পাকিস্তানি ইউটিউবার ও বাংলাদেশের ‘দেশে ফেরা’ গ্রুপ যেভাবে সীমান্ত পেরিয়ে পরিবারগুলোকে এক করছে

গত ১৫ জানুয়ারি করাচির বাসিন্দা বৃদ্ধা খাদিজা বেগম বাংলাদেশে থাকা তার মেয়ে মিনু ও নাতি ওসমানের (ছদ্মনাম) সঙ্গে ভার্চুয়ালি সাক্ষাৎ করেন।
ফোন কল সংযোগ পেতেই মিনু আম্মু! আম্মু! বলে আর তার প্রতিউত্তরে খাদিজা বলে উঠেন, মা! মা!। প্রায় চার দশকের বিচ্ছেদের পর মা-মেয়ের মিলন এক হৃদয়বিদারক পুনর্মিলনীর জন্ম দিয়েছে।
খাদিজার মুখে বয়সের রেখা স্পষ্ট, তিনি উর্দু ও বাংলা মিলিয়ে কথা বলেন। তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
খাদিজা ও তার বাংলাদেশে থাকা পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি গুগল মিট ভিডিও কলে আরও কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে ছিলেন মনজুর আহমেদ, যিনি এই পারিবারিক পুনর্মিলনের মূল যোগাযোগকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি পুরো সভাটি পরিচালনা করেন।
উপস্থিতদের মধ্যে আরও ছিলেন সেই ব্যক্তি, যিনি 'দেশে ফেরা' নামে একটি ফেসবুক পেজের পোস্ট থেকে মনজুরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং সঙ্গে সঙ্গেই খাদিজাকে তার শৈশবের গ্রামের এক প্রতিবেশী হিসেবে চিনতে পারেন। মনজুর এই সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ফোন কলে খাদিজা সেসময়ের স্মৃতি তুলে ধরেন। সেখানে মিনু কীভাবে নিখোঁজ হলো এবং আর কখনো ফিরে আসেনি সে স্মৃতিকথা তুলে ধরেন। সেসময় মনিু ছিল একেবারেই শিশু।
মিনু তার মাকে চিনতে পারেনি। তবে ভিডিও কলে আবেগাপ্লুত কণ্ঠে মিনু বলেন, "কিন্তু আমি থাকে চিনেছি আমার খালাদের দেখানো ছবির মাধ্যমে।"
সব কথোপকথনের মাঝে মনজুর জানতে চান, বাংলাদেশে থাকা পরিবার কি খাদিজাকে চিনতে পারছে? পেশায় দর্জি ওসমান ধীরে ধীরে জিজ্ঞাসা করে, 'আপনি সেখানে ভালো আছেন?' এরপর আবেগ ও অবিশ্বাস মিশ্রিত কণ্ঠে বলেন, 'আমি আপনার নাতি।'
পুরুষেরা কথা বলছে, আর মিনু পেছনে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে আছে। এদিকে খাদিজা যেন সময়ের মধ্যে হারিয়ে গেছেন। কীভাবে এই ভিডিও কলটি সম্ভব হলো, তিনি বাংলাদেশে আসতে পারবেন কি না, কিংবা তার পরবর্তী খাবার কোথা থেকে আসবে—এসব কিছুই তখন তার মাথায় নেই। শুধু এতদিন পর মিনুকে দেখতে পাওয়ার আনন্দেই তিনি আপ্লুত।
ভিডিও কলে পাকিস্তানে থাকা খাদিজার বয়স এখন ষাটের কোঠায়। তিনি স্মার্টফোন চালাতে পারেন না। উঠোনে বসে তাকে এক ব্যক্তি কথা বলতে সাহায্য করে। ভাষার ব্যবধান দূর করতে মনজুর বাংলার পাশাপাশি উর্দুতেও কথা বলেন।
খাদিজার গল্প সেই প্রায় ৮০টি বাংলাদেশি পরিবারের মধ্যে একটি, যারা 'দেশে ফেরা' গ্রুপের প্রচেষ্টায় দীর্ঘদিন পর এক হয়েছে। ১৪ সদস্যের এই দলে মনজুরসহ আরও কয়েকজন কাজ করছেন, যারা পাকিস্তানি ইউটিউবার ও অ্যাকটিভিস্ট ওয়ালিউল্লাহ মারুফের সঙ্গে মিলে বিচ্ছিন্ন পরিবারগুলোকে পুনর্মিলিত করছেন।
