নির্বাচিত হলে সংসদে সারা দেশের হিন্দুদের প্রতিনিধিত্ব করবো: জামায়াত প্রার্থী কৃষ্ণ নন্দী
খুলনা-১ আসনে প্রার্থী পরিবর্তন করে চমক দেখিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। বটিয়াঘাটা ও দাকোপ উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনে দলটির নতুন প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হয়েছেন ডুমুরিয়া উপজেলা জামায়াতের হিন্দু কমিটির সভাপতি কৃষ্ণ নন্দী। মনোনয়ন পাওয়ার পর তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, নির্বাচিত হতে পারলে জাতীয় সংসদে গিয়ে শুধু খুলনা-১ আসন নয়, সারা বাংলাদেশের হিন্দুদের প্রতিনিধিত্ব করবেন।
বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) দুপুরে ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগরে নিজ বাড়িতে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
সাক্ষাৎকারে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, 'আমার নির্বাচনের মূল উদ্দেশ্যই হলো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়া। আমি একজন হিন্দু হওয়া সত্ত্বেও জামায়াত আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে এটা আমার জন্য অত্যন্ত আনন্দের এবং ভালো লাগার বিষয়। যেহেতু জামায়াতে ইসলামী একটি সুশৃঙ্খল দল, তাই তাদের কমিটমেন্ট এবং নিয়ম-কানুনের মধ্য থেকেই আমি নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করব'।
বিজয়ের ব্যাপারে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, 'এলাকাটি হিন্দু অধ্যুষিত হওয়ায় আমি বিপুল পরিমাণ ভোট পাব বলে আশা রাখি। একইসঙ্গে জামায়াতের প্রার্থী হওয়ায় মুসলমানদের ভোটও সমানভাবে পাবো'।
হিন্দু প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়ে খুলনা জেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মুন্সী মিজানুর রহমান বলেন, 'আমাদের গঠনতন্ত্রে বলা আছে সকল ধর্মের মানুষ আমাদের সদস্য হতে পারবেন। আর যিনি সদস্য হতে পারবেন, তিনি নির্বাচনে প্রার্থীও হতে পারবেন। এবারের নির্বাচনে আমাদের আমীর হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ও চাকমা সম্প্রদায়ের ব্যক্তিদেরও দল থেকে প্রার্থিতা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় খুলনায় হিন্দু প্রার্থী দেওয়া হলো। তার পক্ষে নির্বাচন পরিচালনার জন্য ইতিমধ্যে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে'।
ব্যবসায়ী কৃষ্ণ নন্দীর গ্রামের বাড়ি ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগরে। গত এক বছর ধরে খুলনা-৫ আসনের (ডুমুরিয়া ও ফুলতলা) জামায়াত প্রার্থী ও দলের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারের বিভিন্ন রাজনৈতিক সমাবেশে তাকে সক্রিয় দেখা গেছে। তার নেতৃত্বে প্রতিটি সমাবেশে সনাতন ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
খুলনা-১ আসনটি বরাবরই আওয়ামী লীগের 'ঘাঁটি' হিসেবে পরিচিত। এই আসনে ১৯৯১ সালের পর ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির একতরফা নির্বাচন ছাড়া বিএনপি কখনোই জিততে পারেনি। আসনটিতে একসময় বাম দলের প্রভাব থাকলেও জামায়াতের অবস্থান সবসময় দুর্বল ছিল, তবে সাম্প্রতিক সময়ে দলটির সাংগঠনিক কার্যক্রম বেড়েছে।
ঐতিহাসিকভাবে এই আসনে সংখ্যালঘু প্রার্থীরাই বেশি জয়লাভ করেছেন। ১৯৭৩ সালে (তৎকালীন খুলনা-৫) কুবের চন্দ্র বিশ্বাস, পরবর্তীতে প্রফুল্ল কুমার শীল, পঞ্চানন বিশ্বাস এবং ননী গোপাল মণ্ডল এখান থেকে এমপি নির্বাচিত হন। সবশেষ ২০২৪ সালেও এখান থেকে জয়ী হন ননী গোপাল মণ্ডল। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এই আসনে জামায়াতের হিন্দু প্রার্থী দেওয়ার কৌশল ভোটের মাঠে নতুন সমীকরণ তৈরি করতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।
