লেগে যায় প্রায় দুই বছর।
অবশেষে ২০২১ সালের শুরুর দিকে অহনা রহমান ও নাদিয়া হোসাইন মিলে শুরু করেন প্যাম্পারড প। তখন করোনার কারণে চলছিল লকডাউন। অনেকেই সে সময় ঘরে বিড়াল বা কুকুর পালা শুরু করেন।
আমাদের দেশে পেশাদার কারও কাছ থেকে পোষা প্রাণীর গ্রুমিং করানোর সংস্কৃতি আগে ছিল না। তাই শুরুতে মানুষ কীভাবে এটি গ্রহণ করবে, তা নিয়ে শঙ্কায় ছিলেন অহনা। প্রথম কয়েক মাস তিনি পরিচিতদের পোষা প্রাণীর জন্য বিনামূল্যে সেবা দেন। ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে প্যাম্পারড প-এর।
সেলুনটি বনানীতে হওয়ায় কূটনৈতিক পাড়ার বিদেশি দূতাবাসের কর্মচারীরা হয়ে ওঠেন তাদের অন্যতম প্রধান গ্রাহক। গুলশান-বনানী এলাকার অনেকেই কুকুর ও বিড়াল পুষে থাকেন, যারা নিয়মিত প্যাম্পারড প-এর সেবা নেন।
তবে পোষা প্রাণীর গ্রুমিং তখনও ছিল একেবারেই নতুন ধারণা। শুরুতে গ্রাহকেরা তাদের পোষা প্রাণীকে এনে বলতেন, যেন তাদের সামনেই প্রাণীর যত্নের সব কাজ করা হয়। এতে সমস্যা দেখা দিত। কারণ, প্রাণীটি মালিকের উপস্থিতিতে নানা যত্নের কাজ শুরু হলে স্বাভাবিকভাবেই মালিকের কাছে যাওয়ার জন্য ছটফট করতে থাকে।

গ্রাহকদের এই মানসিকতা বদলাতে সময় লেগেছে। অহনা রহমান ধীরে ধীরে সবাইকে বোঝাতে সক্ষম হন যে প্রশিক্ষিত কর্মীদের হাতে প্রাণীকে ছেড়ে দিয়ে কিছুক্ষণ বাইরে থাকলে প্রাণীটি অনেক শান্তভাবে যত্ন নিতে পারে।
এখন বেশির ভাগ গ্রাহকই তাদের কুকুর বা বিড়ালকে এক-দু'ঘণ্টার জন্য প্যাম্পারড প-তে রেখে যান। কাজ শেষে এসে আবার নিয়ে যান প্রিয় সঙ্গীটিকে।
যা যা করেন তারা
প্যাম্পারড প-তে একসঙ্গে ৮টি কুকুর বা বিড়াল গ্রুমিং করার ব্যবস্থা আছে। ২৫ জন কর্মচারী দিনরাত ব্যস্ত থাকেন গ্রাহকদের প্রিয় পোষা প্রাণীর যত্ন নেওয়ার কাজে। রয়েছে প্রাণীদের গোসল করানোর বিশেষ ব্যবস্থাও।
প্রতিদিন এখানে ১৬ থেকে ১৯টি প্রাণীকে গ্রুমিং করানো যায়। তবে ঈদ, পূজা, বড়দিন বা পহেলা বৈশাখের সময় চাপ বেড়ে যায় কয়েকগুণ। তখন একেকদিন প্রায় ৩০টি প্রাণী গ্রুমিং করতে হয়। দোকানের সামনে লাইন পড়ে যায়। সবাই চায় উৎসবের সময় তাদের পোষ্যটি থাকুক সবচেয়ে সুন্দরভাবে সাজানো।
"আমার নিজের তিনটা কুকুর আছে। ঈদের সময় আমি নিজেই তাদের এখানে এনে গ্রুমিং করাতে পারি না। এত ভিড় থাকে! এমনও হয়েছে যে মানুষ এসে প্রাণী রেখে চলে যায়। বলে, আপনারা যখন ফ্রি হবেন তখন ফোন দিয়েন, এসে নিয়ে যাবো। আমার নিজের কুকুরকে ঈদের দিন সকালে গ্রুমিং করাতে হয়," বলছিলেন অহনা রহমান।
এখানে দেশি ও বিদেশি—দুই ধরনের কুকুর ও বিড়ালই গ্রুমিং করানো হয়। দেশি জাতের, যাদের লোম ছোট, তাদের জন্য রয়েছে বেসিক প্যাকেজ। এই প্যাকেজে থাকে গোসল করানো, শুকানো, নখ কাটা, কান পরিষ্কার, থাবার লোম পরিষ্কার ও মলদ্বার পরিষ্কারের কাজ।
বিদেশি জাতের প্রাণীর শরীরজুড়ে লম্বা লোম থাকে, যেগুলো ছাঁটা হয় গ্রাহকের পছন্দমতো। এদের ক্ষেত্রেও বেসিক প্যাকেজের সব সেবা দেওয়া হয়।
শিতজু, লাসা, জার্মান শেপার্ড, হাস্কি ও পমেরানিয়ান জাতের কুকুর এবং পার্সিয়ান বিড়াল নিয়মিত আসে প্যাম্পারড প-তে। প্যাকেজের সব সেবাই আবার আলাদা আলাদা করে নেওয়া যায়। কেউ চাইলে শুধু নখ কাটা বা গোসল করানোর সেবাও নিতে পারেন।