কীভাবে তারা বাংলাদেশ থেকে কয়েক দশক আগে পাকিস্তানে পৌঁছালেন, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য স্পষ্ট নয়। তবে একটি বিষয় সবার ক্ষেত্রেই মিল রয়েছে, তারা সবাই পাচারের শিকার হয়েছিলেন।

ওয়ালিউল্লাহ মারুফ
করাচিভিত্তিক ইমাম ও ইউটিউবার ওয়ালিউল্লাহ মারুফ ২০১৮ সালে তার ইউটিউব চ্যানেল চালু করেন।
গত জানুয়ারিতে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের জুমের ভিডিও কলে কথা হয় মারুফের সঙ্গে। তিনি বলেন, "শৈশবে আমি এক মহিলাকে দেখতাম এবং সবার মুখে শুনতাম, তিনি এখানের নন। তিনি সবসময় বলতেন, তিনি বাংলাদেশ থেকে এসেছেন, তাকে এখানে আনা হয়েছিল।"
শুধু এটিই প্রথম ঘটনাই নয়। পরে জানা যায়, ওই নারীর নাম জাহেদা, তিনি বাংলাদেশের ঝিনাইদহের বাসিন্দা। এরপর মারুফ ধীরে ধীরে আরও অনেক নারীর সন্ধান পান, যাদের বেশিরভাগই বৃদ্ধা। তারা দারিদ্র্যের মধ্যে দিন কাটান এবং তারা নিজেদের এখান নন বলে দাবি করেন।
মারুফ বলেন, "আমার মা-ই প্রথম বলেন, তুমি সারাক্ষণ ফোনে ব্যস্ত থাকো। তুমি এর ভালো ব্যবহার কেন করো না?" এই কথাই তাকে উদ্বুদ্ধ করেছিল ওই নারীর সঙ্গে কথা বলতে, তার গল্প ভিডিওতে ধারণ করে ইউটিউবে প্রকাশ করতে।
তবে মারুফের স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ শুধু বাংলাদেশিদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। প্রায় সাত বছরে তিনি 'সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ভারত, ইয়েমেন ও জর্ডানের ১৮০টিরও বেশি পরিবারকে আবার সংযুক্ত করেছেন, যাদের মধ্যে অনেকেই কয়েক দশক ধরে বিচ্ছিন্ন ছিল।' তার ইউটিউব চ্যানেলে লেখা আছে, 'এই পরিবারগুলোর বিচ্ছেদ ঘটেছিল মানব পাচার, অভিবাসন ও ভূরাজনৈতিক সংঘাতের কারণে।'
মারুফের অনেক ইউটিউব ভিডিওতে দেখা যায়, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে ভিডিও কল চলাকালে খোলা উঠোনে বহু মানুষ, মূলত পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশীরা জড়ো হয়েছেন। সেই দৃশ্য ধারণ করে পরে তার চ্যানেলে আপলোড করা হয়। এসব ভিডিওতে বহু মুহূর্ত গভীর আবেগে ভরে ওঠে, যখন দীর্ঘদিন ধরে বিচ্ছিন্ন স্বজনরা ভার্চুয়ালি আবার একে অপরকে দেখতে পান।
বর্তমানে মারুফের ইউটিউব চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা ২৪ হাজার। তিনি জানান, নিখোঁজ মানুষদের শুধু স্বজনদের সঙ্গে পুনরায় সংযুক্ত করাই নয়, অনেক ক্ষেত্রেই তাদের নিজ দেশে ফেরার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রক্রিয়াকরণের খরচও জনসাধারণের অনুদানের মাধ্যমে জোগাড় করা হয়।
