‘শত কোটি টাকার’ পণ্য পুড়ে ছাই, বিমানবন্দরে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব কষছেন উদ্বিগ্ন আমদানিকারকেরা

রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে গতকাল অগ্নিকাণ্ডের পর নিজেদের পণ্যের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে উদ্বেগে আছেন আমদানিকারকেরা। ক্ষণে ক্ষণে তারা তাদের প্রতিনিধি, অর্থাৎ সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের কর্মকর্তাদের ফোন করে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য জানার চেষ্টা করছেন।
আজ রোববার (১৯ অক্টোবর) রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আমদানি কার্গো ভিলেজের সামনে সরেজমিনে এই চিত্র দেখা গেছে।
গতকাল আগুন লাগার পর প্রায় ছয় ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে রাত পৌনে ৯টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। তবে কার্গো ভিলেজের আশপাশ দিয়ে আজ দুপুর ১২টা নাগাদও ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে।
আগুন সম্পূর্ণভাবে নেভাতে এখনও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা কাজ করে যাচ্ছেন, চলছে মালামাল উদ্ধার কাজও।

এসময় কার্গো ভিলেজের বাইরে বিপুলসংখ্যক সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের প্রতিনিধিদের অপেক্ষা করতে দেখা যায়, তারা উদ্বিগ্ন হয়ে উদ্ধার কার্যক্রম দেখছিলেন। অনেক এজেন্টকে তাদের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ফোনে কথা বলতে দেখা যায়।
সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট প্রতিষ্ঠান 'রুহুল ইন্টারন্যাশনাল'-এর প্রতিনিধি আলাল আহমেদ টিবিএসকে বলেন, 'আমাদের প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৪০ হাজার ডলারের মালামাল ছিল, সব পুড়ে গিয়েছে বলে জেনেছি। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ক্রমাগত ফোন দিয়ে খোঁজখবর নিচ্ছে।'
'এসআর ইন্টারন্যাশনাল' নামের আরেকটি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি মোশাররফ হোসেন টিবিএসকে বলেন, 'আমাদের ভিভো মোবাইলের বিভিন্ন ধরনের খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানি করা হয়েছিল, যার পরিমাণ প্রায় দশ হাজার কেজি। এছাড়া আরও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মালামাল ছিল। সব পুড়ে গিয়েছে বলে খবর পেয়েছি। এতে আমাদের প্রায় ১০০ কোটি টাকার ক্ষতি হবে।'
সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের নেতা কাজী আজমল হোসেন টিবিএসকে বলেন, প্রতিদিন প্রায় চার হাজার 'বিল অফ এন্ট্রি' বা আমদানি পণ্যের চালান ঢাকা বিমানবন্দরের মাধ্যমে আসে।

কার্গো ভিলেজ ব্যবহার করে মূলত হালকা যন্ত্রপাতি ও ইলেকট্রনিক পণ্যের আমদানি এবং তৈরি পোশাক ও নমুনা, অল্প পরিমাণ অ্যাক্সেসরিজ, দলিলপত্র ও পারসেল আমদানি বা রপ্তানি করা হয়ে থাকে। তবে, প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন মূলত আমদানি পণ্য চালান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিমানবন্দরের রপ্তানিপণ্য চালান যে অংশে থাকে সেখানে আগুন যায়নি।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) বেলা আড়াইটার দিকে বিমানবন্দরের ৮ নম্বর গেটসংলগ্ন কার্গো ভিলেজে আগুন লাগে। তবে আগুনের সূত্রপাত ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে এখনও নিশ্চিতভাবে কিছু জানা যায়নি।
আগুন নিয়ন্ত্রণে ১৩টি ফায়ার স্টেশনের ৩৭টি ইউনিট কাজ করে। আগুন নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর একাধিক ফায়ার ইউনিটও যোগ দেয়।
উদ্ধার অভিযানে অংশ নিতে গিয়ে ২৫ জন আনসার সদস্য আহত হন। তাদের দ্রুত সিএমএইচ ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ঢাকার বিমানবন্দরে আগুন লাগার ঘটনায় শুধু দেশের অভ্যন্তরে নয়, আন্তর্জাতিক কিছু ফ্লাইট আশেপাশের দেশেও ডাইভার্ট করে দেওয়া হয়। তবে এখন ফ্লাইট চলাচল সম্পূর্ণ স্বাভাবিক রয়েছে।