নির্বাচন কমিশন কোনো দলকে আনুকূল্য দিলে কঠোর হস্তে দমন করা হবে: জামায়াত আমীর
বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর আমীর শফিকুর রহমান বলেছেন, 'আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে কোনো আনুকূল্য চাই না, কিন্তু কোনো দলকে যদি কমিশন আনুকূল্য দেওয়ার চেষ্টা করে, তবে তা কঠোর হস্তে দমন করা হবে।'
মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিজয় দিবস উপলক্ষে যুব ম্যারাথনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, 'জনগণের সম্মিলিত প্রতিরোধের মুখে সব ষড়যন্ত্র চলে যাবে। প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান যেন তারা তাদের দায়িত্ব যথাযথ পালন করে।'
শফিকুর রহমান আরও বলেন, 'আগামী জাতীয় নির্বাচনে আমরা আমাদের দলীয় বিজয় চাই না, চাই ১৮ কোটি মানুষের বিজয়। আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের রাজনীতির নতুন মোড়ক উন্মোচন হবে। নির্বাচন নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র থাকলে তা জনগণ প্রতিরোধ করে নিঃশেষ করে দেবে।'
জামায়াত আমীর বলেন, '১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে ওঠে এবং দেশের সব মানুষ একসঙ্গে স্বাধীনতার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে।'
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর শাসকগোষ্ঠী জনগণের সঙ্গে করা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারেনি।
মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে জামায়াত আমীর বলেন, 'একটি দল মুক্তিযুদ্ধকে নিজেদের সম্পত্তি হিসেবে দেখেছিল এবং দেশের বাকি মানুষকে দাসে পরিণত করা হয়েছিল। বহুদলীয় গণতন্ত্র ধ্বংস করে মৌলিক মানবাধিকার কেড়ে নেওয়া হয় এবং রক্ষী বাহিনীর নামে একটি দমনমূলক বাহিনী গড়ে তোলা হয়েছিল।'
আওয়ামী লীগের বিষয়ে তিনি বলেন, 'স্বাধীনতার পর একটি পরিবার, একটি গোষ্ঠী এবং একটি দলকে সুবিধা দিতে সব রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠেছিল। দলটি সোনার বাংলা গড়ার ওয়াদা করে শ্মশান বাংলা তৈরি করেছিল।'
তিনি আরও বলেন, 'আওয়ামী লীগ তিন দফা মসনদে এসে তিনবারই রক্ত আর মরদেহ উপহার দিয়ে গেছে। আওয়ামী শাসনামলে খুন, ধর্ষণ আর আয়নাঘরের রাজত্ব কায়েম করেছিল, ৫ আগস্টের মাধ্যমে তাদের পরাজয় ঘটল।'
শফিকুর রহমান বলেন, ফ্যাসিবাদরা পালিয়ে গিয়েও দেশের মানুষকে শান্তি দিচ্ছে না। সবশেষ ওসমান হাদিকে গুলি করে তাকে শেষ করার পাঁয়তারা করেছে।
তিনি আরও বলেন, 'আওয়ামী লীগ স্বাধীন বাংলাদেশকে সন্ত্রাসের অভয়ারণ্যে পরিণত করেছিল। কিন্তু অতীতের বস্তাপচা সব রাজনীতিকে আমরা পায়ের নিচে চেপে সমাপ্তি টানতে চাই। নতুন বাংলাদেশের নতুন ধারায় রাজনীতি শুরু করতে চাই।'
আওয়ামী লীগের বিষয়ে জামায়াত আমির আরও বলেন, 'ছিয়ানব্বই সালে ক্ষমতায় আসার আগে হাতজোড় করে তারা [আ.লীগ] জনগণের কাছে ক্ষমা চেয়েছিল। বলেছিল, অতীতে আমাদের দল বাংলাদেশের জনগণের সাথে যে অন্যায় আচরণ করেছে, যে জুলুম করেছে, আমরা বিনাশর্তে মাফ চাই। একটিবারের জন্য আমাদেরকে আপনারা ক্ষমতায় দিন। আমরা ভালো হয়ে গেছি। এখন দেশের জন্য ভালো কিছু করতে চাই। হাতে তসবিহ ছিল, মাথায় ঘোমটা ছিল।
'জনগণ সহজ-সরলভাবে ধারণা করেছিল তাদের মানসিকতার পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু না, যখনই তারা মসনদে বসল, তারা আপনরূপে আত্মপ্রকাশ করল। আপনাদের মনে থাকার কথা, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামে গিয়ে বলেছিলেন, চট্টগ্রামের নেতাদেরকে তিরস্কার করে, একটা হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে কেন্দ্র করে, "তোমরা কি হাতে চুড়ি পরে বসে আছ?" তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, "আর যদি আমার দলের একটা মানুষকে হত্যা করা হয়, তাহলে তার বিনিময়ে দশটা লাশ ফেলে দিতে হবে।" এই ছিল একজন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বজ্ঞানহীন হুঙ্কার, আস্ফালন। তারা তা-ই করেছিলেন। সেই সময়টায় খালে-বিলে, নদীতে-নালায়, জঙ্গলে, হাটে-মাঠে সর্বত্র মানুষের টুকরো টুকরো লাশ পাওয়া যেত।'