২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে হামিদা বানু সংবাদ শিরোনাম হন। 'পাকিস্তানে খোঁজ মিলল নিখোঁজ ভারতীয় নারী, ফিরলেন নিজ দেশে' বিবিসি এমন শিরোনামে খবর প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশ হামিদার ব্যাপারে ব্যাপক পটভূমি যাচাইয়ের পর তাকে ফেরার অনুমতি দেয়।
হামিদার ভিডিও মারুফ ইউটিউবে প্রকাশ করলে এক ভারতীয় সাংবাদিক সেটি নিজের প্ল্যাটফর্মে শেয়ার করেন। ধীরে ধীরে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ে এবং একপর্যায়ে হামিদার নাতি সেটি দেখে তাকে শনাক্ত করেন। এরপর হামিদাকে ভারতে ফেরাতে ১৮ মাস সময় লেগেছিল।
মারুফ বলেন, "ভারতীয় দূতাবাস আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। তারা পুরো প্রক্রিয়ায় অত্যন্ত সহযোগিতা করেছিল। তারাই প্রথম আমাকে খুঁজে বের করে।"
হামিদা ২২ বছর পর পরিবারের সঙ্গে পুনরায় মিলিত হন। তাকে দুবাইয়ে ভালো চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে পাচারকারীরা পাকিস্তানের হায়দরাবাদে নিয়ে গিয়েছিল। পরে তিনি এক পথ বিক্রেতাকে বিয়ে করেন, কিন্তু কোভিড মহামারির সময়ে তার স্বামী মারা যান।
এই ধরনটি বাংলাদেশি নারীদের ক্ষেত্রেও প্রায় একইরকম। পরবর্তীতে তারা পাকিস্তানে আটকে পড়ে এবং সেখানেই বিয়ে করে থাকতে বাধ্য হন।
মারুফ বলেন, "কিছু গল্প অবিশ্বাস্যভাবে ভয়াবহ।" তবে তিনি তার ইউটিউব কনটেন্টে তাদের ওপর ঘটে যাওয়া সহিংসতার বিস্তারিত তুলে না ধরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
মারুফ তার ইউটিউব চ্যানেল শুরু করার পর বাংলাদেশের ইমাম মনজুর আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ২০১৯ সালের মধ্যে মনজুরের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন 'দেশে ফেরা' হারিয়ে যাওয়া মানুষদের পরিবারের সঙ্গে পুনর্মিলনের এই মানবিক কাজে নিয়োজিত ছিল।
চ্যানেলটি জনপ্রিয়তা পাওয়ার পর মারুফের কাছে আরও বেশি অনুরোধ আসতে থাকে। তিনি বলেন, "বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ওই নারীরা নিজে বা তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেউ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারা জানান, এখানে একজন বাংলাদেশি বা অন্য কোনো দেশের কেউবসবাস করছেন। আমি কি সাহায্য করতে পারব?"
মারুফ যথাযথ যাচাই-বাছাই করেন এবং বলেন, "প্রত্যেকটি কেস নেওয়া সম্ভব হয় না। আমি বলব, বাংলাদেশের কেস ভারতের তুলনায় অনেক বেশি।" তিনি যখন কারও সঙ্গে যোগাযোগ করেন, যতটা সম্ভব তথ্য সংগ্রহ করেন এরপর তা মনজুরের কাছে পাঠান এবং নিজের ইউটিউব চ্যানেলেও ভিডিও আপলোড করেন।
মনজুর এরপর 'দেশে ফেরা'র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মে তথ্য পোস্ট করেন। দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা স্বেচ্ছাসেবীদের মাধ্যমে পরিচালিত এই নেটওয়ার্ক বহু পরিবারকে পুনর্মিলিত করেছে। তবে শুধু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা নয়, দলটি আরও বিস্তৃত পরিসরে কাজ করছে।
