যারা দুর্নীতিবাজ তাদের সেইফ এক্সিট প্রয়োজন: টিবিএসকে এবি পার্টির চেয়ারম্যান ও সিপিবি সাধারণ সম্পাদক
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের 'সেফ এক্সিট' বা 'নিরাপদ প্রস্থান' নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন জোর আলোচনা চলছে। কারা এই নিরাপদ প্রস্থান চান এবং কেনই বা এই প্রসঙ্গ সামনে এসেছে—এমন প্রশ্নে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু ও সিপিবির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ ক্বাফী রতন দুজনই জানান যে, যারা দুর্নীতি বা ক্ষমতার অপব্যবহারের সঙ্গে জড়িত, তাদের 'সেইফ এক্সিট' প্রয়োজন।
টিবিএস মাল্টিমিডিয়ার আয়োজিত 'রোড টু ইলেকশন' অনুষ্ঠানে এই বিষয়ে মতামত দেন এই দুই রাজনীতিক। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন টিবিএস-এর নির্বাহী সম্পাদক শাখাওয়াত লিটন।
'সেফ এক্সিট' বিতর্ক কেন সামনে এলো, এই প্রশ্নের জবাবে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, 'এক্সিট তো উপদেষ্টাদের লাগবেই, কারণ উনাদের এক্সিটের টাইম তো চলে আসছে। ইলেকশন মানেই তো উনাদের এক্সিট।'
মঞ্জু পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন, 'সেফ এক্সিটের প্রশ্নটা কেন আসছে?' এর উত্তরে তিনি বলেন, 'যারা ক্ষমতার অপব্যবহার করেন, কেবল তাদেরই সেইফ এক্সিটের কথা চিন্তা করতে হয়।'
'আমি তো মনে করি, চাঁদাবাজি, ধান্দাবাজি বা দুর্নীতি যদি কেউ না করে, তার তো কোনো সেফ এক্সিটের দরকার নাই', যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, দায়িত্ব পালনকালে কেউ যদি অন্যায় বা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন, তবে মেয়াদ শেষে তাকে জবাবদিহিতার আওতায় আসতে হবে—এটাই স্বাভাবিক।
তিনি আরও বলেন, 'কিছু কিছু উপদেষ্টার ব্যাপারে দুর্নীতির অভিযোগ বা কিছু আন্ডারহ্যান্ড কার্যক্রমের কথা চাউর হয়েছে। তাদের ঘনিষ্ঠ কিছু কর্মকর্তাকে দুদকের তদন্তের আওতায় আনা বা বাদ দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। কেউ কেউ নিজেদের ভুল স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করে "সরি-টরিও" বলেছেন। এসব কারণেই "সেইফ এক্সিট" প্রসঙ্গটি সামনে এসেছে।'
তবে তিনি এও বলেন, 'উপদেষ্টাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যাদের কোনো সেইফ এক্সিটের প্রশ্ন আসে না।'
মঞ্জু উল্লেখ করেন, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম যেহেতু সেইফ এক্সিটের বিষয়টি 'জানেন' এবং সামনে এনেছেন, সেহেতু উনিই তা প্রকাশ করুক।
'দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত উপদেষ্টাদের সেইফ এক্সিটের কোনো সুযোগ নেই'
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ ক্বাফী রতন বলেন, 'সাংবিধানিক প্রয়োজনীয়তার দিক থেকে সব উপদেষ্টারই এক ধরনের "সেইফ এক্সিট" প্রয়োজন। কারণ সংবিধানে উপদেষ্টাদের কার্যক্রমের কোনো বিধান নেই এবং পরবর্তী সংসদে তাদের কার্যকলাপকে বৈধতা দিতে হবে।'
তবে উপদেষ্টাদের দায়বদ্ধতার প্রশ্নে তিনি কঠোর অবস্থান ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, 'যে উপদেষ্টারা দুর্নীতি ও সুযোগ-সুবিধার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন, সুবিধা দিয়েছেন—এনবিআরের চেয়ারম্যান করার জন্য নাকি কত কোটি টাকার ডিলও হয়েছে—এগুলো যারা করেছে, তাদের তো কোনো সেইফ এক্সিটের কোনো সুযোগই নাই। ক্ষমতা ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাদের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে।'
সিপিবি সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, 'নতুন বন্দোবস্তের কথা বলে পুরোনো ব্যবস্থার পুনরাবৃত্তি করা হচ্ছে। এই গণঅভ্যুত্থান ছিল স্বতঃস্ফূর্ত এবং এর কোনো রাজনৈতিক নেতা ছিল না। নতুন বন্দোবস্তের কথা বলে যারা আমাদের পুরোনো বন্দোবস্তের শিকার করেছেন, তাদের দায়মুক্তির কোনো সুযোগ নেই, সেইফ এক্সিটেরও কোনো সুযোগ নেই।'