অসময়ের বৃষ্টিতে ডুবছে ঢাকা, ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’র রেশ এখনও রয়ে গেছে?
আনুষ্ঠানিকভাবে অক্টোবরের মাঝামাঝিতে বর্ষাকাল শেষ হয়ে গেলেও, মাঝে মাঝে পরে সামান্য বৃষ্টিপাত হয়। তবে শনিবার বিকাল ৩ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত ৩ ঘন্টায় ৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
জানা যায়, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় 'মোন্থা'র প্রভাবে এই বৃষ্টিপাত।
বঙ্গোপসাগরের উপর সৃষ্ট একটি নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড় 'মোন্থা'য় পরিণত হয় এবং ভারতের অন্ধ্র প্রদেশে আঘাত হানে। এর প্রভাবে গত বৃহস্পতিবার থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টি হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়টি দুর্বল হয়ে এখন সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হলেও এর প্রভাব এখনও রয়ে গেছে।
সর্বশেষ আবহাওয়া পূর্বাভাসে বাংলাদেশের ওপর কোনো সক্রিয় নিম্নচাপ বা সতর্ক সংকেতের উল্লেখ নেই।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর (বিএমডি)-এর মতে, বর্তমান মেঘলা ও বৃষ্টিপাতের পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হবে না, কারণ এই বৃষ্টিপাত স্থানীয় বায়ুপ্রবাহজনিত।
বিএমডির আবহাওয়াবিদ মোহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে (টিবিএস) জানান, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ওপর কিছু মেঘমালা স্থায়ীভাবে অবস্থান করছে। বাংলাদেশের ওপর স্থানীয় বায়ুপ্রবাহের কারণে ঢাকা, যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুরসহ কয়েকটি অঞ্চলে বৃষ্টি হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, 'রবিবার সকাল পর্যন্ত থেমে থেমে বৃষ্টি হতে পারে। এরপর আকাশ বেশিরভাগ সময় পরিষ্কার থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে ৫ নভেম্বরের পর কিছু এলাকায় আবারও বৃষ্টি হতে পারে।'
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর (বিএমডি) গতকাল (৩১ অক্টোবর) তিন বিভাগে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস জারি করে।
অধিদপ্তর জানিয়েছে, ছত্তিশগড়ের উত্তরাঞ্চল ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় সৃষ্ট স্পষ্ট নিম্নচাপ উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে। এর ফলে সকাল ১১টা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের কিছু এলাকায় ২৪ ঘণ্টায় ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার পর্যন্ত ভারী এবং সর্বোচ্চ ১৮৮ মিলিমিটার পর্যন্ত অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে।
গত সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় 'মন্থা' মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ উপকূলে আঘাত হানে। এটি দ্রুত স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়।
প্রথমদিকে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে এর প্রভাব তেমন ছিল না, তবে দুই দিন পর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি শুরু হয়।
ঘূর্ণিঝড় 'মোন্থা'র চলমান প্রভাব সম্পর্কে আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, 'যদিও মোন্থা দুর্বল হয়ে গেছে, তবে এটি যে মেঘমালা ও অবশিষ্ট প্রভাব তৈরি করেছিল, তা এখনও ভারতের উত্তর ছত্তিশগড়, উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গ অঞ্চলে সক্রিয় রয়েছে। এর ফলেই এসব অঞ্চলসহ বাংলাদেশেও বৃষ্টি হচ্ছে।'
বিএমডি দেশের চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে সতর্ক সংকেত নামিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে।
আজ (১ নভেম্বর) সকাল ৬টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় তেঁতুলিয়ায় সর্বাধিক ১৬২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
এছাড়া সিরাজগঞ্জের তারাশে ১২০ মিলিমিটার, নওগাঁর বদলগাছিতে ৮৬ মিলিমিটার, বগুড়ায় ৭১ মিলিমিটার, নীলফামারীর ডিমলায় ৬২ মিলিমিটার, দিনাজপুরে ৪৬ মিলিমিটার এবং রংপুরে ২৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
বিএমডি আশা করছে, আগামী সপ্তাহের শুরুর দিকেই দেশের অধিকাংশ অঞ্চলের আবহাওয়া ধীরে ধীরে উন্নতি হবে।
এদিকে, বিকাল থেকে ঢাকায় চলা এই বৃষ্টিপাতের কারণে রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকায় জলাবদ্ধতার খবর পাওয়া গেছে। বিশেষ করে মিরপুর, পল্লবী, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, নর্দা, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডী, পল্টন, পুরান ঢাকা, নিউ মার্কেটসহ ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
এর ফলে ছুটির দিনে বিকালে ঘুরতে বের হওয়া এবং জরুরি কাজে বের হওয়া মানুষেরা ভোগান্তিতে পড়েছেন।
ইস্কাটন গার্ডেন এলাকার বাসিন্দা রবিউল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে (টিবিএস) বলেন, 'বিকাল থেকে টানা বৃষ্টিতে রাস্তায় হাঁটু পানি হয়ে গেছে। জরুরি কাজে বাইরে বের হয়ে ফিরতে হয়েছে নোংরা পানিতে ভিজে।'
তিনি আরও বলেন, 'এই এলাকায় বৃষ্টি হলেই রাস্তায় পানি জমে যায়, ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা মোটেও ভালো নয়। বেশি কষ্ট দেয় পানির সঙ্গে ভেসে বেড়ানো ড্রেনের বর্জ্য।'
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা শেখ নাকিব বলেন, 'যমুনা ফিউচার পার্কসংলগ্ন রাস্তা দিয়ে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় প্রবেশ করতে গিয়ে মোটরসাইকেলের ইঞ্জিনে পানি ঢুকেছে। ফলে নোংরা পানিতে ভিজে রাস্তা পারাপার হতে হয়েছে।'
গ্রিনরোড এলাকায় এক বাসিন্দা ইমরান হোসেন বলেন, 'রাস্তায় হাঁটু পানি জমে গেছে, একইসঙ্গে যানবাহনের দীর্ঘ সারি। একই জায়গায় ৩০ মিনিটের বেশি বসে আছি। নেমে হেঁটে যে যাব, সেই পরিস্থিতিও নেই।'