মনজুর বলেন, "কাজটি বিভিন্ন সদস্যদের মধ্যে ভাগ করে নেওয়া হয়েছে। আমরা বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইনফরমেশন ব্রডকাস্টিং (জাতীয় তথ্যভাণ্ডার) যাচাই করে দেখি, পাকিস্তানে থাকা ব্যক্তি যে ঠিকানা দিয়েছেন, তা পাওয়া যায় কি না। যদি পাওয়া যায়, তাহলে ভালো; না পাওয়া গেলে, সংশ্লিষ্ট উপজেলার ফেসবুক গ্রুপ, গুগল ম্যাপসহ অন্যান্য মাধ্যম ব্যবহার করি আমরা।"
তবে কাজটি সহজ নয়। মনজুর উদাহরণ দিয়ে বলেন, "একটি কেসে আমাদের জানানো হয়েছিল, এক নারীর বাড়ি পাবনায় এবং তার মামার বাড়ি দিনাজপুরে। আমরা দীর্ঘ দুই বছর খোঁজ চালিয়ে শেষ পর্যন্ত তার প্রকৃত পরিবারকে খুঁজে পাই সিরাজগঞ্জে। এরপরই আমরা তাদের পুনর্মিলিত করতে সক্ষম হই।"
মনজুর আরও বলেন, "অনেক সময় পার হয়ে যাওয়ায় অনেক ভুক্তভোগী তাদের ঠিকানা ভুলে যান, যা অনুসন্ধান আরও কঠিন করে তোলে।"
রোজিনা নামে একজন টিবিএস-কে টেলিফোনে বলেন, "আমি মনজুর ভাইকে চিনি। তিনি আমার আম্মার বিষয়ে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন।" রেজিনার বাবার তিন স্ত্রী। যদিও রোজিনার মা তার বাবার তৃতীয় স্ত্রী (রেজিনা তাকে মা বলে ডাকেন), তবু তার শৈশবের স্পষ্ট স্মৃতিতে রয়েছে। তার আম্মা জাহেদা ঝিনাইদহের বাসিন্দা এবং মারুফ তার বিষয়ে প্রথম অনুসন্ধান করেছিলেন।
রেজিনা বলেন, "আমার বাবার সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পর আমার আম্মাকে ১৯৮০-এর দশকে তাকে বোম্বেতে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল এক আত্মীয়ের মাধ্যমে। তবে আম্মা সেই ঘটনার কিছুই মনে করতে পারেন না। ভ্রমণের সময় তিনি অচেতন ছিলেন। এই গল্প আমি জানি। আমার মা তাঁকে দেখেছিলেন, কারণ আম্মা ও আব্বা কিছুদিন আমার মামার বাড়িতে ছিলেন। আসলে আম্মা ও মা খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন।'

যখন জাহেদাকে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল তখন তিনি এক বছরের এক পুত্রসন্তান রেখে গিয়েছিলেন। পরে তাকে রেজিনার মা-ই লালনপালন করেন। রেজিনা বলেন, "তাই আমার বড় ভাই দালিমই আমার একমাত্র আপন ভাই, যার সঙ্গে আমি ঘনিষ্ঠ। আর আমি আমার মায়ের একমাত্র সন্তান।"
জাহেদা এখন পর্যন্ত দু'বার বাংলাদেশে এসেছেন। রেজিনা জানান, "তিনি ভালো আছেন। আমরা যোগাযোগ রাখি।"
তবে রেজিনা মারুফকে ব্যক্তিগতভাবে চেনেন না। তার যোগাযোগ শুধু মনজুরের সঙ্গেই রয়েছে।
অন্যান্য ঘটনা
মারুফ ও মনজুর দু'জনই বলেন, এই ধরনের ঘটনা খুবই সাধারণ। মনজুর বলেন, "প্রতি সপ্তাহে এক-দুটি নতুন ঘটনা আমরা পাই।"
