রবির বিরুদ্ধে একীভূতকরণের শর্ত লঙ্ঘনের অভিযোগ জিপি ও বাংলালিংকের; চায় বিটিআরসির হস্তক্ষেপ
রবি আজিয়াটা লিমিটেড ২০১৬ সালে এয়ারটেল বাংলাদেশের সঙ্গে একীভূত হওয়ার শর্ত বারবার লঙ্ঘন করছে—এমন অভিযোগে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) হস্তক্ষেপ চেয়েছে দেশের প্রধান দুই মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন ও বাংলালিংক।
অপারেটর দুটির দাবি, একীভূতকরণের প্রায় নয় বছর পেরিয়ে গেলেও রবি এখনও এয়ারটেল ব্র্যান্ডের সেবাগুলোকে পৃথক ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচালনা ও প্রচার করছে। অথচ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও হাইকোর্ট উভয় পক্ষেরই এ বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা ছিল যে এয়ারটেলকে স্বতন্ত্রভাবে চালানো যাবে না।
বিটিআরসিকে দেওয়া পৃথক চিঠিতে তারা বলেছে, ২০১৬ সালের ২৬ অক্টোবর একীভূতকরণের অনুমোদনে ২০ নম্বর শর্তে স্পষ্টভাবে বলা ছিল, সমস্ত বিজ্ঞাপন, বিপণন ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ শুধু 'রবি আজিয়াটা লিমিটেড' নামে পরিচালনা করতে হবে।
গ্রামীণফোন বলেছে, ২০১৬ সালের ৩১ আগস্ট হাইকোর্টের রায়ে একীভূতকরণের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল এই শর্তে যে, টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও বিটিআরসির সমস্ত নির্দেশনা পুরোপুরি মেনে চলতে হবে।
অপারেটর দুটি বলেছে, এসব নির্দেশনা সত্ত্বেও রবি সমান্তরালভাবে এয়ারটেলের একটি পৃথক ইকোসিস্টেম চালিয়ে যাচ্ছে। এয়ারটেল ব্র্যান্ডের সিম এখনো বাজারে ব্যাপকভাবে পাওয়া যাচ্ছে, অনেক খুচরা দোকানে এখনো এয়ারটেলের সাইনবোর্ড রয়েছে এবং সেগুলোকে বিশেষ বিক্রয় কেন্দ্র হিসেবে দেখানো হচ্ছে; এবং এয়ারটেলের আলাদা ওয়েবসাইট ও মোবাইল অ্যাপ রয়েছে, যার মাধ্যমে স্বাধীনভাবে প্যাকেজ ও গ্রাহক সেবা দেওয়া হচ্ছে।
গ্রামীণফোন আরও বলেছে, এয়ারটেল ব্র্যান্ডের ডেটা প্যাক, রিচার্জ অফার, আন্তর্জাতিক কল রেট, রোমিং সেবা ও ভিওএলটিই প্রমোশনও সক্রিয়ভাবে প্রচার করা হচ্ছে। এমনকি এয়ারটেলের সোশ্যাল মিডিয়া চ্যানেলগুলো এমনভাবে সচল রাখা হয়েছে, যেন এটি এখনো একটি স্বতন্ত্র অপারেটর।
গ্রামীণফোনের যুক্তি, এ ধরনের কর্মকাণ্ড গ্রাহকদের বিভ্রান্ত করছে, ব্র্যান্ড নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি করছে এবং বাজারের প্রতিযোগিতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তারা বলছে, একীভূতকরণের শর্ত ও লাইসেন্সের বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন করে এয়ারটেলের দীর্ঘদিনের আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড ভ্যালুকে অন্যায়ভাবে কাজে লাগাচ্ছে রবি।
গ্রামীণফোনের চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার তানভীর মোহাম্মদ টিবিএসকে বলেন, কোম্পানিটি মনে করে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার জন্য পুরো শিল্প খাতে নিয়ম মেনে চলা জরুরি।
তিনি বলেন, 'সরাসরি একীভূতকরণের শর্ত ও লাইসেন্সের বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘনকারী প্রতিযোগিতা-বিরোধী কর্মকাণ্ড নিয়ে আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। এ ধরনের কাজ সুস্থ প্রতিযোগিতার অন্তরায়।' তিনি আরও জানান, বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য গ্রামীণফোন কমিশনের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে।
৩০ অক্টোবর দেওয়া এক চিঠিতে বাংলালিংকও একই উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। ওই চিঠিতে বলা হয়: রবি এখনো '০১৬' নম্বর সিরিজের সিম সংযোগ সক্রিয়ভাবে বিক্রি করছে এবং 'এয়ারটেল' নামে ব্যাপকভাবে ব্র্যান্ড প্রচার ও গ্রাহক সেবা কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিশনের পক্ষ থেকে এমন ব্যবহারের অনুমতি দিয়ে কোনো মেয়াদ বৃদ্ধি, অব্যাহতি বা পরিবর্তনের কোনো প্রমাণ প্রকাশ্যে নেই।
অপারেটরটি বলেছে, রবির এসব কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনার পাশাপাশি হাইকোর্টের অনুমোদিত বাধ্যবাধকতারও লঙ্ঘন।
বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান বলেন, বিষয়টি মূলত নিয়ম মেনে চলার। 'যখন নিয়ন্ত্রক সংস্থা, এমনকি হাইকোর্ট স্পষ্টভাবে শর্ত ঠিক করে দিয়েছেন, তখন কোনো অপারেটরেরই আইনের বাইরে গিয়ে কাজ করা উচিত নয়। আমরা আশা করি, সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে বিটিআরসি পদক্ষেপ নেবে।'
এসব অভিযোগের জবাবে রবির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে টিবিএসকে বলেন, এয়ারটেল এখনো আইনগতভাবে রবি আজিয়াটা লিমিটেডের অধিগ্রহণকৃত একটি সাব-ব্র্যান্ড।
ওই কর্মকর্তা বলেন, 'হাইকোর্ট-অনুমোদিত একীভূতকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এয়ারটেলের সমস্ত ট্রেডমার্ক, লোগো ও মেধাস্বত্ব রবির কাছে হস্তান্তরিত হয়েছে।' তিনি আরও যোগ করেন, একটি কোম্পানির অধীনে একাধিক ব্র্যান্ড ব্যবহার বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। স্কিটোর মাধ্যমে গ্রামীণফোনসহ বিশ্বের অনেক টেলিযোগাযোগ অপারেটর একই রীতি অনুসরণ করে।
রবি বলেছে, সাব-ব্র্যান্ডিং গ্রাহকদের পছন্দের সুযোগ বাড়ায় এবং এটি নিয়ন্ত্রক সংস্থার কোনো বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন করে না।
