দেশে ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্প: দুই শিশুসহ নিহত ১০, আহত শতাধিক
শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে নরসিংদী সদর ও পলাশ উপজেলার মধ্যবর্তী এলাকায় আঘাত হানা ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
নিহতদের মধ্যে নরসিংদীতে বাবা-ছেলেসহ পাঁচজন, ঢাকায় চারজন এবং নারায়ণগঞ্জে একজনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে দুইজন শিশু।
ঢাকায় চারজনের মৃত্যু
জানা যায়, শুক্রবার রাজধানীর পুরান ঢাকার আরমানিটোলার কসাইটুলি এলাকায় ভূমিকম্পের সময় একটি ভবনের রেলিং ধসে পড়ে তিনজন পথচারী নিহত হন। এই ঘটনায় আরও একজনের অবস্থা গুরুতর। এছাড়া, মুগদা মদিনাবাগে নির্মাধীন ভবনের রেলিং ধসে পড়ে ভবনের নিরাপত্তাকর্মী মাকসুদ নিহত হয়েছেন।
নিহত চারজনের মধ্যে তিনজনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন- রাফিউল ইসলাম (২১) সবুজ (৩০), মাকসুদ (৫০) ও একজন অজ্ঞাত।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) লালবাগ ডিভিশনের ডেপুটি কমিশনার মল্লিক আহসান উদ্দিন সামি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে (টিবিএস)- বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, 'ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স উদ্ধারকারী দলের পক্ষ থেকে আমাদের জানানো হয়েছে, আরমানিটোলার কসাইটুলিতে একটি পাঁচতলা ভবন থেকে রেলিং, বাঁশের ভারা ও ধ্বংসস্তূপ পথচারীদের ওপর ধসে পড়ায় কমপক্ষে ৩ জন নিহত হয়েছেন। আরও একজন গুরুতর অবস্থায় রয়েছেন।'
নিহত রাফিউল স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের বায়ান্ন ব্যাচের শিক্ষার্থী। মরদেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, ভূমিকম্পের সময় হঠাৎ পাঁচতলা ভবনের রেলিং ধসে পড়ে তিনজন পথচারী ঘটনাস্থলেই নিহত হন। নিহতরা সড়ক দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত হন।
সকালে মায়ের সঙ্গে মাংস কিনতে বাজারে গিয়েছিলেন সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালের ৫২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রাফিউল। বংশালের কসাইটুলিতে নয়নের মাংসের দোকানের সামনে দাড়িয়ে ছিলেন তারা। হঠাৎ ভূমিকম্প শুরু হলে দোকানের ভবনটির রেলিং ভেঙে পড়ে তাদের ওপর।
আশপাশের লোকজন দৌড়ে এসে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে গেলে চিকিৎসকরা জানান, রাফিউল মারা গেছেন।
আর রাফিউলের মাকে অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয়েছে। সেখানে তার চিকিৎসা চলছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, মা জানেনই না রাফি আর নেই। তিনি বারবার ছেলের কথা জিজ্ঞাসা করছেন।
মুগদা মদিনাবাগে নির্মাধীন ভবনের রেলিং ধসে পড়ে ভবনের নিরাপত্তাকর্মী মাকসুদ (৫০) নিহত হয়েছেন। নিহতের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলায়।
ভূমিকম্পে ঢাকায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে চারজন হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ঢাকার জেলা প্রাশসক মো: রেজাউল করিম।
নরসিংদীতে পাঁচজন নিহত
প্রাথমিক তথ্যমতে, ভূমিকম্পে আতঙ্কিত হয়ে হুড়োহুড়ি করে উঁচু ভবন থেকে নামতে গিয়ে জেলার বিভিন্ন স্থানে শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন এবং এখন পর্যন্ত চারজন নিহত হয়েছেন।
নিহতরা হলেন- কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার উত্তরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন (৩৭) ও তার ছেলে ওমর ফারুক (৮), পলাশ উপজেলার বাসিন্দা কাজম আলী ভূঁইয়া (৭০) ও নাসির উদ্দিন (৫০) এবং শিবপুর উপজেলার বাসিন্দা ফুরকান মিয়া (৪২)।