এমনই এক ঘটনা ৬০ বছর বয়সী মুনিরানের। তিনি চিকিৎসার জন্য করাচিতে ছিলেন। ফেব্রুয়ারিতে টিবিএস-এর সঙ্গে একটি হোয়াটসঅ্যাপ ভিডিও কলে তিনি বলেন, "আমি এখন পর্যন্ত বিভিন্ন বয়সের ১৬ জন নারীকে পেয়েছ। যাদের জীবনগল্প আমার মতোই। তারা সবাই বাংলাদেশ থেকে এসেছেন কিন্তু এখন পাকিস্তানে বসবাস করছেন।"
মুনিরান প্রথমে মারুফের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে তিনি শেষ পর্যন্ত মনজুরের সঙ্গে কথা বলেন। এই সহযোগিতার মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশের আত্মীয়দের সঙ্গেও পুনরায় যোগাযোগ করতে সক্ষম হন।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে অভিবাসন কর্মকর্তারা ও দূতাবাসগুলো সহায়ক ভূমিকা পালন করেনি বলে জানান মারুফ। তিনি বলেন, "হামিদার ঘটনার মতো দ্রুত সহযোগিতার প্রক্রিয়া এখানে হয়নি। কাগজপত্র ঠিক করা অত্যন্ত কঠিন। যদিও সবকিছুই ক্রাউড ফান্ডিংয়ের মাধ্যমে চলে (মারুফ যাদের সঙ্গে কাজ করেন, তাদের জন্য স্মার্টফোন উপহার দেন যাতে সহজে যোগাযোগ করা যায়), তবে পুরো প্রক্রিয়াটি বেশ কঠিন ও সময়সাপেক্ষ।"
হাফিজ কবির, যিনি বর্তমানে বাগেরহাটের নিজ গ্রামে স্ত্রীসহ বসবাস করছেন, ফোনে তার দুর্ভোগের কথা ব্যাখ্যা করেন। ১৯৮০-এর দশকে তিনি ভালো জীবিকার সন্ধানে ভারতের মাধ্যমে পাকিস্তানে যান, কিন্তু সেখানে প্রতারণার শিকার হন বলে অভিযোগ করেন।
৮০ বছর বয়সী হাফিজ কবির বলেন, "আমি এখন ফিরে এসেছি কিন্তু আমার কাছে কোনো টাকা নেই। শপথ করে বলছি, আমি কখনো দ্বিতীয় বিয়ে করিনি। মৃত্যুর আগে আমি শুধু আমার স্ত্রীকে দেখতে চেয়েছিলাম। আমার সন্তানরা দেশের বিভিন্ন জেলায় স্বল্প আয়ের কাজ করে। আমি এবার স্থায়ীভাবে ফিরে এসেছি।"
জানুয়ারির ভিডিও কলে, যেখানে খাদিজা ভার্চুয়ালি তার বাংলাদেশে থাকা পরিবারের সঙ্গে পুনর্মিলিত হন, এক পর্যায়ে মনজুর খাদিজার পরিবারকে জিজ্ঞেস করেন, কেউ কি তাদের কাছে টাকা চেয়েছে? তারা 'না' বলে জবাব দেন। এরপর মনজুর বলেন, "আমরা স্বচ্ছতা বজায় রাখার চেষ্টা করি; আপনারা জেনে রাখুন, আপনাদের কাছ থেকে কেউ কোনো টাকা চাইতে পারে না। এটি সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ।"
এরপর মনজুর পরিবারকে জানান যে খাদিজার অবস্থা খুবই দুর্বিষহ। বেঁচে থাকার জন্য তাকে প্রায়ই রাস্তায় ভিক্ষা করতে হয়। তখন নাতি ওসমান কলের মধ্যেই তার মাকে জিজ্ঞেস করেন, "তুমি কি শুধু তাকে (খাদিজা) আনতে চাও, নাকি তার ছেলেকেও?"
এ বিষয়ে মনজুর মন্তব্য করেন, "এগুলো পরে আলোচনা করা যাবে।" কারণ ১০ বছর আগে বাংলাদেশ থেকে হারিয়ে গেছেন, তাদের পুনর্মিলন বা দেশে ফেরানো, এমনকি শুধু সফরের জন্য আনাও সহজ নয়।
খাদিজার বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন।
এই প্রতিবেদনে অবদান রেখেছেন টিবিএস-এর আলহান আরসাল এবং ওয়ালিউল্লাহ মারুফ (যিনি কেবল উর্দুতে কথা বলেন) ও টিবিএস-এর মধ্যে হওয়া জুম ভিডিও কলের ভাষান্তর করেছেন রিজওয়ানা হাশমি।