মেঘনা-গোমতী সেতুর টোল আদায়ে অনিয়ম; শেখ হাসিনাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করবে দুদক

মেঘনা-গোমতী সেতুর টোল আদায় প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সাবেক মন্ত্রী, সচিব ও সরকার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ মোট ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
রবিবার (১২ অক্টোবর) দুদকের উপপরিচালক আকতারুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে (টিবিএস) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, 'কমিশন থেকে মামলা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রবিবার বিকালে মামলা দায়ের করা হবে।'
দুদকের অনুসন্ধান অনুযায়ী, ২০১৬ সালে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম লিমিটেডকে (সিএনএস লিমিটেড) সরকারি ক্রয়বিধি উপেক্ষা করে একক উৎসভিত্তিক পদ্ধতিতে পাঁচ বছরের জন্য টোল আদায়ের কাজ দেওয়া হয়। এর আগে আহ্বান করা টেন্ডার কোনো যুক্তিযুক্ত কারণ ছাড়াই বাতিল করা হয় এবং অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রতিযোগিতা বা আলোচনার সুযোগ না দিয়েই সিএনএস লিমিটেডের সঙ্গে সরাসরি চুক্তি করা হয়।
টোল আদায়ের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট অর্থের ভিত্তিতে চুক্তি না করে মোট আদায়কৃত টোলের ১৭.৭৫ শতাংশ সার্ভিস চার্জ দেওয়ার সিদ্ধান্ত অনুমোদন করা হয়, যা সরকারি ক্রয়নীতির স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে দুদক মনে করছে।
তদন্তে জানা যায়, সিএনএস লিমিটেড পাঁচ বছরে মোট ৪৮৯ কোটি ৪৩ লাখ ৭৩ হাজার টাকা বিল গ্রহণ করে। তুলনামূলকভাবে দেখা গেছে, ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত একই সেতুর টোল আদায়ের কাজ মাত্র ১৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকায় সম্পন্ন করেছিল এমবিইএল-এটিটি নামে একটি যৌথ প্রতিষ্ঠান।
আবার ২০২২ সালে ইউডিসি কনস্ট্রাকশন লিমিটেড ৩ বছরের জন্য একই ধরনের কাজ পেয়েছে মাত্র ৬৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকায়, যা ৫ বছরের হিসাবে দাঁড়ায় প্রায় ১১২ কোটি টাকা। ফলে সিএনএস লিমিটেডকে টোল আদায়ের দায়িত্ব দেওয়ার ফলে সরকারের অস্বাভাবিক পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়েছে।
এছাড়াও সিএনএস লিমিটেড দাবি করে, টোল আদায়ের জন্য নতুন প্রযুক্তি স্থাপন ও অবকাঠামো নির্মাণে তারা ব্যয় করেছে ৬৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। কিন্তু অনুসন্ধানে এই ব্যয়ের কোনো প্রমাণ পায়নি দুদক। সব মিলিয়ে সিএনএস লিমিটেডকে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কাজ দেওয়ার ফলে সরকারের মোট ৩০৯ কোটি ৪২ লাখ ৪৫ হাজার ৮৯০ টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ ঘটনায় সরকারি উচ্চ পর্যায়ের ক্ষমতার অপব্যবহার, যোগসাজশ ও প্রতারণার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দণ্ডবিধির ৪০৯, ৪২০ ও ১০৯ ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭–এর ৫(২) ধারায় মামলা করা হবে বলে দুদক জানিয়েছে।
মামলার অভিযোগপত্রে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব এম এ এন ছিদ্দিকসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের মোট ১৭ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
তালিকায় আরও রয়েছেন সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান ও অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীসহ কর্মকর্তা এবং সিএনএস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুনীর উজ জামান চৌধুরী ও কোম্পানিটির দুই পরিচালক সেলিনা চৌধুরী ও ইকরাম ইকবাল।
দুদক বলছে, অভিযুক্তরা পরস্পর যোগসাজশে সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে ব্যক্তিগত বা প্রাতিষ্ঠানিক স্বার্থে কাজ করেছেন এবং রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ক্ষতি করেছেন।