‘সন্তানদের পেছনেই সময় চলে যায়, তাই নারী পরিচালকদের এত অভাব’: পরিচালনায় এসে কেট উইন্সলেট
অস্কারজয়ী ব্রিটিশ অভিনেত্রী কেট উইনসলেটের বয়স এখন ৫০। দীর্ঘ ৩০ বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে অসংখ্য কালজয়ী চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তবে এবার তিনি হাজির হচ্ছেন নতুন পরিচয়ে। প্রথমবারের মতো চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছেন 'টাইটানিক'খ্যাত এই অভিনেত্রী। তার পরিচালিত প্রথম সিনেমার নাম 'গুডবাই জুন'।
সম্প্রতি সিনেমাটির বিশেষ প্রদর্শনীতে এসে কেট উইনসলেট জানালেন, কেন এতদিন পর্দার পেছনে অর্থাৎ পরিচালনার দায়িত্ব নেননি। তার মতে, নারীদের পরিচালনায় কম আসার পেছনে একটি বড় কারণ পারিবারিক দায়িত্ব।
কেট বলেন, 'আমরা অনেক সময় ভুলে যাই যে নারীদের সন্তান লালন-পালনে কতটা ব্যস্ত থাকতে হয়। পরিচালনা অনেক দীর্ঘ সময়ের কাজ। একজন অভিনয়শিল্পী হয়তো কয়েক সপ্তাহ শুটিং করে অন্য ছবিতে চলে যান। কিন্তু একজন পরিচালককে সেই ছবির পেছনে বছরের বেশি সময় দিতে হয়। সন্তানরা বড় হওয়ায় এখন আমি নিজের জন্য সময় পাচ্ছি, তাই হয়তো এই মুহূর্তে কাজটা করতে পারলাম।'
তিনি আরও জানান, নারী হিসেবে সিনেমা বানাতে গিয়ে তাকে বাজেটের সংকটে পড়তে হয়েছে। স্বল্প বাজেটে কাজ শেষ করতে গিয়ে অনেক সময় দক্ষ কুশলীদের নির্ধারিত পারিশ্রমিকের চেয়ে কিছুটা কমে কাজ করার অনুরোধও করেছিলেন তিনি।
কেট বলেন, 'একজন পুরুষ অভিনেতা যখন পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন, সবাই ধরে নেয় যে তিনি জানেন তাকে কী করতে হবে। কিন্তু একজন নারীর বেলায় সেই ভরসা করা হয় না। এই বৈষম্য শুধু অন্যায়ই নয়, এর ফলে আমাদের জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট পাওয়া এবং সিনেমা বানানো অনেক বেশি কঠিন হয়ে পড়ে।'
আজ ২৪ ডিসেম্বর নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেতে যাচ্ছে 'গুডবাই জুন'। সিনেমার চিত্রনাট্য লিখেছেন কেটেরই বড় ছেলে ২১ বছর বয়সী জো অ্যান্ডার্স।
বড়দিনকে সামনে রেখে মুক্তি পেলেও এটি প্রথাগত হাসিখুশির কোনো গল্প নয়। মরণব্যাধিতে আক্রান্ত এক নারী এবং তার পরিবারের আবেগ ও টানাপোড়েন নিয়ে তৈরি হয়েছে এই ছবি। কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন কিংবদন্তি হেলেন মিরেন। পরিচালনার পাশাপাশি সিনেমাটিতে একটি চরিত্রে অভিনয়ও করেছেন কেট।
পরিচালনায় আসার অনুপ্রেরণা অনেক আগেই পেয়েছিলেন কেট উইনসলেট। 'স্টিভ জবস' ছবির শুটিংয়ের সময় পরিচালক ড্যানি বয়েল তাকে বলেছিলেন, 'তোমার পরিচালনা করা উচিত, কারণ তুমি একজন পরিচালকের মতো চিন্তা করো।' তবে সেই প্রস্তুতি নিতে ও সুযোগ বুঝে কাজে নামতে কেট সময় নিয়েছেন অনেকটা দিন।
দীর্ঘ ক্যারিয়ারের অভিজ্ঞতায় ইন্ডাস্ট্রির বৈষম্য নিয়েও কথা বলেছেন কেট। তিনি জানান, 'টাইটানিক'-এর মতো ব্লকবাস্টার ছবিতে অভিনয় করলেও আজও তাকে নিজের অবস্থানের জন্য লড়াই করতে হয়।
কেট বলেন, 'অনেকে ভাবেন আমি টাইটানিক করেছি বলে যা চাই তা-ই অনায়াসে পেয়ে যাই। বিষয়টি মোটেও তেমন নয়। কেউ আপনার গল্পে বিশ্বাস না করা পর্যন্ত আপনাকে সিনেমা বানানোর টাকা দেবে না।'
ইন্ডাস্ট্রির দ্বিমুখী আচরণ নিয়েও কথা বলেন কেট। সিনেমাটি তৈরির সময় এক নারী সহকর্মীর কাছ থেকেও অনাকাঙ্ক্ষিত মন্তব্য শুনতে হয় বলে জানান তিনি। সিনেমার প্রাথমিক কিছু দৃশ্য দেখে সেই সহকর্মী কেটকে বলেছিলেন, তার কাজে 'আরও আত্মবিশ্বাসী' হওয়া উচিত। কেটের দাবি, কোনো পুরুষ পরিচালকের ক্ষেত্রে এমন কথা বলা হতো না।
রেড কার্পেটে নারী ও পুরুষ শিল্পীদের প্রতি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিও নিয়ে কেট বলেন, 'একজন অভিনেত্রীকে প্রথমেই জিজ্ঞেস করা হয়—তিনি কী পোশাক পরেছেন? অথচ একজন অভিনেতাকে প্রশ্ন করা হয় তার কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে। বৈষম্যটা এখানেই।'
'এমনকি পরিচালক হিসেবেও আমি যখন কাজ করি, আমার পুরুষ সহকর্মীদের সঙ্গে লোকে যেভাবে কথা বলে, আমার সঙ্গে সেভাবে বলে না। অভিনেত্রীরা যখন পরিচালনার মতো জায়গায় আসেন, তাঁদের নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ অনেক বেশি হয়,' বলেন তিনি।
তবুও ৫০ বছর বয়সে এসে পরিচালনার এই নতুন পথচলা নিয়ে দারুণ রোমাঞ্চিত কেট। তিনি মনে করেন, জীবন থেকে ফুরিয়ে যাওয়ার কিছু নেই, বরং তার নতুন যাত্রা তো কেবল শুরু হলো।
