বিএনপির প্রার্থী ঘোষণায় ‘একলা চলো’ নীতিতে এনসিপি
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতৃত্বে নিজস্ব জোট গঠনের উদ্যোগ থেমে যাওয়ার পর বিএনপির সঙ্গে সম্ভাব্য জোট নিয়ে জোর গুঞ্জন চলছিল। তবে বিএনপি জাতীয় নির্বাচনে আরও কিছু আসনে নতুন করে মনোনয়ন ঘোষণা করার পর এনসিপির সঙ্গে জোটের সম্ভাবনা অনেকটাই ক্ষীণ হয়ে পড়েছে।
এর আগে, দলটির মুখ্য সংগঠক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী 'মুজিববাদ ও মওদুদীবাদের কর্তৃত্ববাদী রাজনীতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম কোনো দল একা পারবে না। বিএনপি ও এনসিপি– গণতান্ত্রিক জাতীয়তাবাদী ধারার দুই শক্তির মধ্যে দায়িত্বশীল ঐক্য প্রয়োজন। … '
কিন্তু বৃহস্পতিবার বিএনপি আগের ঘোষিত ২৩৭ আসনের বাইরে নতুন করে আরও ৩৬ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি আসন এনসিপির শীর্ষ নেতাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার আলোচনায় থাকা আসনের সঙ্গে মিলে যায়।
জোটের জন্য সমঝোতার সুযোগ সীমিত হয়ে পড়ায় এনসিপি নেতারা জানান, তারা এখন স্বাধীনভাবে এগোচ্ছেন, তবে আলোচনার দরজা পুরোপুরি বন্ধ নয়।
এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমকে বলেন, দলের সঙ্গে এখনো কারও আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক সমঝোতা হয়নি। তিনি বলেন, "জনগণ নতুন সম্ভাবনা ও নতুন নেতৃত্ব চান, তাই এনসিপি স্বাধীনভাবে এগোচ্ছে। আমরা নিজেদের প্রস্তুতিতে মনোযোগী।"
তিনি আরও বলেন, "আমাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি আমরা নিজেরাই সামনে এগিয়ে নিচ্ছি। জোট গঠনে আগ্রহী নই—বরং তৃতীয় শক্তি তৈরির চেষ্টা চলছে। তবে প্রয়োজন হলে, জনগণের স্বার্থে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। পরিস্থিতি বিবেচনাতেই সব সিদ্ধান্ত।"
শুক্রবার সন্ধ্যায় এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমরা আপাতত কোনো বড় দলের সঙ্গে জোট আলোচনায় নেই। বিষয়টি নীতিগত। এখন আমাদের সব মনোযোগ ৩০০ আসনে প্রার্থী নির্বাচনে। প্রাথমিকভাবে ১০০–১৫০ আসনে দ্রুত মনোনয়ন দেওয়া হবে।"
তিনি আরও বলেন, "সংস্কার বিষয়ে বিএনপি ও জামায়াতের অবস্থান আমাদের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তারা অবস্থান পরিবর্তন করলে জোট আলোচনা এগোতে পারে। আপাতত আমরা 'একলা চলো' নীতিতে আছি।"
জোটের সম্ভাবনা একেবারে থিম যায়নি
এদিকে এনসিপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপির সঙ্গে জোট গঠনের সম্ভাবনা এখনো উড়িয়ে দিচ্ছেন না তারা। এনসিপি নেতাদের আশা, আলোচনা অগ্রসর হলে বিএনপি প্রার্থীর তালিকায় পরিবর্তন এনে আসন সমঝোতা করতে পারে।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "বিভিন্ন দলের সঙ্গে আলোচনা চলছে। বিএনপি কিছু আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে ঠিকই, তবে জোটের সিদ্ধান্ত হলে প্রার্থী তালিকায় পরিবর্তন আসতে পারে।"
এর আগে, গত বৃহস্পতিবার এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তাদের আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।
তিনি বলেন, "যারা সংস্কারের পক্ষে, জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষার পক্ষে এবং ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে মুসলিম সেন্টিমেন্ট ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির রাজনীতি ধারণ করতে পারবে—তাদের সঙ্গে জোটের পথ এখনো খোলা।"
সারজিস আলম আরও বলেন, "খুব শিগগিরই সমাধান দেখা যাবে। জোট ঘোষণার কথা ছিল, তবে আমরা মনে করি এর পরিধি আরও বিস্তৃত হওয়া প্রয়োজন। আশা করছি, শিগগিরই বড় আকারে জোট প্রকাশ করা যাবে।"
তিনি জানান, ডিসেম্বরের মধ্যেই ৩০০ আসনে মনোনয়ন চূড়ান্ত করতে চায় এনসিপি। "সৎ, যোগ্য, সচ্ছ্ব ধারার রাজনীতি করতে আগ্রহী মানুষদের মনোনয়ন দেওয়া হবে। জনগণের ভোটে তারা জিতলে সংসদে গিয়ে কাজ করবে," যোগ করেন তিনি।
বিএনপির ঘোষিত আসনে এনসিপি নেতাদের সম্ভাব্য ওভারল্যাপ
এর আগে ধারণা ছিল, এনসিপির শীর্ষ নেতারা নিজ নিজ এলাকায় বিএনপি প্রার্থীর মুখোমুখি হবেন না। তবে ৩ নভেম্বর বিএনপি ২৩৭ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করলে কয়েকটি আসনে এনসিপি নেতাদের সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি হয়।
সেই তালিকায় রয়েছে—ঢাকা-১১ (এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম), রংপুর-৪ (সদস্য সচিব আখতার হোসেন), কুমিল্লা-৪ (দক্ষিণাঞ্চল মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ), পঞ্চগড়-১ (উত্তরাঞ্চল মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম) ও নোয়াখালী-৬ (সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদ)।
গত বৃহস্পতিবার রাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দ্বিতীয় দফায় প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর মধ্যে ঢাকার কয়েকটি আলোচিত আসনও রয়েছে—যেখানে এনসিপির হেভিওয়েট নেতাদের নির্বাচন করার গুঞ্জন ছিল, যেমন ঢাকা-৭, ঢাকা-৯, ঢাকা-১০ ও ঢাকা-১৮।
সবুজবাগ–খিলগাঁও–মুগদা নিয়ে গঠিত ঢাকা-৯ আসনে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা। সেখানে বিএনপি হাবিবুর রশিদকে প্রার্থী করেছে।
এছাড়া ঢাকা-১০ আসনও আলোচনায় ছিল, যেখানে নির্বাচন করতে আগ্রহী অন্তর্বর্তী সরকারের ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে থাকা উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। প্রথম দফায় বিএনপি আসনটি ফাঁকা রাখায় তাকে ঘিরে জোট হওয়ার সম্ভাবনা আরও জোরালো হয়।
তবে দ্বিতীয় দফার তালিকায় ঢাকা-১০ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন শেখ রবিউল আলম। আসিফ কোনো দলের হয়ে লড়বেন নাকি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে—বিষয়টি তিনি গণমাধ্যমে স্পষ্ট করেননি।
প্রার্থী তালিকা প্রকাশের সময় মির্জা ফখরুল বলেন, বাকি আসনগুলো সহযোগী দলগুলোর জন্য রাখা হয়েছে। "ঘোষিত আসন পরিবর্তনের সম্ভাবনা খুবই কম, বলে মন্তব্য করেন তিনি।
