আয়নাঘরে গুম নির্যাতনের সময় গ্রেপ্তার তিন সেনা কর্মকর্তা দায়িত্বে ছিলেন না: আইনজীবী
আওয়ামী লীগের গত শাসনামলে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সদর দপ্তরের জয়েন্ট ইন্টারগেশন সেল-জেআইসি বা আয়নাঘরে গুম-নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার থাকা তিন সেনা কর্মকর্তা এসব অপরাধ সংঘটনের সময় দায়িত্বে ছিলেন না বলে দাবী করেছেন তাদের আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু।
তিনি বলেন, 'যে সময়ে এসব গুম ও নির্যাতনের অভিযোগ মামলায় আনা হয়েছে, গ্রেপ্তার থাকা তিনজন ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী ওইসময় ডিজএফআইয়ের দায়িত্বে ছিলেন না।'
এছাড়াও সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আযমী জেআইসি সেল বা আয়নাঘরে ছিলেন না বলে দাবি করেছেন তিন সেনা কর্মকর্তার আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু।
মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদের নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ এই মামলায় তিন সেনা কর্মকর্তা অব্যহাতি চেয়ে আভিযোগ গঠনের বিরুদ্ধে শুনানির সময় এ দাবি করেন তিনি।
গুম-নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার তিন সেনা কর্মকর্তার হয়ে আইনি লড়াই করছেন এই আইনজীবী।
এ মামলায় গ্রেপ্তার তিন কর্মকর্তা এসময় ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় হাজির ছিলেন। তাদের পক্ষে শুনানিতে আজিজুর রহমান দুলু চারটি গ্রাউন্ড তুলে ধরেন।
চারটি গ্রাউন্ড হলো- বেআইনি আটক, অপহরণ, নির্যাতন ও গুম করে রাখা। এসব বিষয় বিবেচনায় নেওয়ার প্রার্থনা করেন এই আইনজীবী। একইসঙ্গে তিন আসামির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো থেকে অব্যাহতি আবেদন করেন।
পরে পলাতক পাঁচ আসামির পক্ষে শুনানি করেন স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী হাসান ইমাম। আর শেখ হাসিনার হয়ে শুনানি করেন আমির হোসেন।
ট্রাইব্যুনাল এই মামলায় অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর বিষয়ে ১৪ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেছেন।
শুনানির পর প্রেস ব্রিফিংয়ে আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু বলেন, 'আমরা ডিসচার্জ নিয়ে শুনানি করেছি। আমরা চারটি গ্রাউন্ড তুলে ধরেছি। এর মধ্যে প্রসিকিউশনের উপাদান অনুযায়ী তিনটিই অনুপস্থিত। তা হলো ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তানভির ও মাহবুবুর রহমান ডিজিএফআইয়ে পরিচালক পদে যোগদানের আগেই এসব সংঘটিত হয়েছে। অর্থাৎ তাদের জন্মের আগেই সংঘটিত অপরাধের জন্য এ মামলায় দায়ী করা হয়েছে।'
তিনি বলেন, 'কারণ ভুক্তভোগী আযমী ও মাইকেল চাকমাকে অপহরণ করে যখন গুমে রাখা হয়, তখন এই দুজনসহ সরওয়ার হোসেন ডিজিএফআইয়ে কর্মরত ছিলেন না। অর্থাৎ তাদের পোস্টিং হয়নি।'
আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু বলেন, 'সেনাবাহিনীর তদন্ত আদালতে অভিযোগ দিয়েছেন আযমী। তাদের প্রতিবেদন অনুসারে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন। সেখানেও এই তিনজনের কোনো দোষ নেই। একইসঙ্গে আযমী যে ঘরে আটক ছিলেন সেই ঘরের বর্ণনাও ট্রাইব্যুনালে দিয়েছি।'
তিনি বলেন, 'আমরা সাবমিশনে বলেছি যে আর্মির তদন্ত আদালতের প্রতিবেদন অনুসারে ওটা আয়নাঘর ছিল না। অন্য কোনো জায়গা ছিল। যার কারণে এই ভুক্তভোগীকে আয়নাঘরে আটক রাখার জন্য এই আসামিদের কোনো দায় নেই।'
ট্রাইব্যুনালে আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু বলেন, '২১/১৭ ফুটের কক্ষে ছিলেন ব্রিগেডিয়ার আযমী। ওই কক্ষে দুটি দরজা, পাঁচটি জানালা, একটি খাট, একটি টেবিল ছিল। জানালাগুলো বন্ধ থাকতো। তবে একটি এসি ছিল। এছাড়া ওয়্যারড্রব, আলমারিও ছিল। অতএব এটি আয়নাঘর ছিল না। অন্য কোনো জায়গা ছিল।'
প্রসঙ্গত, শেখ হাসিনাসহ এই মামলার মোট আসামি ১৩ জন। তাদের মধ্যে এই তিন সেনা কর্মকর্তা গ্রেপ্তার রয়েছেন, বাকিরা পলাতক।
