গণভোট আগে হলে ভালো, নির্বাচনের দিন হলেও সমস্যা নেই; জুলাই সনদের আদেশ ড. ইউনূসকে জারি করতে হবে: নাহিদ
গণভোট আগে হলে ভালো হয়, তবে সরকারের সামর্থ্য অনুযায়ী নির্বাচনের দিন হলেও সমস্যা নেই বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেছেন, এই গণভোটে পাস হওয়া বিলটি আগামী সংসদকে আইন হিসেবে পাস করতে বাধ্য থাকতে হবে। এছাড়াও, জুলাই সনদের আদেশ রাষ্ট্রপতির কার্যালয় থেকে নয়, অবশ্যই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস কর্তৃক জারি করার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
আজ রোববার রাজধানীর বাংলামোটরের রুপায়ন টাওয়ারে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নাহিদ ইসলাম এ কথা বলেন।
জুলাই সনদের প্রস্তাব প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা 'জুলাই সনদের বিকল্প প্রস্তাব-১' সমর্থন করি অর্থাৎ গণভোটে বিল আকারে যাবে জুলাই সনদ। সেটি পাশ করতে আগামী সংসদের বাধ্যবাধকতা থাকতে হবে।
জুলাই সনদের কার্যকারিতা ও ভিত্তি নিশ্চিত করতে এটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকেই জারি করতে হবে বলে তিনি মত দেন। নাহিদ ইসলাম বলেন, 'আমরা মনে করি জুলাই সনদ আদেশ অবশ্যই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে দিতে হবে। প্রেসিডেন্ট অফিস থেকে দিলে জুলাই সনদের কোনো ভিত্তি থাকবে না।'
'গণভোট নির্বাচনের আগে না পরে হবে, সেটা প্রধান সংকট নয়। তবে জুলাই সনদ অবশ্যই ড. ইউনূসকে জারি করতে হবে। প্রেসিডেন্ট চুপ্পু এতে স্বাক্ষর করলে সংস্কারের কফিনে পেরেক মারা হবে', আরও বলেন তিনি।
যেদিন জুলাই সনদ স্বাক্ষর হয়েছে, সেদিন থেকেই জাতীয় অনৈক্যের সূচনা হয়েছে বলে মনে করেন নাহিদ। তার মতে, কোনো ধরনের বাছবিচার ছাড়াই জুলাই সনদে স্বাক্ষর করে রাজনৈতিক দলগুলো জাতির সঙ্গে প্রতারণা করেছে, তবে এখনও ঐক্যের সুযোগ আছে।
এ সময় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে নাহিদ ইসলাম বলেন, 'জুলাই সনদের মূল আলোচনা থেকে দৃষ্টি সরাতে দল দুটি গণভোটের সময় নিয়ে অহেতুক বিতর্ক করছে।'
নাহিদ ইসলামের অভিযোগ, একদল সংস্কারকে ভেস্তে দিচ্ছে, আরেক দল নির্বাচন পেছাতে চায়।
তিনি বলেন, 'সংস্কারের পক্ষে যদি কেউ না থাকে, তাদের সঙ্গে জোটে যাওয়া সম্ভব নয়। কোনো একটি দলের চাপে সরকার বারবার টেক্সট পরিবর্তন করেছে। বাস্তবায়ন আদেশের প্রথম খসড়ায় যেভাবে ২৭০ দিন পর সংস্কার প্রস্তাব স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হওয়ার বিধান ছিল, আমরা সেটিকে সমর্থন করি। এর ব্যত্যয় হলে আমরা সেই আদেশ সমর্থন করব কি না, তা পুনর্বিবেচনা করতে হবে।'
নাহিদ ইসলাম দাবি করেন, ২৭০ দিনের বাধ্যবাধকতা নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই, অযথা এটি নিয়ে বিতর্ক ও ভীতি ছড়ানো হচ্ছে।
সংবিধান থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা সরানোর দাবি জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, 'শেখ মুজিবকে ফ্যাসিবাদের আইকন হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। তার ছবি ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা সংবিধানে কোনোভাবেই থাকতে পারে না। বাস্তবায়ন আদেশে খসড়া-১ যেভাবে আছে, সেটিতে পরিবর্তন আনা হলে এনসিপি সেটিকে সমর্থন নাও করতে পারে।'
দলীয় প্রতীক পাওয়া নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করে এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, 'নতুন দল হিসেবে সহযোগিতার পরিবর্তে আমাদের কাজে বাধা তৈরি করছে নির্বাচন কমিশন। অথচ শাপলা কলির যে সিদ্ধান্ত, সেটি তারা এক মাস আগেও দিতে পারতো। আমরা শাপলাই চাই।'
ভারতের সমালোচনা করে নাহিদ ইসলাম বলেন, 'শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেয়ার মাধ্যমে জুলাই গণহত্যাকে সমর্থন দিচ্ছে ভারত। গণ-অভ্যুত্থান প্রশ্নে যতদিন ভারত তার অবস্থান পরিবর্তন না করবে, ততদিন বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক শীতলই থাকবে।'
