লটারিতে ৬৪ জেলার পুলিশ সুপার চূড়ান্ত
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যে দেশের ৬৪ জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) চূড়ান্ত করেছে সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তাদের পদায়ন করা হবে।
সোমবার (২৪ নভেম্বর) সকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আয়োজিত এক লটারি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই কর্মকর্তাদের বাছাই করা হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তরের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের প্রেস উইংয়ের অন্তত তিনজন সদস্যের কাছে জানতে চাওয়া হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
লটারি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী জানান, সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে প্রতিটি জেলায় নিরপেক্ষ কর্মকর্তা নিয়োগ করাই ছিল সরকারের মূল লক্ষ্য।
তিনি বলেন, 'পদায়ন নিয়ে যাতে কোনো প্রশ্ন না ওঠে, সে কারণে উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্বচ্ছ লটারির মাধ্যমেই এসপি নির্বাচন করা হয়েছে। খুব দ্রুত তাদের পদায়নের প্রক্রিয়া শুরু হবে।'
বাছাই প্রক্রিয়া ও ক্যাটাগরি
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, এসপি নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রথমেই অতীতে এসপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন—এমন কর্মকর্তাদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। এরপর পুলিশ ক্যাডারের ২৫, ২৭ ও ২৮তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে যাচাই–বাছাই শেষে একটি 'ফিট লিস্ট' প্রস্তুত করা হয়।
পদায়নের ক্ষেত্রে জেলাগুলোর গুরুত্ব, আয়তন, উন্নত অবস্থা এবং ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনা করে এ, বি ও সি—এই তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়। এরপর প্রস্তুতকৃত তালিকায় থাকা কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে ম্যানুয়াল লটারির মাধ্যমে ৬৪ জনকে চূড়ান্ত করা হয়। পর্যায়ক্রমে তাদের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হবে।
রদবদল ও নতুন নিয়োগ
সূত্রটি আরও জানায়, নতুন এই তালিকায় বর্তমানে দায়িত্বে থাকা ৫০ জেলার পুলিশ সুপারকে বহাল রাখা হলেও তাদের ভিন্ন জেলায় বদলি করা হয়েছে। এছাড়া ১৪টি জেলা থেকে বিদ্যমান পুলিশ সুপারদের প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং তাদের স্থলাভিষিক্ত হিসেবে ১৪ জন নতুন কর্মকর্তাকে তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে। নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে ৪ জন বিসিএস ২৫তম ব্যাচের এবং বাকি ১০ জন ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তা।
লটারির সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তা, পুলিশের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিদর্শক (আইজি) এবং প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
স্থগিতাদেশ ও পটভূমি
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ অনুযায়ী যোগ্য কর্মকর্তাদের তালিকা কমিটির কাছে হস্তান্তর করা হয় এবং লটারির মাধ্যমে জেলাওয়ারি পদায়ন চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ সিদ্ধান্তের কারণে গত সপ্তাহে ৬ জেলায় নতুন এসপি নিয়োগের যোগদান স্থগিত রাখা হয়েছিল; তাদের ক্ষেত্রেও এখন লটারির সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।
থানার ওসি নিয়োগও হবে লটারিতে
এসপি পদায়নের পর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিয়োগও লটারির ভিত্তিতে সম্পন্ন করা হবে বলে পুলিশ সদর দপ্তরের আরেকটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। এরই মধ্যে ইউনিট প্রধানদের কাছ থেকে সৎ, নিরপেক্ষ ও যোগ্য পরিদর্শকদের তালিকা সংগ্রহ করে একটি 'ফিট লিস্ট' তৈরি করা হয়েছে। পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির জট খোলার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।
এর আগে গত রোববার বিকেল ৪টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত দুই ঘণ্টার বৈঠকে নির্বাচনী সময়ে পুলিশের নিয়োগ ও বদলি–সংক্রান্ত নীতিমালা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সেই আলোচনার ধারাবাহিকতাতেই সোমবার লটারি করে ৬৪ জেলার এসপি নির্বাচন সম্পন্ন হলো।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশ সদর দপ্তরের এক পদস্থ কর্মকর্তা বলেন, 'নির্বাচনকেন্দ্রিক পুলিশিং নিয়ে কোনো ধরনের বিতর্ক এড়াতেই লটারির পদ্ধতি বেছে নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে মাঠপর্যায়ে নিরপেক্ষ কর্মকর্তা নিয়োগ নিশ্চিত হবে।'
