জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত সংস্থা: চিফ প্রসিকিউটর
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) প্রধান কৌঁসুলি মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেছেন, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসান গত আওয়ামী লীগের শাসনামলে শত শত মানুষকে গুমের পর হত্যা করেছেন। একইসঙ্গে তাদের পেট কেটে নদীনালা ও খাল-বিলে লাশ ফেলে দিয়েছেন। এর শক্তিশালী প্রমাণ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশনের কাছে রয়েছে।
তিনি বলেন, "জিয়াউলের বিরুদ্ধে অসংখ্য তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে তদন্ত সংস্থা। তিনি শত শত মানুষকে গুমের পর হত্যা করেছেন। একইসঙ্গে তাদের পেট কেটে নদীনালা ও খাল-বিলে লাশ ফেলে দিয়েছেন। এমন অসম্ভব শক্তিশালী প্রমাণ আমাদের কাছে আছে। এ ধরনের খুনি বা দুধর্ষ আসামির বিরুদ্ধে সব অভিযোগের ব্যাপারে তদন্ত সংস্থাকে নিজের মতো করেই মোকাবিলা করতে দিতে হবে।"
আজ রোববার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে গুমের দায়ে জিয়াউল আহসানের মামলার প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন চিফ প্রসিকিউটর।
জিয়াউল আহসানের বোন নাজনীন নাহার আজ ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন, যাতে জিয়াউলকে এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাঁকে এবং আসামির আইনজীবীকে উপস্থিত থাকার অনুমতি দেওয়া হয়। এছাড়া তিনি আরো একটি আবেদন করেন। এনিয়ে শুনানির সময় নাজনীন নাহারের সাথে প্রসিকিউশনের কিছুটা উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় তদন্ত এখনো চলমান। এ মামলার ১১ আসামির মধ্যে ৪ আসামির নাম প্রকাশ করা হয়েছে। তাঁরা হলেন ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও জিয়াউল আহসান। বাকি আসামিদের নাম প্রকাশ করা হয়নি। আগামী ১১ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনালে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য রয়েছে।
রোববারের সংবাদ ব্রিফিংয়ে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, আদালতের কাছে যেকোনো আবেদন করতে হলে আইন-বিধান বা ধারা উল্লেখ করতে হবে। কিন্তু আইনজীবীকে দিয়ে একটা ঢালাও আবেদন করেছেন জিয়াউল। কখনও বলছেন, আমার ফোনের কল রেকর্ড-ম্যাসেজ পেতে চাই, যার এ মামলার সঙ্গে সম্পর্ক নেই। এছাড়া তার মামলায় এখন পর্যন্ত অভিযোগপত্র দাখিল হয়নি। তাহলে তিনি এসব পেতে হলে ভিন্ন ফোরামে যাবেন। অথচ যেকোনো কিছুর জন্য তিনি ট্রাইবুনালের কাছে আসছেন, যা আইনের বিধানের বাইরে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় একই কক্ষে নিজের আইনজীবীর উপস্থিত থাকা নিয়ে আরেকটি আবেদন করেছেন।
এ আইন নিয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের সময় তদন্তকারী কর্মকর্তার সামনে আইনজীবীকে বসে থাকার কোনো বিধানই আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনে নেই। কিন্তু স্বচ্ছতার স্বার্থে একজন আসামিকে যখন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, তখন পার্শ্ববর্তী কোনো কক্ষে উপস্থিত থাকার অনুমতি দিয়ে থাকেন এই আদালত। ২০১০ সালে ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই নিয়মটি মানা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় প্রয়োজন হলে আসামির সঙ্গে দেখা করতে পারবেন আইনজীবী। পাশাপাশি একজন ডাক্তারকেও রাখা হয় যেন অসুস্থতা বোধ করলে চিকিৎসা দেওয়া যায়। আইনে না থাকলেও ন্যায়বিচারের স্বার্থে এসব করেন আদালত। কিন্তু উনি (আইনজীবী) বলতে চাচ্ছেন, জিজ্ঞাসাবাদের সময় আসামির পাশে বসে থাকবেন, যা বাস্তবসম্মত নয়।
চিফ প্রসিকিউটর আরও বলেন, আইনজীবী হলেও সম্পর্কে আসামির বোন হন তিনি (নাজনীন নাহার)। এখানে জিয়াউলকে জিজ্ঞাসাবাদের মূল উদ্দেশ্যই তথ্য উদ্ঘাটন করা। তবে তার আইনজীবী পাশে থাকলে বিঘ্ন সৃষ্টি হবে। সেজন্য তদন্ত সংস্থা বলেছে, তার সামনে বা মুখোমুখি রাখতে পারবেন না। এছাড়া তিনি (আইনজীবী) আরও কিছু বিষয় উত্থাপন করেছেন। অর্থাৎ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কে উপস্থিত থাকবে, কে থাকবে না। আমরা খুব সুস্পষ্টভাবে দেখিয়েছি যে জিজ্ঞাসাবাদের স্বার্থে তদন্তকারী কর্মকর্তা যাকে প্রয়োজন মনে করবেন, তাকেই পাশে রাখতে পারবেন। অনেক সময় আসামিদের কাছ থেকে তথ্য উদ্ঘাটনের জন্য ভুক্তভোগীদের মুখোমুখি করা হয়, যেন সত্য বলতে বাধ্য হন আসামি।
তদন্তকাজকে বিঘ্নিত করার চেষ্টা চলছে জানিয়ে তাজুল বলেন, সব সময় সিনক্রিয়েট করার চেষ্টা করেন তিনি। তদন্তের কাজগুলোকে বিঘ্নিত করতে আননেসেসারি অ্যাপ্লিকেশন দিয়ে কোর্টের সময় নষ্ট করার চেষ্টা করেন। এসব বিষয় আমরা আদালতে তুলে ধরেছি যে এগুলো বিচারপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার শামিল। একইসঙ্গে জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে যেসব প্রমাণ এসেছে তাও জানিয়েছি। কারণ একক ব্যক্তি হিসেবে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক অপরাধের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। সুতরাং এসব বিষয় যতটুকু সম্ভব সতর্কতার সঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদের ব্যাপারে আইন অনুযায়ী যেন তদন্ত সংস্থা ভোগ করতে পারে— সেটা আমরা আদালতকে বলেছি।
