মিরপুরে অগ্নিকাণ্ড: রাসায়নিকের গ্যাসে আশপাশের প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা অসুস্থ, কারখানা বন্ধ ঘোষণা

ঢাকার মিরপুরের শিয়ালবাড়ি এলাকায় একটি সাততলা পোশাক কারখানা ও সংলগ্ন রাসায়নিক গুদামে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আশপাশের এলাকায় বিষাক্ত গ্যাস ছড়িয়ে পড়ায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। কেউ কেউ তাদের প্রতিষ্ঠান খুললেও সেগুলো আবার বন্ধ করে শ্রমিকদের ছুটি দেওয়া হয়েছে।
রাইজিং অ্যাপারেল লিমিটেডের এক নারী শ্রমিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'সকালে অফিসে প্রবেশ করতেই দেখি নাক-মুখ জ্বলে যাচ্ছে। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। এরপরেও কাজ করার চেষ্টা করেছি কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই পড়ে যাই এবং অজ্ঞান হয়ে যাই। পরে কারখানা থেকে আমাকে বের করে প্রাথমিক চিকিৎসা দিলে কিছুটা সুস্থ ফিল করছি। কিন্তু নিঃশ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে।'
তিনি আরও বলেন, 'আমাদের সাথে অন্তত ১৫-২০ জন অসুস্থ হয়ে পড়েন। তবে সবাই ই চোখ জ্বালাপোড়া ও নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে এমনটা বলছিলেন।'
রাইজিং অ্যাপারেল লিমিটেডের এই কারখানাটি ঘটনাস্থল থেকে একটি গলি (সড়ক) পরে অবস্থিত।
এর পাশের অন্য একটি প্রতিষ্ঠান এম এস প্লাস্টিক থেকে দুপুর আড়াইটার দিকে এক কর্মীকে অসুস্থ অবস্থায় বের করে হাসপাতালের দিকে নেওয়া হয়।

এই প্রতিষ্ঠানের অন্য একজন কর্মচারী টিবিএসকে বলেন, 'আমাদের কিছু ডেলিভারির কাজ ছিলো, তাই তাকে নিয়ে প্রবেশ করেছিলাম। গ্যাসের কারণে সে অসুস্থ হয়ে পড়ায় কাজ বন্ধ রেখেছি।'
রাইজিং-এর অন্য আর একটি কারখানার কর্মচারী বিলকিস বেগম কাজ করেন সুইং সেকশনে। তিনি টিবিএসকে বলেন, 'আমাদের কারখানাও সকালে খুলেছিলো কিন্তু এক ঘণ্টা চলার পরে বন্ধ করে দেওয়া হয়। ভবনের মধ্যে গ্যাস জমে আমাদের নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। অন্য একটি কারখানায় ৫০ জনের বেশি অসুস্থ হয়েছে বলে আমরা জেনেছি।'
রাইজিং অ্যাপারেল লিমিটেডের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এইচআর ও কমপ্লায়েন্স) মইনুল হাসান বলেন, 'আমাদের এক একটি কারখানায় ৪০০-৫০০ জন করে শ্রমিক কাজ করেন। সকাল ৮টার দিকে অফিস খুলি এবং পৌনে ৯টার মধ্যে বন্ধ করে দেই। কারণ গ্যাস জমে থাকার কারণে অনেকেই নিশ্বাস নিতে পারছিলেন না, বিশেষ করে নারী কর্মীরা বেশি অস্বস্তি ফিল করে। ফলে সবাইকে ছুটি দিয়ে দেই।'
তিনি আরও বলেন, 'আমাদের কোনো কর্মী গুরুতর আহত না হলেও অনেকেই শ্বাসকষ্টের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন। আমরা ফায়ার সার্ভিসের নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী শুক্রবার পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করেছি।'
ফায়ার সার্ভিসের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর কাজী নজমুজ্জামান বলেন, 'কেমিক্যাল গোডাউনের ভিতরে কেমিক্যালের প্রচুর সাদা ধোঁয়া। যা প্রচণ্ড বিষাক্ত, তাই এটি নিয়ন্ত্রণে আসতে সময় লাগবে। তাই আমরা সবাইকে এই এলাকা থেকে দূরে থাকার জন্য বলেছি। একইসাথে আশপাশের কারখানাগুলো ৭২ ঘণ্টার জন্য বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'এখানে কোন ধরনের ক্যামিক্যাল ছিলো সেটা আইডেন্টিফাই করা সম্ভব হয়নি, কাজ চলছে। এখানে যে ক্যামিক্যাল থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়েছে যা মানুষের ফুসফুস, হার্টসহ নানা সমস্যা হতে পারে। তাই সবার এই এলাকা থেকে যতটুকু সম্ভব দূরে থাকতে হবে।'
এই পরিস্থিতিতে রাইজিং গ্রুপের তিনটি কারখানাসহ আরো একাধিক কারখানা বন্ধ করে শ্রমিকদের ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
রাইজিং অ্যাপারেল লিমিটেডের চেয়ারম্যান নার্গিস আক্তার টিবিএসকে বলেন, 'সকালে আমাদের শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে এলে সেখানে গ্যাসের প্রতিক্রিয়ায় কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এ অবস্থায় আমরা এক্সপার্টের পরামর্শ অনুযায়ী আগামী শনিবার পর্যন্ত কারখানা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অরুনিমা অ্যাপারেলস, রাইজিং ফ্যাশন সহ আমাদের তিনটি কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।'
এছাড়া পাশে আরো একাধিক গার্মেন্টস ও বন্ধ করে রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।
গতকাল সোমবার (১৪ অক্টোবর) বেলা ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে আগুনের সূত্রপাত হয়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে পোশাক কারখানার পাশের একটি অবৈধ রাসায়নিক গুদাম থেকে।
আগুন দ্রুতই পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে, এতে অন্তত ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। উদ্ধার তৎপরতা অব্যাহত থাকায় মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।