উসকানিমূলক কনটেন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মেটাকে অন্তর্বর্তী সরকারের চিঠি
সহিংসতায় উসকানি প্রদান, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে বিঘ্ন সৃষ্টি এবং সংবাদমাধ্যমের ওপর হামলায় প্ররোচনা দেয়—এমন কনটেন্টের বিরুদ্ধে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটাকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার।
শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি এজেন্সির (এনসিএসএ) পক্ষ থেকে মেটার কাছে এই চিঠি পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে ফেসবুকে সহিংসতা ও ভীতি প্রদর্শনমূলক পোস্ট নিয়ন্ত্রণে আরও কঠোর হওয়ার পাশাপাশি আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রস্তাবিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ-সম্পর্কিত কনটেন্টগুলোর ওপর নিবিড় নজরদারি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
সরকারের পক্ষ থেকে সতর্কবার্তা দিয়ে বলা হয়, দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিবর্তনের সুযোগ নিয়ে বড় ধরনের সহিংসতা ছড়াতে এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে ফেসবুককে ব্যবহার করা হচ্ছে।
এনসিএসএ সাংবাদিক ও গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের ওপর হামলায় প্ররোচনা দেয়—এমন অনলাইন পোস্টের বিষয়েও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, সাবেক সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু ব্যক্তি সহিংসতার ডাক দিচ্ছেন, যার ফলে 'দ্য ডেইলি স্টার' ও 'প্রথম আলো'-সহ দেশের শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটেছে।
চিঠিতে আরও অভিযোগ করা হয়, সরকার ও নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও সহিংসতায় উসকানি দেওয়া অ্যাকাউন্টগুলো সময়মতো বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছে মেটা। ফলে উসকানিমূলক এসব কনটেন্ট ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে।
সংস্থাটি জোর দিয়ে বলেছে, সহিংসতা ছড়ানো কনটেন্টগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে তা জাতীয় স্থিতিশীলতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা এবং জনশৃঙ্খলার ওপর সরাসরি হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
এনসিএসএ জানিয়েছে, চিঠির সঙ্গে তারা ফেসবুকের এমন কিছু পোস্টের তালিকা সংযুক্ত করে দিয়েছে, যেখানে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জনতাকে সহিংসতায় উসকানি দেওয়া হয়েছে। এর আগে সরকারিভাবে এসব পোস্টের বিষয়ে অভিযোগ জানানো হলেও মেটা দ্রুত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
বাংলাদেশে মেটার কোনো স্থানীয় কার্যালয় না থাকায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বর্তমানে সরকার বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি), তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং এনসিএসএ'র মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করছে। চিঠিতে 'সাইবার নিরাপত্তা অধ্যাদেশ ২০২৫'-এর প্রসঙ্গ টেনে বলা হয়, এই অধ্যাদেশ অনুযায়ী এনসিএসএ-কে এ ধরনের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার আইনি ম্যান্ডেট দেওয়া হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকার মেটার প্রতি তাদের প্ল্যাটফর্মের অপব্যবহার রোধে নিজেদের দায়িত্বশীলতা প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে। একইসঙ্গে বাংলা ভাষায় কনটেন্ট মডারেশন (পর্যবেক্ষণ) ও প্রেক্ষাপট বিবেচনায় পর্যালোচনার সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিশেষ নজরদারি চালিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেছে।
এনসিএসএ বলেছে, বাংলাদেশ গত ১৭ বছরের বেশি সময় ধরে কোনো অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখেনি। আসন্ন নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা জননিরাপত্তা, গণতান্ত্রিক অধিকার এবং দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
মেটার পাবলিক পলিসি এবং মানবাধিকার বিষয়ক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে পাঠানো এই চিঠিতে, সহিংসতা রোধ এবং নির্বাচনকালীন সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায় জরুরি ভিত্তিতে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
