চলতি অর্থবছরে অপ্রচলিত বাজারে পোশাক রপ্তানি কমেছে ৩.৩৯ শতাংশ
অস্ট্রেলিয়া, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া ও রাশিয়াসহ অপ্রচলিত বাজারগুলোতে (নন-ট্র্যাডিশনাল মার্কেট) বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। চলতি ২০২৫–২৬ অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত প্রথম পাঁচ মাসে এসব গন্তব্যে মোট রপ্তানি ৩ শতাংশেরও বেশি হ্রাস পেয়েছে।
তবে একই সময়ে কিছু প্রচলিত বাজারে রপ্তানিতে সামান্য প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)-এর তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে নন-ট্র্যাডিশনাল মার্কেটগুলোতে সার্বিকভাবে পোশাক রপ্তানি কমেছে ৩.৩৯ শতাংশ।
নন-ট্র্যাডিশনাল মার্কেটগুলোর মধ্যে অপেক্ষাকৃত বড় রপ্তানি গন্তব্য অস্ট্রেলিয়া, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, রাশিয়া, তুরস্ক ও মেক্সিকোর মতো দেশগুলোতে রপ্তানি কমেছে তুলনামূলকভাবে বেশি হারে।
খাতসংশ্লিষ্টদের মতে, বিশ্বব্যাপী ভোক্তা ব্যয়ে কিছুটা শ্লথগতি, বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে শক্তিশালী বিপণন কার্যক্রমের অভাব, বাজারের চাহিদা অনুযায়ী পোশাকপণ্যে বৈচিত্র্য আনতে না পারা এবং এসব বাজারে রপ্তানিতে সরকারি প্রণোদনা কমিয়ে দেওয়াই রপ্তানি কমার প্রধান কারণ।
বাংলাদেশের মোট পোশাক রপ্তানির প্রায় ১৬ শতাংশ যায় নন-ট্র্যাডিশনাল হিসেবে পরিচিত দেশগুলোতে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য গন্তব্য দেশের সংখ্যা প্রায় ১৫টি।
মূলত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি দেশের বাইরে থাকা অন্যান্য দেশগুলোকে তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে নন-ট্র্যাডিশনাল মার্কেট হিসেবে ধরা হয়।
গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলোতে বড় ধরনের পতন
ইপিবি'র তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ট্র্যাডিশনাল মার্কেটেও বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির পরিস্থিতি খুব একটা সন্তোষজনক নয়। তবে নন-ট্র্যাডিশনাল মার্কেটগুলোতে রপ্তানি কমার হার তুলনামূলকভাবে বেশি।
গত পাঁচ মাসে ভারতে পোশাক রপ্তানি কমেছে ৮ শতাংশের বেশি। আলোচ্য সময়ে দেশটিতে রপ্তানি হয়েছে ২৯৮ মিলিয়ন ডলারের পোশাক, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬ মিলিয়ন ডলার কম।
নন-ট্র্যাডিশনাল মার্কেটগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় গন্তব্য অস্ট্রেলিয়ায় জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত রপ্তানি হয়েছে ৩১৩ মিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ কম।
এছাড়া দক্ষিণ কোরিয়ায় রপ্তানি কমেছে ১২ শতাংশ, মেক্সিকোতে ১৬ শতাংশ, তুরস্কে ২৫ শতাংশ এবং রাশিয়ায় ২৩ শতাংশ।
তবে নন-ট্র্যাডিশনাল হিসেবে পরিচিত আরও কিছু দেশ, যেমন—ব্রাজিল, চীন, জাপান, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশগুলোতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) ভাইস প্রেসিডেন্ট শিহাব উদ্দোজা চৌধুরী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "সার্বিকভাবে আমাদের রপ্তানির অবস্থা ভালো নয়। এর মধ্যে নন-ট্র্যাডিশনাল মার্কেটে পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে বেশি খারাপ হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে মার্কেটিংয়ে পিছিয়ে থাকা, ক্রমাগত যোগাযোগ বা ফলোআপের অভাব এবং ইনসেনটিভ কমে যাওয়া।"
তিনি বলেন, "কোরিয়া ও জাপানের বাজারে চীন যেভাবে আক্রমণাত্মক মার্কেটিং করছে, আমরা তা পারছি না। পাশাপাশি এসব দেশে অবস্থিত আমাদের দূতাবাসগুলোর কমার্শিয়াল উইংও প্রত্যাশিত ভূমিকা রাখতে পারছে না।"
শিহাব উদ্দোজা চৌধুরী আরও বলেন, "এক সময় নতুন বাজারে রপ্তানি উৎসাহিত করতে ৫ শতাংশ ক্যাশ ইনসেনটিভ ছিল, যা এখন কমে মাত্র ২ শতাংশে নেমে এসেছে। এতে রপ্তানিকারকেরা নিরুৎসাহিত হচ্ছেন, যা রপ্তানি কমার একটি বড় কারণ।"
বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল মনে করেন, বাজারের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য উন্নয়ন করতে না পারা এবং দুর্বল মার্কেটিংও রপ্তানি কমার অন্যতম কারণ।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডায় বাড়লেও কমেছে জার্মানি, ফ্রান্স ও ইতালিতে
ইপিবির তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, একক বাজার হিসেবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রে গত পাঁচ মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানি আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৩ শতাংশ বেড়েছে। আলোচ্য সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৩.২২ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৩.১৩ বিলিয়ন ডলার।
এছাড়া কানাডায় ৬.৫১ শতাংশ এবং যুক্তরাজ্যে ৩ শতাংশ তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে।
তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি দেশের মধ্যে যেসব দেশে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য রপ্তানি রয়েছে, সেসব দেশের তালিকায় স্পেন, পোল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডসে রপ্তানি বাড়লেও একক দেশ হিসেবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানি গন্তব্য জার্মানিতে কমেছে। একই সঙ্গে ফ্রান্স, ডেনমার্ক ও ইতালিতেও তৈরি পোশাক রপ্তানিতে পতন দেখা গেছে।
