লতা মঙ্গেশকর: ৩৬ ভাষায় গান গেয়েছেন, পারিশ্রমিক পেতেন সুপারস্টারদের চেয়েও বেশি

লতা মঙ্গেশকর এখন আর নেই, কিন্তু তার কীর্তি চিরকাল বেঁচে থাকবে। তার অনুপস্থিতিতেও তার কণ্ঠের সুর সংগীতপ্রেমীদের কানে মধুর মতো বাজে এবং শান্তি দেয়। গতকাল ছিল 'সুরের কোকিল' খ্যাত লতা মঙ্গেশকের জন্মদিন।
লতা মঙ্গেশকর ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯২৯ সালে মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর শহরের একটি মারাঠি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। গতকাল তার জন্মদিনে সারা বিশ্বে ভক্তরা তাকে স্মরণ করেছেন।
তার বিভিন্ন সম্বোধন রয়েছে—'সুরের কোকিল', 'সুর সম্রাজ্ঞী', 'জাতির কণ্ঠ', 'ভারত কোকিল', এবং 'সাহারা কণ্ঠ'। তবে তার আসল নাম ছিল হিমা মঙ্গেশকর। পরে তার বাবা দীননাথ মঙ্গেশকর নাম পরিবর্তন করে তাকে 'লতা' রাখেন।
লতা ছোটবেলা থেকেই সংগীতের পরিবেশে বড় হয়েছেন। তার বাবা ছিলেন খ্যাতনামা শাস্ত্রীয় গায়ক ও থিয়েটার শিল্পী। সেই কারণে লতা খুব কম বয়স থেকেই সংগীত জগতে পা রাখেন।
মাত্র তেরো বছর বয়সে লতা তার পিতাকে হারান। পিতার মৃত্যুর পর পরিবারের আর্থিক সমস্যা দেখা দেয়, যার কারণে তাকে হিন্দি ও মারাঠি ছবিতে কাজ করতে হয়।
লতা মঙ্গেশকর তার ক্যারিয়ারের শুরুতেই অভিনয়ও করেছেন। তার প্রথম ছবি ছিল ১৯৪২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত 'পাহেলি মঙ্গলা গৌরি', যেখানে তিনি স্নেহপ্রভা প্রধানের ছোট বোনের চরিত্রে অভিনয় করেন। পরে তিনি 'মাঝে বাল', 'গজভাউ', 'বড়ি মা', 'চিমুকলা সংসার', 'মান্দ'সহ আরও কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেন।
প্রথমে লতা মাত্র ২৫ টাকার পারিশ্রমিক পান। কিন্তু ধীরে ধীরে তার জনপ্রিয়তা ও কণ্ঠের জাদু সমগ্র দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৭০-এর দশকে তিনি শিল্প জগতে অন্যতম দামী গায়িকা হিসেবে পরিচিত হন। তার পারিশ্রমিক এত বেশি ছিল যে অনেক সময় ছবির প্রযোজকরা তাকে কাস্ট করতে পারতেন না। এমনকি এক সময়ে সুপারস্টারদের চেয়েও তার পারিশ্রমিক বেশি ছিল।
লতা মঙ্গেশকরের কণ্ঠে ৩৬টি আঞ্চলিক ও বিদেশি ভাষায় গান রেকর্ড রয়েছে। তিনি এক হাজারেরও বেশি ভারতীয় ছবিতে গান করেছেন।
১৯৮৯ সালে ভারত সরকার তাকে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারে ভূষিত করে। তার অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০০১ সালে তাকে ভারতের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মাননা ভারতরত্নে ভূষিত করা হয়; এম. এস. সুব্বুলক্ষ্মীর পর এই পদক পাওয়া তিনিই দ্বিতীয় সংগীতশিল্পী। ২০০৭ সালে ফ্রান্স সরকার তাকে ফ্রান্সের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা লেজিওঁ দ'অনার অফিসারের খেতাবে ভূষিত করে।
তিনি অর্জন করেছেন তিনটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, ১৫টি বাংলা চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার, চারটি শ্রেষ্ঠ নারী নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী ফিল্মফেয়ার পুরস্কার, দুটি বিশেষ ফিল্মফেয়ার পুরস্কার, ফিল্মফেয়ার আজীবন সম্মাননা পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার। ১৯৭৪ সালে তিনি প্রথম ভারতীয় হিসেবে রয়্যাল অ্যালবার্ট হলে সংগীত পরিবেশন করেন।