স্থানীয়রা জানায়, আজ সকালের ভূমিকম্পে নরসিংদীর সদর উপজেলার গাবতলী এলাকার একটি নির্মাণাধীন সাত তলা ভবনের ছাদ থেকে ইট পড়ে দেলোয়ার, তার ছেলে ওমর ফারুক ও অজ্ঞাত আরেকজন আহত হন। গুরুতর আহত ওমর ফারুক ও দেলোয়ার হোসেনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে তাদের মৃত্যু হয়।
এছাড়া, পলাশ উপজেলার মাটির ঘরের নিচে চাপা পড়ে মালিতা গ্রামের কাজম আলী ভূঁইয়া নামের এক বৃদ্ধ মাটির ঘরের নিচে চাপা পড়েন এবং পরবর্তীতে তাকে জেলা হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান।
পলাশ উপজেলার ডাংগা ইউনিয়নের ইসলামপাড়া নয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা নাসিরউদ্দিন (৬০) ভূমিকম্পের সময় ফসলী জমি থেকে আতঙ্কিত হয়ে দৌড়ে আসার পথে রাস্তা থেকে নিচে লাফ দিয়ে পড়ে মারা যান (স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্যমতে)। তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে মৃত্যুবরণ করায় নিকটাত্মীয়রা তার লাশ হাসাপাতালে নেননি।
এছাড়া, শিবপুর উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের গআজকিতলা (পূর্বপাড়া) গ্রামের ফোরকান (আনুমানিক ৪০) কম্পনের ফলে গাছ থেকে পড়ে যান এবং তাৎক্ষণিক নরসিংদী জেলা হসপিটালে নিলে চিকিৎসক তাকে ঢামেকে রেফার্ড করেন। ঢাকায় নেওয়ার পথে রাস্তায় মারা যান তিনি।
রূপগঞ্জে ভূমিকম্পে দেয়াল চাপায় এক শিশু নিহত, আহত ২
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ভুমিকম্পে দেয়াল ধসে ফাতেমা নামে এক নবজাতক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ সময় শিশুর মা কুলসুম বেগম ও প্রতিবেশী জেসমিন আহত হন।
নিহত ফাতেমা গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের ইসলামবাগ ৫ নম্বর ক্যানেল এলাকার আব্দুল হকের মেয়ে।
স্থানীয়রা জানান, সকালে ভুমিকম্পের সময় ঘটনাস্থল হয়ে ভুলতা গাউছিয়া যাচ্ছিলেন তারা। এ সময় সড়কের পাশের দেয়াল ধসে পরে তাদের উপর। দেয়ালের নিচে চাপা পড়ে শিশু ফাতেমা, তার মা কুলসুম ও প্রতিবেশী জেসমিন।
এতে ঘটনাস্থলেই শিশু ফাতেমার মৃত্যু হয়। পরে দেয়ালের নিচ থেকে শিশু ফাতেমার মরদেহ ও আহতদের উদ্ধার করে প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করে।
ভুলতা পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মোখলেসুর রহমান জানান, ভুমিকম্পে দেয়াল ধসে এক শিশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। শিশুটির মা ও প্রতিবেশী আহত হয়েছে।
এদিকে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক আনঅফিশিয়াল ব্রিফিংয়ে জানায়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ১০ জন আহত, তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৭২, শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫৩, নরসিংদী জেলা হাসপাতাল আহত ৪৫ ও ১০০ বেড হাসপাতালে ১০ আহত চিকিৎসা নিতে এসেছেন।
এদের মধ্যে, বেশিরভাগকেই প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তবে অবস্থা গুরুতর হওয়ার বেশ কয়েকজনকে ভর্তি ও অন্যান্য হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে।
শুক্রবার সকাল ১০-১০:৪০ মিনিটের দিকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
কম্পন টের পেয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আতঙ্কে ঘর ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসেন মানুষ।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৭। তবে, মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) বলছে, ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৫; কেন্দ্রস্থল ছিল নরসিংদীর পশ্চিম–দক্ষিণ-পশ্চিমে ১৪ কিলোমিটার দূরে।
পাশের দেশ ভারতেও এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। দেশটির গণমাধ্যম সংস্থা এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতাসহ আশপাশের কয়েকটি এলাকায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
