অর্ধেকেরও নিচে নেমেছে ঢাকার ট্রাফিক, সতর্ক অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
কার্যক্রম নিষিদ্ধ দল আওয়ামী লীগ ঘোষিত 'ঢাকা লকডাউন' কর্মসূচি নিয়ে শঙ্কার মধ্যে স্বাভাবিক দিনের তুলনায় আজ (১৩ নভেম্বর) ঢাকার ট্রাফিক অর্ধেকেরও নিচে নেমেছে।
সকালের দিকে বাংলামোটর সিগন্যালে সাধারণত ৬ মিনিট অপেক্ষা করতে হলেও, আজ সেটি ২ মিনিটেরও কম সময়ে নামিয়ে আনা হয়েছে। রাস্তায় গাড়ি চলাচল কমেছে চোখে পড়ার মতো। এরপরেও অফিসগামী অনেক মানুষকে কর্মস্থলে ও শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটতে দেখা গেছে।
বাংলামোটরে দায়িত্ব পালন করা ট্রাফিক পুলিশের কনস্টেবল আইয়ুব আলী টিবিএসকে বলেন, "আজ রাস্তায় গাড়ির চাপ অনেক কম। অর্ধেকেরও নিচে নেমে এসেছে। এখন দ্রুতই সিগন্যাল ছেড়ে দিতে পারছি।"
বৃহস্পতিবার সকালে থেকে মিরপুর, পল্লবী, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, শ্যামলী, গাবতলী, ফার্মগেট, কারওয়ানবাজার, বাংলামোটর, শাহবাগসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
যাত্রী ও পথচারীদের মধ্যে অস্বস্তি থাকা সত্ত্বেও, দৈনন্দিন কাজে অনেকেই বের হয়েছেন। অফিসগামী কর্মীরা কাজে গেছেন এবং শিক্ষার্থীরাও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গেছে।
মিরপুর-১০ থেকে গাবতলীতে কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন সরকারি চাকরিজীবী হাসিবুল ইসলাম। তিনি টিবিএসকে বলেন, "সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই নানা গুজব ছড়াচ্ছে, কিন্তু রাস্তায় চিত্র ভিন্ন। স্বাভাবিক দিনের মতোই মানুষ বের হয়েছেন। কোনো ভীতি কাজ করছে না।"
শিকড় পরিবহনের ড্রাইভার ইয়াসিন টিবিএসকে বলেন, "অন্যান্য দিনের মতোই গাড়ি নিয়ে বের হয়েছি। যাত্রী কিছুটা কম হলেও রাস্তায় ভিড় আছে। আগুন দিয়ে বাস পোড়ানোর ঘটনাগুলোতে কিছুটা ভয় লাগলেও সেনাবাহিনী, পুলিশ রাস্তায় থাকায় ভয়টা কমে গেছে।"
মেয়েকে নিয়ে স্কুলে যাচ্ছিলেন সুমাইয়া বেগম। তিনি বলেন, "বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে ভয় লাগছিল, কিন্তু রাস্তায় এসে ভয় কেটে গেছে। বাচ্চাকে স্কুলে নিয়ে যাচ্ছি, অন্যরাও আসবেন।"
হেমায়েতপুর থেকে বাংলামোটরে আসা শরিয়ত উল্লাহ বলেন, "রাস্তায় কোনো যানজট পাইনি, অন-ডে তে রাস্তাঘাট এতো ফাঁকা আগে কখনও পাইনি। আজকে দিন নিয়ে শঙ্কা থাকলেও অফিসের তাগিদে বের হতে হয়েছে।"
লাব্বাইক পরিবহনের হেলপার সুমন বলেন, "আজ রাস্তা মোটামুটি ফাঁকাই পেয়েছি, যাত্রীও কিছুটা কম। তবে যে ভয় ছিল সেটা রাস্তায় বের হবার পরে তেমন কাজ করছে ন। রাস্তার প্রায় প্রতিটি মোড়ে মোড়েই পুলিশ, সেনাবাহিনী রয়েছে।"
গাবতলী থেকে শাহবাগ পর্যন্ত সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, রাস্তার প্রতিটি মোড়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা রয়েছেন। কাউকে সন্দেহভাজন মনে হলে তাদেরকে চেক করা হচ্ছে। কারওয়ান বাজার এলাকার রাস্তায় কিছুদূর পরপরই পুলিশ সদস্যরা অবস্থান করছেন।
যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছে। লকডাউন ও নাশকতা প্রতিরোধে মোহাম্মদপুর, বাড্ডা, গাবতলীতে অবস্থান নিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতাকর্মীরা। এছাড়া, সায়েন্সল্যাব, নীলক্ষেত অবস্থান নিয়েছে ইসলামী ছাত্র শিবিরের বাংলাদেশের নেতাকর্মীরা।
আমিনবাজারে পুলিশের চেকপোস্ট-তল্লাশি
নিরাপত্তা জোরদারের অংশ হিসেবে দ্বিতীয় দিনের মতো আজও ঢাকার প্রবেশপথ আমিনবাজার এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে বিভিন্ন যানবাহনে তল্লাশি চালাচ্ছে ঢাকা জেলা পুলিশ।
সকালে সাভারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে, আশঙ্কা থাকলেও অন্যান্য দিনের মতোই সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। গণপরিবহন ও ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করছে নিয়মিতভাবে, যদিও কিছু রুটে গণপরিবহন ও দূরপাল্লার বাসের সংখ্যা কিছুটা কম দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ঢাকামুখী লেনে বসানো চেকপোস্টে গণপরিবহন, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল থামিয়ে যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। যাত্রীদের গন্তব্য ও আগমনের তথ্য নেওয়ার পাশাপাশি তাদের ব্যাগ ও মালপত্র তল্লাশি করা হচ্ছে।
তবে গতকাল চেকপোস্টে যাত্রীদের মুঠোফোন ও গ্যালারি পরীক্ষা করতে দেখা গেলেও আজ তা আর করা হয়নি।
আমিনবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. ফয়সাল আলম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-কে জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত কাউকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়নি।
