মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছেন, দয়া করে নির্বাচনের বিরোধিতা করবেন না, বিশ্বাসঘাতকদের এদেশের মানুষ ক্ষমা করে না: ফখরুল
 
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, যারা একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলেন, তারাই এখন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিরোধিতা করছেন।
জেএসডি'র ৫৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন। মির্জা ফখরুল জনগণের মতামত প্রতিফলিত হয় এমন একটি নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান।
আলোচনা সভার শুরুতেই মির্জা ফখরুল জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রবের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন এবং তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি স্মরণ করেন ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে একদলীয় শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আ স ম আবদুর রব ও জাসদের সাহসী ভূমিকার কথা।
বিএনপি মহাসচিব বর্তমান সংকট নিরসনে সরকারের ব্যর্থতার সমালোচনা করে বলেন, "বর্তমান সরকার এবং তাদের কমিশন দীর্ঘ আলোচনা সত্ত্বেও ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি। কমিশনের বিভিন্ন বিষয়ে একমত হলেও কিছু বিষয়ে আমরা একমত হতে পারিনি। তবে, আমাদের মধ্যম পথ ছিল যে, আমরা যখন নির্বাচনে যাব, তখন ইশতেহারে এই বিষয়গুলো থাকবে এবং জনগণ ভোট দিলে আমরা সেগুলো বাস্তবায়ন করব।"
মির্জা ফখরুল বলেন, "আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা অনুযায়ী ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। কিন্তু একটি মহল নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।"
তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, নির্বাচনের আগে গণভোটের কোনো সুযোগ নেই। তিনি বলেন, "নির্বাচনের দিনই গণভোট হবে, যেখানে দুটি কারণ থাকবে: জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং গণভোট। এই বিষয়ে কোনো দ্বিমত থাকার কথা নয়।"
সরাসরি জামায়য়াতে ইসলামীর কথা উল্লেখ না করে, যারা নির্বাচন নিয়ে গোলযোগ করছেন এবং রাস্তায় নেমেছেন, তাদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, "দয়া করে জনগণকে আর বিভ্রান্ত করবেন না। একাত্তরে আপনারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলেন, এখন দয়া করে জনগণের নির্বাচনের বিরোধিতা করবেন না। এই দেশের মানুষ কখনো কোনো যারা বেশি করে তাদেরকে ক্ষমা করেন তারা ক্ষমা পায় না সুতরাং ওখান থেকে সরে আসুন নির্বাচন করুন নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের মতামত প্রতিষ্ঠিত হোক।"
বিএনপি সংস্কারের দল উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, "বিএনপি সবসময় সংস্কারের কথা বলে এসেছে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান একদলীয় শাসন থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্রে ফিরে এসেছিলেন এবং মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পরবর্তীকালে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সংসদীয় সরকার পদ্ধতি এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন।"
তিনি বলেন, "২০০৬ সালে বিএনপি ১৯-২০ দফা এবং পরবর্তীতে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে। সুতরাং, যারা বলেন বিএনপি সংস্কার চায় না, তারা জাতিকে বিভ্রান্ত করছেন।"
মির্জা ফখরুল জোর দিয়ে বলেন, "আমরা অবশ্যই সেই সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করব, যেগুলোতে আমরা ঐকমত্যে পৌঁছেছি। ক্ষমতায় এলে সেগুলো আমাদের ইশতেহারে থাকবে।"
সবশেষে তিনি বলেন, "আমরা আমাদের মিত্রদের সাথে নিয়ে, যাদের সাথে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে লড়াই করেছি এবং একসাথে কাজ করেছি, তাদের সাথে নিয়েই জাতীয় সরকার গঠন করতে চাই। আসুন, সবাই মিলে নির্বাচনকে উপভোগ করি এবং একটি জনগণের পার্লামেন্ট ও জনগণের সরকার গঠন করি।"

 
             
 
 
 
 
