জাতীয় সংসদ নির্বাচন: সারা দেশে ২,৭৮০ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ, জমার সময় শেষ হচ্ছে কাল
জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রার্থী মনোনয়ন এবং প্রাথমিকভাবে মনোনীত প্রার্থী বদলের তোড়জোড় চলছে। একইসঙ্গে জোট গঠন ও পুনর্বিন্যাসের প্রক্রিয়াও এগোচ্ছে। কে কোন দলের প্রতীকে নির্বাচন করবেন, তা আরও স্পষ্ট হবে কাল সোমবার। এদিন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় শেষ হচ্ছে।
নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক প্রার্থীরদের মনোনয়নপত্রের সঙ্গে নিজ দলের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদকের প্রত্যয়ন জমা দিতে হবে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও তা মনোনয়নপত্রে উল্লেখ করতে হবে। এর মধ্য দিয়ে কে দলীয় প্রার্থী আর কে স্বতন্ত্র, সেটির প্রাথমিক চিত্র স্পষ্ট হবে।
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমার সময় শেষ হচ্ছে আগামীকাল বিকাল ৫টায়।
নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, 'মনোনয়নপত্র জমার সময় পুনঃতফসিল করার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সব রাজনৈতিক দল যদি একসঙ্গে এসে সময় বাড়ানোর দাবি জানায়, তখন বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। তবে আপাতত ঘোষিত তফসিলই বহাল রয়েছে।'
নির্বাচন কমিশনের কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি জানিয়েছে, আজ বিকাল ৪টা পর্যন্ত সারা দেশে মোট ২ হাজার ৭৮০টি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে জমা পড়েছে ৩১টি। অঞ্চলভিত্তিক হিসাবে ঢাকা অঞ্চলে সর্বোচ্চ ৫০৬টি এবং সিলেট অঞ্চলে সর্বনিম্ন ১২৭টি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে।
মনোনয়নপত্র জমার সময় প্রার্থী বা তার প্রস্তাবক ও সমর্থকসহ পাঁচজনের বেশি উপস্থিত থাকতে পারবেন না। এ সময় কোনো ধরনের মিছিল বা শোডাউন করলে তা আচরণবিধি লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হবে বলে জানিয়েছে কমিশন।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমার শেষ সময় আগামীকাল সোমবার (২৯ ডিসেম্বর)। এরপর বাছাই, আপিল ও নিষ্পত্তি শেষে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২০ জানুয়ারি। ২১ জানুয়ারি প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে এবং পরদিন থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করা যাবে। প্রচারণা চলবে ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত।
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ২০ জানুয়ারির পর প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হবে। এর আগে যে কেউ প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে পারবেন। একই আসনে কোনো দলের একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন দিলে প্রত্যাহারের সময়সীমার মধ্যেই একজনকে চূড়ান্ত করতে হবে।
ইসির কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দল এই নির্বাচনে প্রার্থী দিতে পারবে। তবে রাজনৈতিক কার্যক্রম স্থগিত থাকায় আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। তবে দলটির নেতারা অন্য দলে যোগ দিয়ে অথবা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন।
এবারের নির্বাচনের জন্য গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) সংশোধন এনেছে নির্বাচন কমিশন। এতে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করলে প্রার্থীদের নিজ নিজ দলের প্রতীকেই ভোট করার বিধান যুক্ত করা হয়েছে। ফলে আগের মতো জোটের বড় দলের প্রতীকে নির্বাচন করার সুযোগ থাকছে না। এ কারণে বড় দল ও জোটগুলোর মধ্যে প্রার্থী পুনর্বিন্যাস চলছে। কয়েকটি দলের নেতা ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করতে বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীও জোটের শরিকদের ছাড় দিতে কয়েকটি আসনে প্রার্থী প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।
জাতীয় পার্টির বিভক্তি ও মনোনয়নপত্র দাখিল প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, দলটির নেতৃত্ব ও প্রতীক সংক্রান্ত বিরোধ বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন। এ অবস্থায় নির্বাচন কমিশনের পক্ষে কোনো পক্ষকে দলীয় প্রতীক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, আদালত থেকে কোনো নির্দেশনা বা রায় না এলে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া যাবে না। সেক্ষেত্রে প্রার্থীদের প্রতীক ছাড়া নির্বাচন করতে হবে। একই দলের দুই পক্ষ মনোনয়নপত্র জমা দিলে কমিশন নিজ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না। আমরা আদালতের রায়ের জন্য অপেক্ষা করছি।
মনোনয়নপত্র জমার সময়সীমা শেষ হওয়ার আগের দিন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপির প্রতিনিধি দল।
আজ রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে বৈঠক শেষে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের বলেন, মনোনয়নপত্রে সন্তানের আয়কর সংক্রান্ত তথ্য দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।
তিনি বলেন, অনেক প্রার্থীর সন্তান এখনো উপার্জনক্ষম নন, কেউ বিদেশে থাকেন বা আলাদাভাবে কর দেন। কমিশন মূলত নির্ভরশীল সন্তানের তথ্য চেয়েছে। কিন্তু বিষয়টি স্পষ্ট না হওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। এ নিয়ে আমরা নির্বাচন কমিশনকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। কমিশন বিষয়টি পরিষ্কার করবে বলে জানিয়েছে।