পোষ্যদের জন্য রয়েছে স্পা প্যাকেজও। অহনা রহমান বলেন, "স্পা শুনতে বিলাসিতা মনে হলেও, নিয়মিত অনেকেই কুকুর বা বিড়ালকে স্পা করান। এতে প্রাণীর চামড়ার র্যাশ দূর হয়। গরমে হাঁসফাঁস করা বিদেশি জাতের প্রাণীদের জন্য স্পা বেশ উপকারী। আমরা সব হারবাল উপাদান ব্যবহার করি—ওট, ভিটামিন ই, অ্যালোভেরা, ডাবের পানি ইত্যাদি।"
প্রতিটি গ্রুমিংয়ের আগে প্রাণীর শরীর ভালোভাবে পরীক্ষা করা হয়। আগের কোনো ক্ষত থাকলে আগে তার যত্ন নেওয়া হয়। গোসল করানোর সময় কানে তুলার বল দেওয়া হয় যাতে পানি ঢুকে ইনফেকশন না হয়। যদি উকুন বা ফাংগাস থাকে, তবে বিশেষ সাবান দিয়ে গোসল করানো হয়।
প্যাম্পারড প-এ খরচ শুরু হয় ৫০০ টাকা থেকে। প্রাণীর আকার ও সেবার ধরন অনুযায়ী খরচ সর্বোচ্চ ৫,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। বড় জাতের কুকুরের ক্ষেত্রে খরচ বেশি, ছোট প্রাণীর ক্ষেত্রে কম।
এছাড়াও রয়েছে ডগ-ওয়াকিং সার্ভিস। যারা ঘরে কুকুর পালেন কিন্তু সময়ের অভাবে হাঁটাতে নিয়ে যেতে পারেন না, তাদের জন্যই এ সেবা। প্যাম্পারড প-এর কর্মচারীরা প্রতিদিন নির্ধারিত সময়ে এসে কুকুর নিয়ে হাঁটতে যান।
প্রতিদিন একবেলা হাঁটানোর জন্য মাসিক খরচ ৬,৫০০ টাকা। আর দুইবেলা হলে ১২,০০০ টাকা। এই সেবা বর্তমানে গুলশান, বনানী ও বনানী ডিওএইচএস এলাকায় দেওয়া হয়।

তাদের একটি হোটেল ও আশ্রয়কেন্দ্রও আছে, যেখানে ২৭টি কুকুর ও ২০টির বেশি বিড়াল থাকতে পারে। অনেকেই যখন ঘুরতে যান, তখন পোষা প্রাণীটিকে এখানে রেখে যান। প্রতি রাতের জন্য কুকুরের খরচ ১৫০০ টাকা, বিড়ালের জন্য ৮০০ টাকা। এর মধ্যে তিন বেলা খাবার ও পরিচ্ছন্নতা সেবা অন্তর্ভুক্ত।
প্যাম্পারড প কেন মেডিকেল সেবা চালু করছে না—এমন প্রশ্নে নাদিয়া হোসাইন বলেন, "আমাদের শেল্টার বা হোটেলে কোনো প্রাণী অসুস্থ হলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ভেটের কাছে পাঠিয়ে দিই। ঢাকার সেরা ভেটদের সঙ্গে আমাদের সমন্বয় আছে। তবে আমরা এখানে চিকিৎসা দিই না, কারণ অনেক রোগ ছোঁয়াচে। এতে অন্য প্রাণীদের মধ্যে রোগ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে।"
অহনা রহমান বলেন, "আমার হোয়াটসঅ্যাপে শুধু কুকুর-বিড়ালের মল-মূত্র বা বমির ছবি পাবেন। আমাদের শেল্টার ও হোটেলের সব প্রাণীর প্রতিদিন সকালের প্রথম মল-মূত্র মনিটর করা হয়। অস্বাভাবিক কিছু দেখলেই সঙ্গে সঙ্গে ভেটের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়।"
প্যাম্পারড প-এর দুটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান রয়েছে—ট্রেন্ডি প ও হাংরি প। ট্রেন্ডি প-এ পোষ্যদের জন্য পাওয়া যায় নানান ধরনের জামাকাপড়। উৎসবের সময় অনেকেই কুকুর বা বিড়ালের জন্য নতুন পোশাক কেনেন। আর হাংরি প মাসিক সাবস্ক্রিপশনের ভিত্তিতে কুকুর ও বিড়ালের খাবার তৈরি করে বাসায় পৌঁছে দেয়। প্রাণীর চাহিদা অনুযায়ী খাবার তৈরি হয়, তিন বেলার খাবার দেওয়া যায় প্রতিদিন, আবার কেউ চাইলে সপ্তাহভিত্তিক কিনতেও পারেন। হাংরি প-এর কর্ণধার নাদিয়া হোসাইন।
জুলিয়া অ্যান এগেন অ্যানিমাল ট্রাস্ট
