১৫ সেনা কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজিরের পর সেনানিবাসের সাব-জেলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সংঘটিত গুম-খুনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের হওয়া দুই মামলায় সাবেক ও বর্তমান ১৫ জন সেনা কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তাদের ট্রাইব্যুনাল থেকে ঢাকা সেনানিবাসের সাব-জেলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
সাব-জেলে নেয়ার বিষয়টি বিবিসি বাংলাকে নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল মো. তানভীর হোসেন। তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, 'আদালত থেকে তাদের সেনানিবাসের সাব-জেলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে কারা কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে তারা থাকবেন।'
১৫ সেনা কর্মকর্তার আইনজীবী ব্যারিস্টার সরোয়ার হোসেনও আজ ট্রাইব্যুনালে শুনানি শেষে সাংবাদিকদের বলেছেন, তার মক্কেলদের আপাতত সেনানিবাসের সাব-জেলে রাখা হবে।
মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের হওয়া দুই মামলায় সাবেক ও বর্তমান ১৫ জন সেনা কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ (২২ অক্টোবর) কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ২০ নভেম্বর দিন ধার্য করা হয়েছে।
এর আগে, আজ সকাল সাড়ে ৬টার দিকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে সবুজ রঙের একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত প্রিজন ভ্যানে করে অভিযুক্তদের সেনানিবাসের অস্থায়ী কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে আনা হয়। তারা সবাই সাধারণ পোশাকে ছিলেন।
আদেশের পর চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, 'জোরপূর্বক গুম ও খুনের মামলায় যে ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে আজ হাজির করা হয়েছিল, তাদেরকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।'
তাদের কোথায় রাখা হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'এটি সম্পূর্ণ কারা কর্তৃপক্ষের ওপর নির্ভর করছে। তারা এই আসামীদের কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখবেন, নাকি অস্থায়ী কারাগারে রাখবেন, নাকি চট্টগ্রাম কারাগারে পাঠাবেন সেটি সম্পূর্ণ কারা কর্তৃপক্ষের ওপর নির্ভর করছে।'
তিনি আরও জানান, 'আগামী ২০ নভেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন ট্রাইবুনাল। পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ পলাতক অন্য আসামীদেরকে গ্রেপ্তার করে ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।'

জামিন আবেদনের বিষয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, 'এই সেনা কর্মকর্তাদের পক্ষে জামিন আবেদন করার জন্য আজ কয়েকজন আইনজীবী আসামিদের সঙ্গে মৌখিকভাবে আলাপ করেছেন। আজকে ট্রাইব্যুনাল কোনো জামিনের আবেদন শুনেননি। ট্রাইব্যুনাল বলেছেন জামিন আবেদনের জন্য একটি প্রক্রিয়া রয়েছে, সেটি অনুসরণ করে পরবর্তী ধার্য তারিখে সেই জামিন আবেদন শুনানি হতে পারে।'
অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের আইনজীবী ব্যারিস্টার সারোয়ার জানিয়েছেন, তারা জামিনের জন্য আবেদন করবেন। ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে, তাদের পক্ষ থেকে দুটি আবেদন দাখিলের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে—একটি জামিনের এবং অন্যটি জামিন না হলে বিশেষ হেফাজতে রেখে বিচার কার্যক্রম পরিচালনার।
এদিকে, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজধানীর কাকরাইল, মৎস্য ভবন, পল্টনসহ ট্রাইব্যুনাল সংলগ্ন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থানে ছিল। ভোর থেকেই ট্রাইব্যুনাল ও হাইকোর্টের মাজার গেট এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। সেখানে পুলিশ ও র্যাবের পাশাপাশি বিজিবি এবং সেনাবাহিনীর সদস্যদেরও মোতায়েন থাকতে দেখা গেছে।
মামলার প্রেক্ষাপট
গত ৮ অক্টোবর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে র্যাবের টাস্কফোর্স ইন্টারোগেশন (টিএফআই) সেল এবং জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলে (জেআইসি) সংঘটিত গুম, আটক ও নির্যাতনের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দুটি মামলা দায়ের করা হয়।
টিএফআই সেলের মামলায় ১৭ জন এবং জেআইসি সেলের মামলায় ১৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। দুই মামলায় সাবেক ও বর্তমান মিলিয়ে মোট ২৪ জন সেনা কর্মকর্তা অভিযুক্ত।
ট্রাইব্যুনালের আদেশ অনুযায়ী, ২১ অক্টোবরের মধ্যে আসামিদের গ্রেপ্তার করে ২২ অক্টোবর আদালতে হাজির করার নির্দেশনা ছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১১ অক্টোবর সেনা সদর দপ্তর জানায়, গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে তারা হেফাজতে নিয়েছে। পরদিন ১২ অক্টোবর সরকার ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবনকে অস্থায়ী কারাগার ঘোষণা করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে।