প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে হামলায় সরকারের ভেতরের একটা অংশের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে: নাহিদ
গত বৃহস্পতিবার রাতে দৈনিক প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে সন্ত্রাসী হামলা পূর্বপরিকল্পিত এবং এর সাথে সরকারের ভেতরে একটি অংশের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে দাবী করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। গণমাধ্যমের ওপর এমন হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাকে তিনি দুঃখজনক বলেও উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, "এই ঘটনার পর আমরা বলেছি, সরকারের ভেতরের একটা অংশের এখানে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। সমাজে এটার পক্ষে সম্মতি তৈরি করা হয়েছিল অনেকদিন ধরেই, এবং এর পেছনে একটা রাজনৈতিক ব্যাকআপও রয়েছে। এই তিনটা ঘটনা একসাথে না ঘটলে, ওই রাতে এতো বড় ঘটনা ঘটানোর সাহস পেত না। খুব বেশি মানুষ, কয়েক হাজার মানুষ একসাথে গিয়ে এই ঘটনা ঘটিয়েছে, এটা এরকমও না। ফলে পুরো ঘটনা পরিকল্পিত ছিল।"
আজ সোমবার (২২ ডিসেম্বর) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে 'মব ভায়োলেন্সে আক্রান্ত বাংলাদেশ' শীর্ষক যৌথ প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে সংবাদপত্রের সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদ ও সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নিউজ পেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (নোয়াব)। প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগ, সেখানে সংহতি জানাতে আসা সম্পাদক পরিষদের সভাপতি নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নূরুল কবীরকে হেনস্তা করার প্রতিবাদে এই সভার আয়োজন করা হয়।
প্রতিবাদ সভা শেষে প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ের পাশের রাস্তায় দাঁড়িয়ে মানববন্ধন করেন তাঁরা। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, পেশাজীবী সংগঠন, ব্যবসায়ী সংগঠন, সাংবাদিক সংগঠন ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ এতে সংহতি জানাতে আসেন।
সেখানে নাহিদ ইসলাম বলেন, "আমরা আজকে যে পরিস্থিতিতে এসে দাঁড়িয়েছি, এটি আমাদের জন্য সম্পূর্ণ দুর্ভাগ্যজনক। জুলাই পররবর্তী সময়ে আমরা যে বাংলাদেশ প্রত্যাশা করেছিলাম, আমরা সেই দিকে এগোচ্ছি না। যারা সেই রাতে প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টার কার্যালয়ে এবং সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের ওপর হামলা করেছে, তারা জুলাই অভ্যূত্থানের স্লোগানগুলোকেই ব্যবহার করে এই হামলা চালিয়েছে, শরীফ ওসমান হাদীর মৃত্যুকে তারা ব্যবহার করেছে। জুলাইয়ের স্লোগানগুলোকে ব্যবহার করেছে এবং তাদের পক্ষে সম্মতি তৈরি করেছে।"
তিনি বলেন, "শরীফ ওসমান হাদী, তার এরকম একটা অ্যাক্সিডেন্ট হতে পারে, এবং হওয়ার পর বাংলাদেশে কী কী ঘটনা ঘটানো হবে, এটার একটা চক্রান্ত, পরিকল্পনা আগে থেকেই তৈরি হয়েছিল। ঘটনাগুলো দেখে আমাদের কাছে এরকমই মনে হয়েছে।"
নাহিদ বলেন, আমি মনে করি এটার পিছনে সবার দায় রয়েছে, আমাদের বেশি দায় রয়েছে, যারা আমরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করেছিলাম। ব্যক্তিগতভাবে আমি তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলাম। আমাদের জন্য আরো দুর্ভাগ্যজনক, আজকে আমরা যে শব্দটা ব্যবহার করছি 'মব ভায়োলেন্স' এই শব্দটার সাথে প্রথমদিকে আমি একমত হতাম না, আমরা এটার বিরোধীতা করতাম। আমরা যাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলাম, তাদের পক্ষ থেকেই পুরো জুলাই আন্দোলনের প্রথম থেকেই বলা হয়েছে এটা মবক্রেসি, আমরা বলেছি এটা মবক্রেসি না। অনেক কিছু বলেছি, গণঅভ্যূত্থান বিপ্লব পরবর্তী পরিস্থিতিতে অনকে কিছু হয়, পুলিশ নেই, মানুষের অনেক ক্ষোভ, ১৬ বছরের পূঞ্জিভুত ক্ষোভ ইত্যাদি বলেছি।
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, "গণঅভ্যুত্থানের দেড় বছর পার হয়ে গিয়েছে, এখন যেটা হচ্ছে সম্পূর্ণভাবে পরিকল্পিত অপরাধ হচ্ছে এবং দেশের পুরো রাজনীতি, নির্বাচন, একদিকে নিয়ে যাওয়ার জন্যই এই চক্রান্ত। আমি মনে করি, এই জায়গা থেকে সবারই দায়িত্ব নেয়া উচিত এবং এই ঘটনা যারা সেই রাতে ঘটিয়েছে, এটা খুবই স্পষ্ট কারা সেটার পক্ষে সম্মতি তৈরি করেছে, কারা সেই রাতে সেখানে গিয়েছে, লেখালেখি করেছে। আমার মনে হয় সরকারের উচিত হবে, আমাদের সবাই মিলে সরকারকে বাধ্য করতে হবে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং বিচার। একইসাথে শরীফ ওসমান হাদীকে এভাবে প্রকাশ্যে গুলিবিদ্ধ করা হলো, ঢাকা শহরের একজন এমপি প্রার্র্তী এবং জূলাই গণঅভ্যুত্থানের অগ্রমূখ, সেই বিষয়টা সুরাহা করতে হবে।"
প্রথম আলো ডেইলি স্টারে হামলা প্রতিরোধে কেউই এগিয়ে না কথা তুলে ধরে নহিদ বলেন, "সেই রাতের ঘটনা থেকে মনে হয়েছে যে, ঢাকা শহরে ৫০০ মানুষও নেই, যারা ওই ভবন দুটোর সামনে গিয়ে হামলা প্রতিরোধে ব্যারিকেড তৈরি করতে পারে। এটা আমাদের জন্য আরো দুর্ভাগ্যজনক মনে হয়েছে, অসহায় মনে হয়েছে। আমরা যদি সাথে সাথে রেসপন্স করতে পারতাম। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নামে আমরা এরকম কোনোবিছু বিন্দুমাত্র অ্যালাও করব না।"