বনানী ৪ নম্বর সড়ক থেকে ২৭ নম্বর সড়ক পর্যন্ত এলাকায় প্রতিদিন রাতে খাবার খাওয়ানো হয় প্রায় ৩০টি কুকুর ও ১০০টির বেশি বিড়ালকে। এই খাবার রান্না করে দেয় হাংরি প।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান নাগরিক জুলিয়া অ্যান এগেন জীবনের শেষ সময়ে বাংলাদেশে এসে থাকতেন। বনানীর মানুষদের কাছে তিনি ছিলেন পরিচিত মুখ। প্রতিদিনই রাস্তার কুকুর-বিড়ালদের খাবার খাওয়াতেন।
নাদিয়া হোসাইনের সঙ্গে বন্ধুত্ব ছিল জুলিয়ার। জুলিয়ার মৃত্যুর পর নাদিয়া প্রতিষ্ঠা করেন জুলিয়া অ্যান এগেন অ্যানিমাল ট্রাস্ট। জুলিয়ার পরিবার এবং প্যাম্পারড প মিলে ট্রাস্টটি পরিচালনা করে। এছাড়াও অনেক পশুপ্রেমী নিয়মিত অর্থ সহায়তা দিয়ে পাশে থাকেন।

প্রতিদিন রাত ৯টার পর দেখা যায়, বনানীর রাস্তায় ফুটপাতে সারি দিয়ে বসে থাকা কুকুর ও বিড়াল খাবার খাচ্ছে। তাদের চিহ্নিত করতে গলায় লাগানো হয়েছে কলার। ফুটপাত যেন নোংরা না হয়, সে জন্য খাবার দেওয়া হয় পলিথিনের ওপর। খাওয়ার পর সব জায়গা পরিষ্কার করে দেন প্যাম্পারড প-এর কর্মচারীরা।
এই কুকুর-বিড়ালদের কেউ অসুস্থ হলে চিকিৎসার ব্যবস্থাও করা হয়।
খাবার বিতরণের কাজে সাহায্য করেন আশপাশের বাসার দারোয়ান ও ড্রাইভাররা। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে গত রমজান মাসে সেহরি ও ইফতারের আয়োজন করেছিলেন নাদিয়া হোসাইন, ট্রাস্ট–এর পক্ষ থেকে।
চ্যালেঞ্জ নিয়েই এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন
চার বছরের যাত্রায় তিনবার জায়গা পরিবর্তন করতে হয়েছে প্যাম্পারড প-কে। এক জায়গায় বেশিদিন টিকতে পারেননি তারা। আশপাশের বাসিন্দাদের নানা অভিযোগের মুখে পড়তে হয়েছে।
একবার অভিযোগ উঠেছিল—এখানে নাকি অবৈধভাবে প্রাণী কেনাবেচা হয়। আবার অনেকেই কুকুর-বিড়ালের শব্দের জন্য বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। এসব কারণেই একের পর এক জায়গা বদলাতে হয়েছে প্যাম্পারড প-কে।
কেবল স্থানসংক্রান্ত সমস্যাই নয়, আছে আরও কিছু বিড়ম্বনাও। ডগ-ওয়াকিং সার্ভিস-এর জন্য যেসব কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়, তাদের কেউ কেউ চাকরি ছেড়ে কুকুরের মালিকদের সঙ্গে সরাসরি চুক্তিতে চলে যান। এমনও ঘটেছে যে, এক কর্মচারী চাকরি ছেড়ে একটি বিদেশি কুকুর নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন! পরে নেত্রকোণা থেকে উদ্ধার করা হয় সেই কুকুরটিকে।

"আমি প্যাম্পারড প–কে কোনো সময় ব্যবসা হিসেবে দেখিনি। এটা আমার প্যাশন," বলেন অহনা রহমান। "অনেক লাভ করার জন্য কেউ যদি এই গ্রুমিং স্যালন শুরু করতে চান, তবে তিনি ঠকবেন বলেই আমার বিশ্বাস। এখানে যে পরিমাণ শ্রম আর সময় দিতে হয়—তা কেবল একজন পশুপ্রেমীর পক্ষেই সম্ভব।"
প্যাম্পারড প-এর সাফল্য দেখে অনেকেই এখন পেট গ্রুমিং স্যালন এবং পেট হোটেলের ব্যবসায় নামছেন। অহনা রহমান ও নাদিয়া হোসাইন এটিকে দেখছেন ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে।
তারা জানিয়েছেন, রাজধানীর ধানমন্ডি ও উত্তরা এলাকায় নতুন শাখা খোলার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। এতে একটি শাখার ওপর চাপ কমবে, আর যত্ন ও ভালোবাসা দিয়ে আরও বেশি প্রাণীর দেখভাল করা যাবে।
ছবি: ফাইয়াজ আহনাফ সামিন/টিবিএস