রোহিঙ্গা সংকট: কানাডীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে ঢাকার নিরাপত্তা উদ্বেগের ইঙ্গিত
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা ক্যাম্পে অবস্থান করায় মানবপাচার, মাদক ও অস্ত্র-গোলাবারুদ চোরাচালানের মতো নিরাপত্তা-সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ ক্রমেই বাড়ছে। এটি রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও আশপাশের স্থানীয় জনগোষ্ঠী উভয়ের ওপরই প্রভাব ফেলছে।
বুধবার (১২ নভেম্বর) কানাডার সিনেটের একজন সদস্য ও দুজন সংসদ সদস্যের নেতৃত্বে হিউম্যান কনসার্ন ইন্টারন্যাশনাল (এইচসিআই) নামে একটি আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত প্রতিনিধিদল পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে মন্ত্রণালয়ে সাক্ষাৎ করলে তিনি এ কথা বলেন।
উদ্বেগ প্রকাশ করে উপদেষ্টা বলেন, রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বৈশ্বিক মনোযোগ ও অর্থায়ন ক্রমেই কমে যাচ্ছে। এ অবস্থায় সংকট নিরসনে আন্তর্জাতিক তহবিল বাড়াতে কানাডার সহায়তা চান তিনি।
একইসঙ্গে তিনি জোর দিয়ে বলেন, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনই এই সংকটের একমাত্র টেকসই সমাধান।
বৈঠকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধান প্রতিনিধি ড. খলিলুর রহমানও উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, আলোচনায় রোহিঙ্গা সংকটের সামগ্রিক দিক নিয়ে আলোচনা হয়। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা রোহিঙ্গা ইস্যুতে কানাডার ধারাবাহিক মানবিক সহায়তা ও দীর্ঘদিনের সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানান।
প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের মানবিক সহায়তা ও উদারতার প্রশংসা করে জানায়, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের আশ্রয় ও সহায়তা দেওয়ায় বাংলাদেশের ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।
কানাডীয় সংসদ সদস্যরা বাংলাদেশের প্রচেষ্টাকে স্বীকৃতি দিয়ে মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি টেকসই সমাধানের পথে কাজ চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
কানাডার প্রতিনিধিরা রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষার গুরুত্ব, বিশেষ করে তরুণদের জন্য উচ্চশিক্ষার সুযোগ তৈরির প্রয়োজনীয়তার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন। তারা বলেন, শিক্ষা রোহিঙ্গা তরুণদের দক্ষতা বাড়াবে, মানবপাচারের ঝুঁকি কমাবে, ইতিবাচক সামাজিক আচরণ উৎসাহিত করবে এবং শেষ পর্যন্ত প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াতেও সহায়তা করবে।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জানান, এই প্রক্রিয়াটি সতর্কতার সঙ্গে পর্যালোচনা করা প্রয়োজন, কারণ এতে দীর্ঘমেয়াদি কর্মসংস্থানের বিষয় জড়িত থাকতে পারে, যা স্থানীয় মজুরির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
তবে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, সংশ্লিষ্ট অংশীজন ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে পরামর্শ, যাচাই ও সমন্বয়ের মাধ্যমে এসব উদ্বেগ কার্যকরভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।
বৈঠকে উভয়পক্ষ বাংলাদেশ ও কানাডার মধ্যে দৃঢ়, বন্ধুত্বপূর্ণ ও পারস্পরিক অংশীদারত্ব আরও জোরদার করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে।
