মনোনয়ন ঘিরে অসন্তোষ, দেশজুড়ে বিএনপির অন্তর্কোন্দল বাড়ছে
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছেন দলটির নেতাকর্মীরা। প্রাথমিকভাবে ঘোষিত প্রার্থী ও বঞ্চিত প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে এসব সংঘর্ষ হচ্ছে।
এছাড়া আধিপত্য বিস্তার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল, কমিটি ঘোষণা, খেলাধুলা এবং দলীয় কর্মসূচি ঘিরেও নানা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। এতে বিএনপির বহু নেতাকর্মী আহত হচ্ছেন।
এদিকে, দলের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে বিএনপি। বিশৃঙ্খলায় জড়িত থাকার অভিযোগে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক পদক্ষেপও নেওয়া হচ্ছে।
২৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় রাজশাহী-১ আসনের তানোর উপজেলায় মনোনয়নঘিরে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় উভয়পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হন। বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন পাওয়া শরীফ উদ্দিন ও মনোনয়নবঞ্চিত সুলতানুল ইসলাম তারেকের অনুসারীদের মধ্যে এ সংঘর্ষ ঘটে।
টাঙ্গাইল-১ আসনে মনোনয়নকে কেন্দ্র করে ১৯ নভেম্বর মধুপুর পৌরশহরে স্বপন ফকির ও মনোনয়নবঞ্চিত মোহাম্মদ আলীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় দুটি বেসরকারি ক্লিনিক ভাঙচুর, একটি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া এবং অন্তত তিনজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়।
নোয়াখালী-৬ আসনে মনোনয়ন বিরোধে ২২ নভেম্বর হাতিয়ার ওছখালী এলাকায় বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা ও সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত ২০ জন আহত হন। স্থানীয় সূত্র জানায়, বিএনপির মনোনীত প্রার্থী সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবের রহমান শামীম এবং সাবেক সংসদ সদস্য ফজলুল আজিমের অনুসারীদের মধ্যে এই সংঘর্ষ ঘটে।
এছাড়া নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে আধিপত্য বিস্তার, ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালন, নোয়াখালী সদরে ফুটবল খেলা এবং চট্টগ্রামের রাউজানসহ বিভিন্ন স্থানে দলটির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস)–এর তথ্যে জানা গেছে, চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ৪৩২টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ৪,০৬৫ জন আহত এবং ৭০ জন নিহত হয়েছেন।
এর আগে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী টিবিএসকে বলেন, সংঘর্ষ বা বিশৃঙ্খলার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, অনেককে ইতোমধ্যে বহিষ্কারও করা হয়েছে।
তিনি বলেন, "নেতাকর্মীদের নিজস্ব পছন্দ থাকতে পারে, দল যাকে মনোনয়ন দেবে তাকে নিয়ে আপত্তি থাকতে পারে। কিন্তু প্রকাশ্যে রাস্তা বা রেললাইন অবরোধ করার অধিকার কারও নেই। যারা এসব করছে, তাদের বিরুদ্ধে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকবে।"
এদিকে, অভ্যন্তরীণ বিরোধ নিরসনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের পৃথকভাবে দায়িত্ব দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি মনোনয়নবঞ্চিতদের সঙ্গেও কথা বলছেন। আলোচনায় দলের ঐক্য বজায় রাখা, দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে চলা এবং নীতিমালা অনুসরণ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
