অর্থনীতিতে ‘গণতন্ত্রায়ণ’ নিশ্চিতে জনগণ ও উদ্যোক্তাদের কাছে যাবে বিএনপি: খসরু
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বিএনপি এখন থেকে জনগণ ও ব্যবসায়ীদের কাছে ছুটে যাবে। তিনি বলেন, 'রাজনীতিবিদেরা সাধারণত চান সবাই তাদের কাছে আসুক, কিন্তু বিএনপি এবার এই পদ্ধতির পরিবর্তন করছে। আমরা এবার যাদের সমস্যা, তাদের কাছেই ছুটে যাব।'
শনিবার (১৫ নভেম্বর) বিকেলে ফরিদপুর সদর উপজেলায় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আমীর খসরু বলেন, 'প্রতিটি বিভাগে আমরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে কথা বলছি। আমরা বক্তব্য দিয়ে সেখান থেকে চলে যাইনি; আমরা তাদের কথা শুনেছি। রাজনীতি আর আগের মতো চলবে না। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পরে মানুষের মনোজগতে যে পরিবর্তন এসেছে, যে প্রত্যাশা সৃষ্টি হয়েছে, সেই আকাঙ্ক্ষা যদি আমরা ধারণ করতে না পারি, তবে সেই রাজনৈতিক দলের ভবিষ্যৎ নেই।'
তিনি বলেন, 'আমরা আর মেগা প্রজেক্টে যাব না। আপনাদের ঢাকায় যাওয়ার প্রয়োজন নেই। নিজ এলাকাতেই বসে কাজ করতে পারবেন।'
বিগত দিনে কিছু লোকের হাতে ব্যবসা-বাণিজ্য পুঞ্জীভূত ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। রাজনীতিকে গণতন্ত্রায়ণ করবেন, কিন্তু অর্থনীতিকে বাইরে রাখবেন; সেটা তো হবে না।'
তিনি জানান, বিএনপির নতুন স্লোগান হচ্ছে অর্থনীতিকে 'গণতন্ত্রায়ণ' করা। তিনি বলেন, 'অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্রত্যেক নাগরিকের অংশগ্রহণের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। অর্থনীতির সুফল যাবে সকলের কাছে; শুধু একটি গোষ্ঠীর কাছে নয়, ঢাকা বা চট্টগ্রামকেন্দ্রিক কিছু মানুষের কাছেও নয়। এমন একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে, যেখানে সবাই অংশ নিতে পারে।'
'আমরা এখন চাকরির ইন্টারভিউ দিচ্ছি, চাকরি কিন্তু আপনারাই দেবেন। চাকরির মালিক জনগণ। বিএনপির সৃষ্টি হয়েছে প্রাইভেট সেক্টরের অবদানের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য। সরকার সুযোগ সৃষ্টি করে, কিন্তু সেই সুযোগ বাস্তবায়ন করে প্রাইভেট সেক্টর,' তিনি যোগ করেন।
দেশের ব্যবসার জটিলতা তুলে ধরে তিনি বলেন, 'একটি ব্যবসা করতে গেলে ১৯টি পারমিশনের প্রয়োজন হয়। এই ১৯টি পারমিশন পেতে একজন ব্যবসায়ীর ছয় মাস থেকে এক বছর লেগে যায়। এরপর কেউ কি এদেশে এসে ব্যবসা করবে?'
ব্যবসাকে গণতন্ত্রায়ণ করতে বিএনপি কাজ করবে জানিয়ে আমীর খসরু আরও বলেন, 'সবার জন্য ব্যবসাবান্ধব দেশ গড়তে এবং বিদেশি বিনিয়োগ আনতে পরিবেশ নিশ্চিত করতে বিএনপি নানামুখী পরিকল্পনা নিয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে, ব্যবসাবান্ধব দেশ গড়তে হলে সরকারি নীতিমালায় বড় পরিবর্তন আনতে হবে। এত রেগুলেশন; কেউ কাজই করতে পারছে না। প্রতিটি জায়গায় বাধা: ব্যুরোক্রেটিক বাধা, ব্যাংকে টাকা নেই, সরকারের নীতিমালার বাধা, অথবা ব্যবসার পরিবেশের বাধা।'
অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে ব্যবসায়ীদের ভূমিকা সর্বাধিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'তারেক রহমানের স্বপ্ন, বাংলাদেশ আবার বিশ্বের সামনে মাথা তুলে দাঁড়াবে। প্রথমে অর্থনৈতিকভাবে। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি না থাকলে কিছুই হবে না; নিরাপত্তা হবে না, সমাজ শক্তিশালী হবে না, রাজনৈতিক অবস্থানও হবে না। অর্থনীতিই সবকিছুর মূলে।'
তিনি আরও বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে প্রথম ১৮ মাসে ১ কোটি মানুষের চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। 'এটা বড় টার্গেট, কিন্তু আমরা শুধু টার্গেট দিইনি; কোথায় কোথায় চাকরি হবে, তা আমরা ঠিক করেছি। জিডিপির ৫ শতাংশ করে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে ব্যয় করার সিদ্ধান্তও নিয়েছি। এত বড় সাহস নিয়ে কেউ কোনোদিন প্রোগ্রাম করেনি।'
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ইসলাম রিংকুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আলহাজ্ব জহিরুল হক শাহজাদা মিয়া, বিজিএমইএ'র সাবেক সভাপতি এস এম ফজলুর হক, অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর, ফরিদপুর বণিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও জেলা বিএনপির সদস্য সচিব একেএম কিবরিয়া স্বপনসহ অন্যান্য ব্যবসায়ীরা।
