ঢাকায় নির্বাচন কমিশনের ‘মক ভোটিং’ অনুষ্ঠিত
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে সামনে রেখে ঢাকায় 'মক ভোটিং' আয়োজন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
আজ শনিবার (২৯ নভেম্বর) সকাল ৮টা থেকে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে শুরু হওয়া ভোটের এ মহড়া বেলা ১২টায় শেষ হয়। নারী-পুরুষ মিলে মোট ৫১০ জন ভোটার এতে অংশ নেন।
সকাল ৮টায় কেন্দ্র পরিদর্শনে এসে ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, "জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট যেহেতু একদিনেই অনুষ্ঠিত হবে, তাই পুরো প্রক্রিয়া আরও দক্ষভাবে সম্পন্ন করতে আগেই অভিজ্ঞতা ঝালাই করে নিচ্ছি।"
কেন্দ্রের ভেতরে ভোটাররা লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেন। নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা ভোটকক্ষ রাখা হয়।
ভোট দিয়ে বেরিয়ে একজন ভোটার মৌসুমি তানিয়া বলেন, "গণভোট প্রথম দিলাম, ভোটও দিলাম। তবে গণভোটের প্রচার আরও প্রয়োজন।"
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওয়াকারুজ্জামান নামের আরেক ভোটার বলেন, "একেবারে সহজ লেগেছে ভোট দিতে। এখন ইন্টারনেটে অনেক বিষয় জানা যায়, প্রশ্নগুলো আগে থেকেই জেনেছি, তাই গণভোট দিতে সম্যা হয়নি।"
শেরেবাংলা নগর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে মোট চারটি বুথে ভোটগ্রহণ করা হয়েছে। প্রথম ঘণ্টায় চার বুথে যথাক্রমে ২৩, ৩৭, ২৬ ও ২১ জন ভোট দিয়েছেন বলে জানান সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার।
ভোটারদের অনেকেই জানান, মাত্র এক মিনিটের মধ্যেই ভোট দিতে পেরেছেন।
ভোটার শহিদুল আলম সংসদ নির্বাচনের ব্যালটে 'মার্কা'য় ভোট দিয়েছেন সহজেই। তবে গণভোটে 'হ্যাঁ/না' ভোট বুঝে নিতে কিছুটা সময় লেগেছে।
তিনি বলেন, "গণভোট নিয়ে ব্যাপক প্রচারণা দরকার। গোলাপি রঙের ব্যালটে কী লেখা আছে—ছোট লেখা হওয়ায় খেয়াল পড়তে পারিনি। একটা টিক আর ক্রস—একটায় সিল মেরে দিলাম। এ বিষয়ে প্রচারণা বাড়ানো উচিত।"
প্রিজাইডিং অফিসার বলেন, "ভোট ব্যবস্থাপনা নির্বিঘ্নে করা সম্ভব হয়েছে। ভোটার সিরিয়াল জানানো থেকে কেন্দ্রের ভিতরে পৌঁছে দেওয়া, গোপন কক্ষে ভোট দেওয়ার আগে ভোটার তালিকা যাচাই, ব্যালট সরবরাহ, সিল ও কালির ব্যবস্থা—সব মিলিয়ে প্রতি ভোটারের প্রায় এক মিনিট সময় লাগছে।"
মক ভোটিং চলাকালে শেরেবাংলা নগর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভোটারদের ভিড় ছিল। সাংবাদিকদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো।
ভোট শুরুর এক ঘণ্টা পর কেন্দ্র পরিদর্শনে আসেন নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।
তিনি কেন্দ্রের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং ভোট দিতে কত সময় লাগে সেটি নিজেই তদারকি শুরু করেন। পুরুষ ও নারী কেন্দ্রের জন্য ২০ জন করে ভোটার বেছে নিয়ে নতুন করে মক ভোটিং শুরু করার নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, "লাইন থেকে ভোট দেওয়া পর্যন্ত মোট কত সময় লাগে—এটা জানা খুব জরুরি। এই সময়ের ওপর ভিত্তি করেই ঠিক করতে হবে বুথের সংখ্যা ঠিক আছে কিনা, গোপন কক্ষ বাড়াতে হবে কিনা, ভোটকেন্দ্র বাড়ানো প্রয়োজন কিনা। শুধু আনুষ্ঠানিকতার জন্য নয়, এই কাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এভাবে হযবরল থাকলে কোনো লাভ নেই।"
তিনি ভোটার ছাড়া অন্যদের সাময়িকভাবে দূরে থাকতে অনুরোধ জানান, যাতে মক ভোটিং ঠিকভাবে চালানো যায়।
মক সাংবাদিক, মক পর্যবেক্ষক ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের নিয়ে পুনরায় মক ভোটিং পরিচালিত হয়।
বেলা ১০টা ১৫ মিনিটে মক ভোটিং দেখতে কেন্দ্রে পৌঁছান প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)।
এর আগে, গত মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) অনুশীলনমূলক এই ভোটগ্রহণের কথা টিবিএসকে নিশ্চিত করে ইসির জনসংযোগ দপ্তর।
ইসি সূত্র জানায়, সত্যিকারের নির্বাচনের মতোই ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, পোলিং এজেন্ট ও ভোটার থাকবেন এই মক ভোটিংয়ে। নিয়ম অনুযায়ী ভোটাররা লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেবেন। তবে রাজনৈতিক দল, প্রার্থী বা প্রতীকের নাম থাকবে না। ভোটগ্রহণ থেকে ফলাফল প্রকাশ—সব আনুষ্ঠানিকতাই পালন করা হবে।
মক ভোটিংয়ের মাধ্যমে একজন ভোটার ভোট দিতে গিয়ে কী ধরনের সমস্যার মুখে পড়তে পারেন, একজন ভোটারের ভোট দিতে কত সময় লাগে, ভোটকেন্দ্র পরিচালনায় কী ধরনের ব্যবস্থা প্রয়োজন—এসব বিষয় সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করবেন নির্বাচন কমিশনাররা। পাশাপাশি বয়স্ক, গর্ভবতী নারী ও শারীরিক প্রতিবন্ধী ভোটারদের জন্য কী ধরনের বিশেষ ব্যবস্থা প্রয়োজন, তাও পরীক্ষা করা হচ্ছে।
এই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটে কতজন ভোটারের জন্য একটি ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষ নির্ধারণ করা হবে, সে সম্পর্কেও সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে।
