মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর নামে ৫২৫ কোটি আত্মসাৎ, ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করবে দুদক
মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর নামে সিন্ডিকেট গড়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে ৫২৫ কোটি ২২ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০ টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে ৬টি রিক্রুটিং এজেন্সির ১১ জনের বিরুদ্ধে ৬টি মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) জানান, ৩১ হাজার ৩৩১ জন অভিবাসী কর্মীর কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকার পরিবর্তে পাঁচগুণ পর্যন্ত বেশি অর্থ আদায় করে এই অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার মামলাগুলো অনুমোদন করেছে কমিশন। এতে ৬টি রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের আসামি করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
৬টি পৃথক মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন মেসার্স আমিন ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস-এর মালিক রুহুল আমিন। তিনি ৭ হাজার ৪৩০ জন শ্রমিকের কাছ থেকে ১২৪ কোটি ৪৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা অতিরিক্ত নেওয়ার অভিযোগে প্রথম মামলায় আসামি করা হচ্ছে।
মেসার্স মেরিট ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের বিরুদ্ধে ৩ হাজার ৪৮৯ জনের কাছ থেকে ৫৮ কোটি ৪৪ লাখ ৭ হাজার ৫০০ টাকা অতিরিক্ত আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। এ মামলায় আসামি হচ্ছেন প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ এবং তার স্ত্রী।
সাদিয়া ইন্টারন্যাশনাল এর মাধ্যমে ৩ হাজার ৩২১ জনের কাছ থেকে ৫৫ কোটি ৬২ লাখ ৬৭ হাজার ৫০০ টাকা অতিরিক্ত আদায়ের অভিযোগে শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান তৃতীয় মামলার আসামি হচ্ছেন।
ইমপেরিয়াল রিসোর্স লিমিটেড-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ, প্রতিষ্ঠানটি ৮ হাজার ১০১ জন শ্রমিকের কাছ থেকে ১৩৫ কোটি ৬৯ লাখ ১৭ হাজার ৫০০ টাকা অতিরিক্ত গ্রহণ করেছে। এ ঘটনায় এর চেয়ারম্যান মো. ইকবাল হোসাইন এবং এমডি বদরুদ্দোজা চৌধুরী আসামি হিসেবে মামলায় অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন।
আরআরসি হিউম্যান রিসোর্স সার্ভিস লিমিটেডের মাধ্যমে ৫ হাজার ২০২ জনের কাছ থেকে ৮৭ কোটি ১৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকা অতিরিক্ত আদায়ের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান এবং এমডি মো. আলমগীর কবীর-কে আসামি করা হচ্ছে।
এ ছাড়া থানেক্স ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড ৩ হাজার ৭৮৮ জনের কাছ থেকে ৬৩ কোটি ৮৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা অতিরিক্ত গ্রহণ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এই মামলায় আসামি হচ্ছেন প্রতিষ্ঠানের সাবেক এমডি আব্দুল্লাহ শাহেদ, পরিচালক মো. জয়নাল আবেদীন নোমানী এবং বর্তমান এমডি শমসের আহমেদ।
এর আগে ১১ মার্চ, মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে ১১২৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ৩২ জনের নামে মামলা করে দুদক। পরে গত ১৪ সেপ্টেম্বর ১১৫৯ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ১৩ রিক্রুটিং এজেন্সির শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করা হয়।
উল্লেখ্য, বিভিন্ন অনিয়ম ও সিন্ডিকেট চালানোর অভিযোগে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া বন্ধ করে মালয়েশিয়া। পরবর্তীতে ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশ-মালয়েশিয়ার মধ্যে শ্রমিক নেয়ার নতুন চুক্তি হয়।
তখন শ্রমিক পাঠাতে সর্বোচ্চ ৭৮ হাজার ৫৪০ টাকা খরচ নির্ধারণ করে সরকার। ২০২২ সালে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক অফিস আদেশে এ খরচ নিশ্চিত করা হয়।
