ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশে জবাবদিহির কাঠামো থাকবে: ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব

ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা ও নাগরিকদের অধিকার নিশ্চিত করতে সরকার প্রণীত 'ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫'-এ জবাবদিহির কাঠামো যুক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
তিনি বলেছেন, 'কর্তৃপক্ষের জবাবদিহির জন্য আমরা একটি কোয়াসি-জুডিসিয়াল কাউন্সিল রেখেছি। এই কাউন্সিলের কাছে কর্তৃপক্ষ নিজেই জবাবদিহি করবে। নাগরিকরা যদি মনে করেন তাদের তথ্যের অপব্যবহার হয়েছে, তারা আদালতের পাশাপাশি এই কোয়াসি-জুডিসিয়াল কাউন্সিলে সালিশের আবেদন করতে পারবেন। এটি একটি হাই-পাওয়ার কাঠামো।'
আজ রোববার (১২ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে আইসিটি বিভাগের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সভায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জাবাবে তিনি এ কথা বলেন। সভায় 'ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫', 'জাতীয় উপাত্ত ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫' এবং 'সাইবার সুরক্ষা (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫'-এর নীতিগত অনুমোদনের বিষয়টি তুলে ধরা হয়।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য নাগরিক জীবনের তথ্যের গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। একই সঙ্গে প্রশাসনিক কাঠামো ও ডিজিটাল পরিবেশে জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা করা। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান- সব পক্ষেরই নিরাপত্তা ও দায়িত্ব নিশ্চিত করতে এই আইন করা হয়েছে।'
তিনি বলেন, 'নতুন আইনে যদি কোনো ভুল থেকে থাকে, আমরা সংশোধন করব। আমরা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য দীর্ঘ লড়াই করেছি, তাই সমালোচনার জন্য প্রস্তুত আছি। এটি একটি জাতীয় বিষয়, যেখানে জাতীয় স্বার্থকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।'
নতুন কাঠামো ও ৬টি বিশেষ উইং
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানান, প্রস্তাবিত অধ্যাদেশ বাস্তবায়নের জন্য একটি উপাত্ত সুরক্ষা কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে, যার অধীনে ছয়টি বিশেষ উইং কাজ করবে। এসব উইং ন্যাশনাল ক্লাউড পলিসি, ন্যাশনাল এআই পলিসি, ন্যাশনাল সফটওয়্যার পলিসি, এন্টারপ্রাইজ কালচার ইত্যাদি বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে কাজ করবে।
তিনি বলেন, 'আমরা এমন কাঠামো তৈরি করেছি, যাতে সরকারের বাইরে থেকেও বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত করা যায়। কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান পদে বেসরকারি খাত থেকে যোগ্য ব্যক্তিকে নেওয়ার সুযোগ থাকবে। সংসদ সদস্যদের মধ্যেও যদি ডেটা গভর্নেন্স বা ডেটা সায়েন্স বিষয়ে বিশেষজ্ঞ থাকেন, তাদেরকেও এই কাউন্সিলে কো-অপ্ট করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা শুধু সরকারি সীমার মধ্যে জবাবদিহি রাখিনি, বরং একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক কাঠামো তৈরি করেছি, যেখানে নাগরিক, প্রশাসন এবং বেসরকারি খাত সবাই অংশীদার হবে।'
সভায় ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব আরও জানান, নতুন কাঠামোর অংশ হিসেবে সরকারি দপ্তরে পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহারের সীমা নির্ধারণ ও নীতিমালা প্রণয়নের কাজও হাতে নেওয়া হয়েছে। কোন দপ্তরে কী ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার করা হবে, সেটি নিয়েও নির্দেশিকা থাকবে, যাতে সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।
প্রকল্পে ২,৫০০ কোটি টাকা সাশ্রয়
তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) খাতে নেওয়া বিভিন্ন প্রকল্পের অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্ত করে কিছু প্রকল্প বন্ধ এবং কিছু প্রকল্পের ব্যয় কমিয়ে প্রায় ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে বলে জানান তিনি।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, 'আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নেওয়া কিছু আইসিটি প্রকল্পে অনিয়ম পাওয়া গেছে। এসব প্রকল্প পর্যালোচনায় আমরা ব্যয় কমানো ও অপ্রয়োজনীয় কাজ বন্ধের মাধ্যমে প্রায় ২৫০০ কোটি টাকা সাশ্রয় করতে সক্ষম হয়েছি।'
সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও আদর্শের ওপর ভিত্তি করে তৈরি গেমিং অ্যাপ প্রকল্পে ক্ষমতার অপব্যবহার হয়েছিল। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরই সে প্রকল্পটি বন্ধ করা হয়েছে।'