সরকারি ভবনগুলোকে ‘গ্রিন বিল্ডিং’ করার আহ্বান পরিবেশ উপদেষ্টার
সরকারি সব ভবনকে 'গ্রিন বিল্ডিং' হিসেবে নির্মাণ ও রূপান্তর করার আহ্বান জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। একই সঙ্গে তিনি গণপূর্ত অধিদপ্তরকে এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ 'গ্রিন বিল্ডিং ম্যানুয়াল' প্রণয়নের নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, "কোনো মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তর গ্রিন বিল্ডিংয়ের বাইরে গেলে চলবে না। বাধ্যতামূলক নীতি থাকলে কম পানি ব্যবহার, পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক আলো এবং পরিবেশবান্ধব নির্মাণশৈলী নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।"
রোববার রাজধানীর গণপূর্ত ভবনের সম্মেলন কক্ষে 'এনভায়রনমেন্টাল ম্যানেজমেন্ট, গ্রিন প্রোকিউরমেন্ট অ্যান্ড গ্রিন বিল্ডিং' শীর্ষক সেমিনারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি এ আহ্বান জানান।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, "আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর সবচেয়ে বেশি ইটভাটা ভাঙা হয়েছে। আমরা ইটের বিকল্প ব্লককেও সেভাবে প্রমোট করতে পারছি না। এভাবে টম অ্যান্ড জেরি খেলা সম্ভব নয়। সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোকে বাধ্যতামূলকভাবে একটি নির্দিষ্ট শতাংশ ব্লক ব্যবহারের নীতি দিতে হবে। ব্যবহার কমানো না গেলে ইটভাটা ভেঙে মাটি পোড়ানো বন্ধ করা যাবে না। যদি এবছর ৩০ শতাংশ ব্লক ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা দিই, তাহলে পরের বছর অন্তত ৩০ শতাংশ ইট উৎপাদন কমবে। এভাবেই ধীরে ধীরে পরিবর্তন আনা সম্ভব।"
তিনি রাজউককে ভবন নির্মাণে নির্দিষ্ট পরিমাণ ব্লক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সরকারই ইটের সবচেয়ে বড় ক্রেতা—তাই বিকল্প উপকরণ প্রচার ও ব্যবহারে সরকারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি আরও বলেন, দেশের নির্মাণশিল্প আধুনিক করতে হলে নীতিতে পরিবর্তন আনতে হবে। লেকগুলো ড্রেনেজের জন্য নয়, মানুষের জন্য—সুতরাং প্রকৃতি ধ্বংস করে তথাকথিত উন্নয়ন বা বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড করা যাবে না। কমিউনিটি ও সরকারের দায়িত্বের সীমানাও স্পষ্ট করতে হবে।
অনুষ্ঠানে গৃহায়ন, গণপূর্ত ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, "সরকারি হাসপাতাল, কারাগার, আদালত ও এতিমখানার ভবনগুলোর অবস্থা ভালো নয়। এগুলোকে পরিবেশবান্ধব আধুনিক কাঠামোয় সংস্কার বা পুনর্নির্মাণ করতে হবে।"
তিনি শহরের জলাশয়গুলো পুনরুদ্ধারের আহ্বান জানান এবং সব সরকারি ভবনকে পরিবেশ সহায়ক কাঠামোয় পুনর্গঠনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলাম বলেন, "ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে দেখেছি, অনেক জায়গা ইজারা ছাড়াই দখলে থাকে এবং কিছু গডফাদারের মাধ্যমে এগুলো পরিচালিত হয়। এখনও সেগুলো দখলমুক্ত করা যায়নি। এমনকি আমার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও সহযোগিতা চান।"
তিনি বলেন, "সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দেওয়া লেক, মাঠ, পার্কসহ সম্পত্তির শর্ত ভঙ্গ হলে চুক্তি বাতিল করে সম্পত্তি ফেরত নেওয়া হবে।"
রাজউক চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার রিয়াজুল ইসলাম বলেন, "সিটি কর্পোরেশনকে লেক ও পার্ক রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তারা শর্ত ভঙ্গ করে সেখানে স্থাপনা নির্মাণ ও ইজারা দিয়েছে।"
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, "গুলশানের শাহাবুদ্দিন পার্ক আমি উদ্ধার করে দেব। এটি ইয়ুথ ক্লাবের কাছে ইজারা দিয়ে প্রাইভেট স্পেস বানানো হয়েছিল। আমি আজ সেটি সিলগালা করে এসেছি। মাঠটি শিশুদের জন্য ফেরত দেওয়া হবে।"
তিনি বলেন, "ঢাকার লেকগুলো নদীর সঙ্গে যুক্ত না করতে পারলে কোনো কাজে আসবে না। হাতিরঝিল তৈরির উদ্দেশ্য এখন আর রক্ষা পাচ্ছে না। বাসাবাড়ির সব স্যুয়ারেজ বর্জ্য সেখানে গিয়ে পড়ছে। এজন্য আমাদের যৌথ উদ্যোগ নিতে হবে।"
সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন স্থপতি বিভাগের প্রধান স্থপতি মো. আসিফুর রহমান ভূঁইয়া, নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের পরিচালক মাহমুদ আলী এবং গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. খালেকুজ্জামান চৌধুরী।
