১৯ নভেম্বর জামায়াত, পরদিন বিএনপির সঙ্গে সংলাপের পরিকল্পনা ইসির
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ আয়োজন করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এই সংলাপ আগামীকাল থেকে শুরু হবে।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, সংলাপের অংশ হিসেবে ১৯ নভেম্বর বিকালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সংলাপে বসবে কমিশন। এরপরদিন ২০ নভেম্বর সকালে, সংলাপে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি)। এর আগে ১৭ নভেম্বর বিকেলের সংলাপে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে জাতীয় পার্টির (লাঙ্গল প্রতীক)।
নির্বাচন কমিশনের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রথমদিন ১২ টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে সংলাপে সংশ্লিষ্ট দলের সর্বোচ্চ তিন জন প্রতিনিধিকে অংশগ্রহণের জন্য অনুরোধ করেছে ইসি।
সূত্র জানিয়েছে, কমিশন দুই দিনব্যাপী বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করার সময়সূচি নির্ধারণ করেছে।
১৯ নভেম্বর বিকালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি,), বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি, বাংলাদেশ ইসলামি ফ্রন্ট ও খেলাফত মজলিসের সঙ্গে মতবিনিময় করার পরিকল্পনা করছে ইসি।
এর পরদিন, ২০ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সকালে সংলাপে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), গণঅধিকার পরিষদ, নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশ লেবার পার্টি ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সঙ্গে সংলাপ হওয়ার কথা। তবে এসব দলকে এখনও আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বলে জানা গেছে।
জামায়াত ও অন্যান্য দলের সঙ্গে সংলাপের আগে নির্বাচন কমিশন ১৭ নভেম্বর বিকালে সংলাপে জাতীয় পার্টি (লাঙল প্রতীক), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি (হাতুড়ী প্রতীক), জাকের পার্টি, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন এবং বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের সঙ্গে সংলাপ করবে বলে জানা গেছে।
তিনভাগে বিভক্ত জাতীয় পার্টির মধ্যে নির্বাচনি প্রতীক লাঙ্গল নিয়ে ইতোমধ্যে তাদের মধ্যে টানাটানি শুরু হয়েছে। তবে সে বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি ইসি।
গত দুই বছরের কম সময়ের ব্যবধানে জাতীয় পার্টির তিনটি পক্ষ আলাদা হয়ে গেছে। জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন এই দল থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া রওশনপন্থি ও আনিসুল ইসলাম মাহমুদের অংশটিও এখন লাঙ্গল প্রতীক দাবি করছে।
গেল আগস্টে আলাদা হয়ে যাওয়া আনিসুল ইসলাম মাহমুদের নেতৃত্বাধীন অংশটি বলছে, 'গঠনতন্ত্র' অনুযায়ী লাঙ্গল প্রতীক কেবলমাত্র তাদের।
এমন পরিস্থিতিতে জাতীয় পার্টিকে সংলাপে ডাকা হবে কিনা জানতে চাইলে 'বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে' ইসি সচিব আখতার আহমেদ সাংবাদিকের বলেন, 'আলোচনা করে আমরা এটার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবো। কাদেরকে ডাকা হবে আপনারা ধাপে ধাপে জানতে পারবেন।'
জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে দাবিদার দুপক্ষের বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়েছে কিনা জানতে চাইলে সচিব সাংবাদিকদের বলেন, 'এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। সিদ্ধান্ত হলে তো অবশ্যই জানতেন, হলে জানানো হবে।'
এদিকে, নির্বাচন কমিশন (ইসি) তিনটি নতুন রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে, যার মধ্যে একটি হলো জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
তাদের নিবন্ধন দাবির বিষয়ে আপত্তি থাকলে তা জানানোর জন্য ইসি একটি পাবলিক-নোটিশ প্রকাশ করেছে, যেখানে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত আপত্তি দাখিল করা যাবে। আপত্তি নিষ্পত্তির পর কমিশন চূড়ান্ত নিবন্ধন সনদ প্রদান করবে ইসি।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর নতুনভাবে নিবন্ধিত দলগুলোকে সংলাপে আমন্ত্রণ জানানো হবে—সম্ভবত ১৯ নভেম্বরের বৈঠকেই তারা অংশ নিতে পারবে।
নভেম্বরের মধ্যে আলোচনা শেষ করবে ইসি
মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, '১৩ নভেম্বর থেকে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ শুরু হবে। এ নিয়ে আমরা পরিকল্পনা করছি। কারা আসবে, কাদের আগে ডাকা হবে সেগুলো ঠিক করতে হবে। এ মাসের মধ্যে দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় কার্যক্রম শেষ করতে চাই, যাতে নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানো যায়।'
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী প্রতিদিন সকাল ও বিকালে দুই দফায় ৬টি করে রাজনৈতিক দলের নেতাদের সংলাপে আমন্ত্রণ জানানোর পরিকল্পনা নিয়েছে ইসি। সংলাপে জাতীয় পার্টিসহ নিবন্ধিত দলগুলো ডাকার পরিকল্পনা আছে।
নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার টিবিএসকে বলেন, 'আমরা গ্রুপ করে ডাকবো রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের। এক সঙ্গে ৬টি রাজনৈতিক দলের ৩জন জন করে প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানানো হবে।'
আওয়ামী লীগকে সংলাপে আমন্ত্রণ জানানো হবে না, কারণ দলের রাজনৈতিক কার্যক্রম বর্তমানে স্থগিত রয়েছে, বলে নিশ্চিত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
মো. আনোয়ারুল ইসলাম আরও জানান, 'আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের দলভিত্তিকভাবে আমন্ত্রণ জানাবো। প্রতিটি সেশনে ছয়টি দল থেকে মোট ১৮ জন প্রতিনিধি অংশ নেবেন। সব মিলিয়ে প্রায় ৫০ থেকে ৫৫টি নিবন্ধিত দলের সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে।'
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জনসংযোগ শাখার সহকারী পরিচালক মো. আশাদুল হক নিশ্চিত করেছেন যে, প্রথম দিনের সংলাপে অংশগ্রহণের জন্য ১২টি রাজনৈতিক দলকেই ইতিমধ্যে আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছে।
বর্তমানে বাংলাদেশে ৫৩টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল রয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত রয়েছে এবং অন্য তিনটি দলের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, তিনটি নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন ১৫ নভেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) আগে ঘোষণা করেছে যে, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ১৩তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের সময়সূচি সম্ভবত ডিসেম্বরের প্রথমদিকে ঘোষণা করা হবে।
ইসি ইতোমধ্যে তার প্রস্তুতির বড় অংশ সম্পন্ন করেছে এবং বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে আলোচনাও করেছে, যার মধ্যে রয়েছে নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, একাডেমিক, নারী নেতা, সাংবাদিক এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি।
আগামীকাল সংলাপের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে যাদের
১৩ নভেম্বর সংলাপে সকালে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
এছাড়া বিকেলে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএম এর সঙ্গে সংলাপ করা কথা জানিয়েছে ইসি।
ইতোমধ্যে এ ১২ টি দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইসির জনসংযোগ শাখার সহকারী পরিচালক মো. আশাদুল হক।
