চট্টগ্রামে ভোটার বেড়েছে ৩ লাখ, ভোটকেন্দ্র কমায় উদ্বেগ

আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে চট্টগ্রামে ভোটার সংখ্যা ৩ লাখের বেশি বেড়েছে। তবে জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের খসড়া তালিকা অনুযায়ী, একই সময়ে ভোটকেন্দ্র ও বুথের সংখ্যা কমেছে।
নির্বাচন কর্মকর্তারা বলছেন, এতে ভোটগ্রহণে কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু বিশ্লেষকরা মনে করছেন, কেন্দ্র কমে যাওয়ায় ভোটের দিনে ভোটারদের চাপ বাড়বে এবং প্রভাব পড়তে পারে ভোট প্রদানের গতি ও অংশগ্রহণে।
খসড়া তালিকা অনুযায়ী, চট্টগ্রামে বর্তমানে মোট ভোটার ৬৬ লাখ ৪৮ হাজার ৮৫ জন। গত নির্বাচনের তুলনায় এবার ভোটার বেড়েছে ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৬৮৮ জন।
এবার জেলায় ভোটকেন্দ্র থাকছে ১ হাজার ৯৫০টি, যা আগেরবারের তুলনায় ৭৩টি কম। আর ভোটকক্ষ থাকছে ১২ হাজার ৫৪০টি, যা আগেরবারের চেয়ে ১ হাজার ১৯২টি কম। মোট ভোটারের মধ্যে পুরুষ ৩৪ লাখ ৫৯ হাজার ৩৩১ জন, নারী ৩১ লাখ ৮৮ হাজার ৬৯১ জন ও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ৬৩ জন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৬৩ লাখ ১৪ হাজার ৩৯৭ জন। সে সময় ভোটকেন্দ্র ছিল ২ হাজার ২৩টি এবং ভোটকক্ষ ছিল ১৩ হাজার ৭৩২টি।
আগামী নির্বাচন সম্পূর্ণ ব্যালট পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হবে, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) থাকছে না।
নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে, এর ফলে ভোট গণনা ও ব্যালটপেপার বিতরণে কিছুটা ধীরগতি আসতে পারে; তবে ব্যবস্থাপনাগত দিক থেকে বিষয়টি সহজতর হতে পারে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক আমির মুহাম্মদ নসরুল্লাহ টিবিএসকে বলেন, ভোটার বাড়ার অনুপাতে ভোটকেন্দ্র ও বুথ বাড়ানো উচিত ছিল।
তিনি বলেন, '৩ লাখ ভোটার বাড়া চাট্টিখানি কথা নয়। ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ থাকলে সেক্ষেত্রে আমাদের দেশে ভোটার উপস্থিতি ভালো থাকে। ভোটার যেহেতু বেড়েছে, তাই স্বাভাবিকভাবেই কেন্দ্র ও বুথ বাড়ানো উচিত। যদি কমে যায়, সেক্ষেত্রে ভোট গ্রহণ কঠিন হতে পারে এবং সময়ও বেশি লাগতে পারে। তবে কমিশনের হয়তো আলাদা ক্যালকুলেশন থাকতে পারে। নিরাপত্তা, লোকবল এগুলোও একটি বড় ফ্যাক্টর।'
বিগত নির্বাচনগুলোতে চট্টগ্রামের বন্দর, হালিশহর ও কোতোয়ালী অঞ্চলে ভোটের দিন দীর্ঘ সারি ও ধীর ভোটগ্রহণের নজির রয়েছে।
এবার ভোটার বেড়েছে, কিন্তু কেন্দ্র কমায় অনেকেই আশঙ্কা করছেন একই পরিস্থিতি আরও প্রকট হতে পারে।
চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন বলেন, নির্বাচন কমিশনের নীতিমালার আলোকে ভোটকেন্দ্র ও কক্ষ নির্ধারণ করা হয়েছে।
তিনি টিবিএসকে বলেন, 'আগে ইভিএম সিস্টেম ছিল, তাই বেশি কেন্দ্রের প্রয়োজন ছিল। আমরা যেহেতু ব্যালট পেপারে ফিরে যাচ্ছি, তাই এবার ভোটকক্ষ তুলনামূলক একটু কম। কিছু ভোটকেন্দ্র নিয়ে আপত্তি ছিল, সেগুলোর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। সার্বিকভাবে আমরা ভোটের জন্য প্রস্তুত হচ্ছি।'
এদিকে চট্টগ্রামের ১৬টি সংসদীয় আসনের মোট ৮৬টি ভোটকেন্দ্র নিয়ে রাজনৈতিক নেতারা আপত্তি জানিয়েছেন।
চট্টগ্রাম জেলার সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তার বরাবরে এই আপত্তিগুলো দাখিল করা হয়। জেলা নির্বাচন কমিশনে এই আপত্তি নিষ্পত্তির জন্য ৯ অক্টোবর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। আপত্তি পর্যালোচনা শেষে ২০ অক্টোবর চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রকাশ করা হবে।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) আগামী ৩১ অক্টোবর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন সম্প্রতি ১০ ও ১১ অক্টোবর চট্টগ্রাম সফর করেছেন। চট্টগ্রাম বিভাগের মাঠ প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলাবাহিনী ও নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। সেখানে ভোটকেন্দ্র ও প্রস্তুতি ঘিরে অগ্রগতি পর্যালোচনা করেন।
সফরকালে সিইসি বলেন, 'নির্বাচনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। কোনো কেন্দ্রে সামান্য সমস্যা বা অনিয়ম দেখা গেলে সঙ্গে সঙ্গে সেখানকার ভোট গ্রহণ বন্ধ করে দেওয়া হবে। ভোটের দিন মাঠপর্যায়ে আইন ও প্রশাসনিক ক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে।'
চট্টগ্রামে মোট ১৬টি সংসদীয় আসন রয়েছে। এগুলো হলো: চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই), চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি), চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ), চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (সিসিসি) ওয়ার্ড ৯ ও ১০), চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী এবং সিসিসি ওয়ার্ড ১ ও ২), চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান), চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া), চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী এবং সিসিসি ওয়ার্ড ৩–৭)।
অন্যান্য আসনগুলো হলো: চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী), চট্টগ্রাম-১০ (হালিশহর), চট্টগ্রাম-১১ (পতেঙ্গা), চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া), চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা, কর্ণফুলী), চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ ও সাতকানিয়ার একাংশ), চট্টগ্রাম-১৫ (লোহাগাড়া ও সাতকানিয়ার একাংশ), চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী)।