বিদেশি বিনিয়োগ না এলে মূল্যস্ফীতি বাড়বে: লুৎফে সিদ্দিকী
প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই)-এর প্রয়োজনীয়তাকে 'গাণিতিক বাস্তবতা' হিসেবে জোর দিয়েছেন।
তিনি বলেন, 'আমাদের দেশে প্রচুর বিনিয়োগের সুযোগ এবং কাজ করার মতো তরুণ জনগোষ্ঠী রয়েছে, এই দুইয়ের সমন্বয় ঘটাতে বিদেশি বিনিয়োগ অপরিহার্য।'
শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) সকালে চট্টগ্রামে আয়োজিত এক অর্থনৈতিক সম্মেলনে এসব কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী।
রাজধানীর র্যাডিসন ব্লু চট্টগ্রাম বে ভিউয়ে 'ফিউচার আউটলুক অব বাংলাদেশ ইকোনমি: এফডিআই, ফাইন্যান্সিয়াল রিফর্মস অ্যান্ড এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন'- শিরোনামে এ সম্মেলনের আয়োজন করে ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএমএবি) চট্টগ্রাম ব্রাঞ্চ।
তিনি আরও বলেন, 'এফডিআই না নেওয়া মানে কেবল টাকা ছাপানো, যার ফলস্বরূপ মূল্যস্ফীতি বাড়বে, ঋণের পরিমাণ বাড়তে থাকবে এবং সুদের হার কখনোই কমবে না। এ বিষয়ে বিতর্কের কোনো অবকাশ নেই। এফডিআই আকর্ষণে বাংলাদেশের এতদিনকার ব্যর্থতা লজ্জার ব্যাপার।'
তিনি সতর্ক করেন, 'বর্তমানে সরকারের বাজেটে ব্যয়ের সবচেয়ে বড় খাত হলো ঋণের সুদ পরিশোধ। এনবিআরের মোট রাজস্ব আয়ের ২১ শতাংশ শুধু সুদের হার মেটাতে খরচ হচ্ছে, যা প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ১৪ কোটি টাকা। ঋণ নেওয়াটা খারাপ নয়; তবে খেয়াল রাখতে হবে এই টাকা প্রকৃত বিনিয়োগ হচ্ছে, নাকি কেবল খরচ হয়ে যাচ্ছে।'
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অদক্ষতা এবং দুর্নীতির কারণে দেশ কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তা বোঝাতে তিনি একটি তৈরি পোশাক কারখানার উদাহরণ দেন।
ওই কারখানার ভিয়েতনাম এবং বাংলাদেশের শাখার তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে তিনি জানান, ভিয়েতনামে শ্রমিকদের বেতন প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি হওয়া সত্ত্বেও সেখানে মুনাফা বেশি। বেতন কম হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশে মুনাফা কম হওয়ার পেছনের ৫০ শতাংশের অর্ধেক ব্যয় হয় লজিস্টিকস, সড়ক ও পোর্টে সময় লাগার মতো অদক্ষতায়। আর বাকি অর্ধেক যায় দুর্নীতির পকেটে।
তিনি বলেন, 'এই দুটি সমস্যার সমাধান আমাদের নিজেদের হাতেই রয়েছে এবং এখন সংস্কারকে প্রাতিষ্ঠানিক আলোচনায় সীমাবদ্ধ না রেখে পুরো সিস্টেমই পাল্টে ফেলতে হবে।'
সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান এবং ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ শাহীন উপস্থিত ছিলেন। এনবিআর চেয়ারম্যান তার বক্তব্যে করনীতি, কর কাঠামো সংস্কার এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।
এছাড়া সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক এস এম শোহরাবুদ্দীন সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
