অনাত্মীয় ‘ইমোশনাল ডোনার’ও এবার অঙ্গ দান করতে পারবেন
মানব অঙ্গ প্রতিস্থাপন অধ্যাদেশ ২০২৫ জারি করেছে সরকার। এর মাধ্যমে ১৯৯৯ সালের মানব অঙ্গ প্রতিস্থাপন আইনকে রহিত করা হয়েছে। নতুন এই আইনে প্রথমবারের মতো রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও সহানুভূতির সম্পর্ক রয়েছে—এমন ব্যক্তিদের 'ইমোশনাল ডোনার' হিসেবে অঙ্গ দানের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
এ ধরনের দাতার যোগ্যতা যাচাইয়ে একটি জাতীয় কমিটি কাজ করবে। নতুন আইনে অঙ্গ বেচাকেনার ক্ষেত্রে কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে—এ অপরাধে দোষী প্রমাণিত হলে দুই থেকে তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে।
অধ্যাদেশটি গত বুধবার (১৯ নভেম্বর) আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও সংসদ শাখা গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে।
নতুন অধ্যাদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, অঙ্গ সংযোজন ও প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে ১৯৯৯ সালের আইনের বিধান ছিল অপ্রতুল।
দেশে প্রতি বছর প্রায় ৪০ হাজার মানুষের কিডনি বিকল হয় এবং এর একটি বড় অংশের কিডনি প্রতিস্থাপন প্রয়োজন হয়। কিন্তু আইনি জটিলতার কারণে অনেকে প্রতিস্থাপন করতে পারেন না। বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন এই আইনের সংশোধন কিডনি গ্রহীতাদের জন্য প্রতিস্থাপন–সংক্রান্ত জটিলতা কমাবে।
অঙ্গ প্রতিস্থাপনকে আরও সহজ করতে অধ্যাদেশে তিনটি বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। এখন থেকে নিকট আত্মীয়দের মধ্যে ভাগনে–ভাগনি, ভাতিজা–ভাতিজি ও সৎ ভাই–বোনও অঙ্গ দান করতে পারবেন। আত্মীয় না হলেও স্বাপ প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে এক দাতা–গ্রহীতা জুটি অন্য জুটির সঙ্গে অঙ্গ বিনিময় করতে পারবে, যদি কোনো একটি জুটির জীবিত দাতার অঙ্গ অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।
তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হলো ইমোশনাল ডোনার ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে নিকট আত্মীয় না হলেও দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠতা বা সহানুভূতিগত সম্পর্ক থাকলে কোনো ব্যক্তি অঙ্গ দান করতে পারবেন।
ইমোশনাল ডোনার হতে হলে বয়স ১৮ বছরের বেশি হতে হবে, মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে হবে এবং সজ্ঞানে ও স্বেচ্ছায় সম্মতি দিতে হবে। কোনো আর্থিক প্রলোভন, চাপ বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য থাকা যাবে না। গ্রহীতার নিকট আত্মীয় না হলেও দীর্ঘদিনের পরিচিত হতে হবে এবং তাকে নিঃস্বার্থ দাতা হিসেবে নির্ধারণ ও অনুমতি প্রদান কমিটির সুপারিশ থাকতে হবে।
মাদকাসক্ত ব্যক্তি, বাণিজ্যিক বা আর্থিক প্রলোভনে অঙ্গ দানে আগ্রহী ব্যক্তি এবং যে কোনো রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি—যা তাকে দাতা হিসেবে অনুপযুক্ত প্রমাণ করে—তারা ইমোশনাল ডোনার হতে পারবেন না।
ইমোশনাল ডোনার নির্ধারণ ও অনুমতি প্রদানের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হবে। এই কমিটির সভাপতি হবেন বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ–উপাচার্য। সদস্য হিসেবে থাকবেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, পুলিশ সদর দপ্তরের একজন প্রতিনিধি (পুলিশ সুপার পদমর্যাদার নিচে নয়), জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের একজন অধ্যাপক এবং সরকার মনোনীত একজন মানবাধিকারকর্মী। সদস্য–সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা শাখার যুগ্মসচিব।
গেজেটে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির তত্ত্বাবধানে অঙ্গ প্রতিস্থাপনে আগ্রহী বা সম্মত দাতা–গ্রহীতার তথ্যসম্বলিত একটি জাতীয় রেজিস্টার সংরক্ষণ করা হবে।
ইমোশনাল ডোনারকে আইনগত কাঠামোর মধ্যে আনা এবং অনুমোদিত পারিবারিক দাতার পরিধি বাড়ানোর মাধ্যমে মানব অঙ্গ প্রতিস্থাপন অধ্যাদেশ ২০২৫ দেশে অঙ্গ দানের পদ্ধতিকে আধুনিক করেছে। নতুন অধ্যাদেশ অঙ্গ প্রতিস্থাপনকে আরও সহজ ও নিরাপদ করেছে, পাশাপাশি রোগীদের জন্য আইনি ও প্রক্রিয়াগত জটিলতাও কমিয়েছে।
