ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: ১০৪ আসনে মনোনয়ন জমা পড়েছে অন্তত ১০টি, দুটিতে সর্বোচ্চ ১৮টি
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন আসনে ২,৫০০ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। ইলেকশন কমিশনের তথ্যমতে, এরমধ্যে দুটি আসনে সর্বোচ্চ ১৮টি করে মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। আর একটি আসনে জমা পড়েছে সর্বনিম্ন দুইটি।
গতকাল সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) ছিল ৩০০ সংসদী আসনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। ঢাকা অঞ্চলের ঢাকা-১৮ ও গাজীপুর-২ আসনে সর্বোচ্চ ১৮টি করে মনোনয়নপত্র জমা হয়েছে। আর সর্বনিম্ন দুইটি মনোনয়ন জমা পড়েছে পিরোজপুর-১ আসনে। আর অন্তত ১০টি বা তার বেশি মনোনয়ন জমা পড়েছে প্রায় ১০৪টি আসনে।
অন্তত ১৫টি বা তার বেশি মনোনয়ন জমা পড়েছে ১৪টি আসনে, যার বেশিরভাগই ঢাকা অঞ্চলে। অন্যদিকে অন্তত ৫টি বা তার কম মনোনয়ন জমা পড়েছে ৪২টি আসনে। আর চারটির কম মনোনয়ন জমা পড়েছে ১৬টি আসনে। চারটি আসনে তিনজন করে প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।
পিরোজপুর-১ আসনে মনোনয়ন জমা দেওয়া দুই প্রার্থী হলেন, বিএনপির মনোনীত প্রার্থী অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেন এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী মাসুদ সাঈদী।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৭ ও বগুড়া-৬ আসনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষে মনোনয়নপত্র দাখিল করা হয়েছে। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ঢাকা-১৭ আসনে ১৭ জন এবং বগুড়া-৬ আসনে পাঁচজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
ঢাকা-১৫ আসন থেকে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এ আসনে মোট ৯ প্রার্থীর মনোনয়ন জমা পড়েছে।
ঢাকা-১১ আসনে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের পক্ষে মনোনয়নপত্র দাখিল করা হয়েছে। এ আসনে মোট ১১টি মনোনয়ন জমা পড়েছে।
বিএনপির দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, খালেদা জিয়ার জন্য নির্ধারিত তিনটি আসনেই বিকল্প প্রার্থী প্রস্তুত রেখেছে দলটি। আসনগুলো হলো—ফেনী-১ (ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া), বগুড়া-৭ (গাবতলী) এবং দিনাজপুর-৩ (সদর)।
এই তিন আসনের মধ্যে দিনাজপুর-৩ আসনে ১০টি, বগুড়া-৭ আসনে পাঁচটি এবং ফেনী-১ আসনে ১০টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে।
মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের আগেই আজ ভোর ৬টায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া মারা যান। এসব আসনে একাধিক বিএনপির প্রার্থী থাকলেও যাচাই-বাছাই শেষে এখনো বৈধ প্রার্থীদের তালিকা চূড়ান্ত হয়নি।
যাচাই-বাছাই ও বৈধ প্রার্থী চূড়ান্তের প্রক্রিয়া
বাছাইয়ের সময় সব ঠিক থাকলে রিটার্নিং কর্মকর্তা মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করেন। আইন ও বিধি অনুযায়ী, ত্রুটি থাকলে মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রার্থীর নির্বাচন কমিশনে আপিলের সুযোগ রয়েছে। আপিল নিষ্পত্তি ও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় শেষে বৈধ প্রার্থীদের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। এরপর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
বৈধ কোনো প্রার্থীর মৃত্যু হলে, নির্বাচন কার্যক্রম বাতিল করে পুনঃতফসিল ঘোষণার বিধান রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের আগেই বিএনপি চেয়ারপার্সনের মৃত্যু হওয়ায় সংশ্লিষ্ট আসনগুলোতে মনোনয়ন প্রক্রিয়া স্থগিত থাকবে, তবে সার্বিক নির্বাচনি প্রক্রিয়া বন্ধ হবে না বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা।
ইসির মূল্যায়ন
নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার গতকাল রাতে টিবিএসকে বলেন, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনটি সামগ্রিকভাবে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
অতীত অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, "বাংলাদেশের নির্বাচনের ইতিহাসে মনোনয়নপত্র জমার দিনগুলোতে সাধারণত নানা ঘটনা-দুর্ঘটনা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি দেখা যায়। সে তুলনায় এবারের চিত্র অনেক ভালো। ছোটখাটো কিছু ঘটনা ঘটেনি—তা নয়, তবে সামগ্রিকভাবে বড় কোনো সমস্যা হয়নি।"
মনোনয়নপত্র জমার সংখ্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "এবার গড়ে প্রতি আসনে আটটির বেশি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। কিছু মনোনয়ন যাচাই-বাছাইয়ে বাদ যেতে পারে, তবে প্রতি আসনে তিনজন প্রার্থী থাকলেও সেটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হিসেবে বিবেচিত হবে," বলেন তিনি।
নির্বাচন কমিশন জানায়, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিন পর্যন্ত সারাদেশের ৩০০ আসনে মোট ২,৫৮২ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমার শেষ সময় ছিল ২৯ ডিসেম্বর। এরপর বাছাই, আপিল ও নিষ্পত্তি শেষে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২০ জানুয়ারি।
২১ জানুয়ারি প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে এবং পরদিন থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হবে। প্রচারণা চলবে ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত। ১২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে; একই দিনে গণভোটও অনুষ্ঠিত হবে।
