বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে কোনো ‘মাস্টারমাইন্ড’ ছিল না: উপদেষ্টা আসিফ

গত বছরের জুন মাসে শুরু হওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে কোনো 'প্রধান' বা 'মাস্টারমাইন্ড' ছিল না বলে জানিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১–এ জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে রাজধানীর চানখারপুলে ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাক্ষ্য দেয়ার পর আসামিপক্ষের আইনজীবীর জেরার জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
এদিন বিকেল ৩টার পর বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১–এ দ্বিতীয় দিনের মতো সাক্ষ্য দেন আসিফ মাহমুদ। পরে শুরু হয় তার জেরা। তিনি এ মামলার ১৯ নম্বর সাক্ষী।
প্রথমে তাকে জেরা করেন গ্রেপ্তার থাকা আসামি শাহবাগ থানার সাবেক ওসি (অপারেশন) মো. আরশাদ হোসেনের আইনজীবী সাদ্দাম হোসেন অভি। জেরার একপর্যায়ে তিনি জানতে চান, আন্দোলনে কোনো মাস্টারমাইন্ড ছিল কিনা।
জবাবে আসিফ মাহমুদ বলেন, 'গত বছরের ৫ জুন কোটাপ্রথা পুনর্বহালের রায়ের পর আমরা ৫৮ জন সমন্বয়ক ও সহসমন্বয়ক মিলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আন্দোলন শুরু করি। এতে কোনো রাজনৈতিক দলের ইন্ধন ছিল না এবং আন্দোলনে প্রধানও কেউ ছিল না। সমন্বয়কদের সবার মর্যাদা ছিল সমান।'
যোগাযোগের মাধ্যম বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমরা ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করেছি।'
অভি জানতে চান, আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়েছিল কিনা। জবাবে উপদেষ্টা বলেন, 'আমিসহ আমাদের অনেকের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা হয়েছে।'
একদফা কর্মসূচির পেছনে বিদেশি কোনো শক্তি বা কারো হাত ছিল কিনা—এমন প্রশ্নে আসিফ মাহমুদ বলেন, 'একদফা কর্মসূচি ঘোষণার পেছনে কোনো বিদেশি ইন্ধন ছিল না। আমরা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আন্দোলনের খরচও আন্দোলনকারীরাই ফান্ড তৈরি করে জোগাড় করেছিল।'
অভি পরবর্তী প্রশ্নে জানতে চান, গত বছরের ৫ আগস্ট চানখারপুলে যেখান থেকে পুলিশ গুলি চালিয়েছিল, সেখান থেকে তার দূরত্ব কত ছিল। জবাবে আসিফ বলেন, 'আমি ২০০ মিটার দূরে ছিলাম।' তখন আইনজীবী বলেন, 'এত দূর থেকে তো গুলি করার দৃশ্য দেখা যায় না।' জবাবে আসিফ মাহমুদ বলেন, 'এটা সত্য নয়।'
এদিন দুপুর সোয়া ২টার দিকে ট্রাইব্যুনালে পৌঁছান আসিফ মাহমুদ। বেলা ২টা ৫৫ মিনিটে এজলাসে প্রবেশ করে তার সাক্ষ্য শুরু হয়।
গত ৯ অক্টোবর এ মামলায় প্রথম দিনের মতো সাক্ষ্য দেন তিনি। ওইদিন বেলা পৌনে ৩টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সাক্ষ্যগ্রহণ চলে। তবে তা শেষ না হওয়ায় প্রসিকিউশনের আবেদনের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল-১।
প্রথম দিনের সাক্ষ্যে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের পটভূমি তুলে ধরেন আসিফ মাহমুদ। একইসঙ্গে গত বছরের ৫ আগস্ট চানখারপুলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নৃশংসতার বিবরণ দেন। এমনকি ডিবি পরিচয়ে রাতে নিজেকে গুম করার চেষ্টার কথাও তিনি জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন। এসব ঘটনার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ সংশ্লিষ্টদের দায়ী করেন তিনি।
এই মামলায় গ্রেপ্তার চার আসামি হলেন: শাহবাগ থানার সাবেক ওসি (অপারেশন) মো. আরশাদ হোসেন, কনস্টেবল মো. সুজন মিয়া, মো. ইমাজ হোসেন ইমন ও মো. নাসিরুল ইসলাম।
পলাতক আসামিরা হলেন: সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিএমপির সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ আলম মো. আখতারুল ইসলাম ও রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল।
গত ১৪ জুলাই চানখারপুলের মামলায় পলাতক চারজনসহ আট আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।