৯৭ মিলিয়ন ডলার পাচারের মামলায় সালমান ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল
বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে প্রায় ৯৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাচারের অভিযোগে বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান এবং তার স্বার্থ-সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ১৭টি অর্থপাচার মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করেছে সিআইডি'র ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।
রবিবার (৯ নভেম্বর) সিআইডির সদর দপ্তর থেকে গণমাধ্যমকে এই তথ্য জানানো হয়।
জানানো হয়, প্রাথমিক তদন্তে দেখা যায় যে বেক্সিমকো গ্রুপের চেয়ারম্যান এএসএফ রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান এবং অন্যান্য সহযোগীরা মোট ১৭টি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করে ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে এই অর্থপাচারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
এই প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- অ্যাডভেঞ্চার সিয়ারমেন্টস, অ্যাপোলো অ্যাপারেলস, অটাম লুপ অ্যাপারেলস, বেক্সটেক্স গার্মেন্টস, কসমোপলিটন অ্যাপারেলস, কোজি অ্যাপারেলস, অ্যাসেস ফ্যাশন ইন্টারন্যাশনাল নিটওয়্যার অ্যান্ড অ্যাপারেলস।
এছাড়া রয়েছে- কাঁচপুর অ্যাপারেলস, মিডওয়েস্ট গার্মেন্টস, পিয়ারলেস গার্মেন্টস, পিঙ্ক মেকার গার্মেন্টস, প্লাটিনুর গার্মেন্টস, স্কাইনেট অ্যাপারেলস, স্প্রিংফুল অ্যাপারেলস, আরবান ফ্যাশনস লিমিটেড ও উইন্টার স্প্রিন্ট গার্মেন্টস লিমিটেড।
তদন্তে আরও উঠে আসে, তারা এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জনতা ব্যাংক পিএলসির মতিঝিল শাখা থেকে এলসি বা বিক্রয় চুক্তির ব্যবস্থা করেছিল। তবে রপ্তানির বিপরীতে অর্জিত অর্থ দেশে ফেরত নিয়ে আসেননি। এভাবে রপ্তানির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দুবাইয়ের আর আর গ্লোবাল ট্রেডিং- এর মাধ্যমে চলে যেত সংযুক্ত আর আমিরাত, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও আয়ারল্যান্ডসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে।
আর আর গ্লোবাল ট্রেডিং-এর মালিকানা সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান এবং এএসএফ রহমানের ছেলে আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের নামে নিবন্ধিত। এই প্রক্রিয়ায় ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে মোট ৯৬ লাখ ৯৬ হাজার ৬৮০ মার্কিন ডলার (যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১২শ' কোটি টাকা) রপ্তানি দেখানো হয়েছে। কিন্তু রপ্তানির বিপরীতে অর্জিত অর্থ দেশে ফেরত আনা হয়নি, অর্থাৎ রপ্তানিমূল্য প্রত্যাবসন না করে বিদেশে অর্থপাচার করা হয়েছে।
এ ঘটনায় সিআইডি বাদী হয়ে ২০২৪ সালের ১৭ ও ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মতিঝিল থানায় ১৭টি অর্থপাচার মামলা দায়ের করে।
ইতোমধ্যে এসব মামলা সংক্রান্ত আদালতের আদেশে আসামিদের বিভিন্ন সম্পদ জব্দ করেছে সিআইডি। এর মধ্যে রয়েছে ঢাকা জেলার দোহার থানার দুই হাজার শতাংশ জমি ও সেখানকার স্থাপনাসমূহ, গুলশানের 'দ্য এনভয়' বিল্ডিংয়ের ৬ হাজার ১৮৯.৫৪ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট এবং গুলশান আবাসিক এলাকার ৬৯৮/এ রাস্তার, ৩১ নম্বর প্লটে অবস্থিত ২ হাজার ৭১৩ বর্গফুটের আরও একটি ফ্ল্যাট।
এছাড়া, সিআইডির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করার পাশাপাশি তাদের বিদেশ যাত্রাও রহিত করা হয়েছে। সব মিলিয়ে জব্দ করা সম্পত্তির বর্তমান আনুমানিক মূল্য ৬০০/৭০০ কোটি টাকা।
উল্লেখিত ১৭টি মামলায় বেক্সিমকো গ্রুপের চেয়ারম্যান এএসএফ রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান ও আহমেদ শাহরিয়া রহমানসহ মোট ২৮ জন ব্যক্তি ও জড়িত মোট ১৯টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগে তদন্ত শেষে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ অনুসারে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিলের অনুমোদন দিয়েছে সিআইডি।
আসামিদের মধ্যে জেল হাজতে থাকা সালমান এফ রহমানকে এসব মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর পাশাপাশি বেক্সিমকো গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান অটাম লুপ অ্যাপারেলস লিমিটেড -এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও শেয়ারহোল্ডার ওয়াসিউর রহমানকে গত জুলাইয়ে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।
