জুলাই সনদ বাস্তবায়নে অগ্রগতির কথা জানালেন আলী রিয়াজ; গণভোটের সময় নিয়ে বিএনপি-জামায়াতের মতবিরোধ

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রিয়াজ বলেছেন, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে 'অনেক দূর অগ্রগতি' হয়েছে। এখন জাতীয় গণভোটের কাঠামো ও সময়সূচি নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে বিশেষজ্ঞরা প্রথমে আনুষ্ঠানিক আদেশ জারির ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বুধবার (৮ অক্টোবর) রাত ১১টায় শেষ হওয়া বৈঠকের পর তিনি বলেন, 'সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে আমরা অনেক দূর অগ্রসর হয়েছি। ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি প্রধান উপদেষ্টা নিবিড় যোগাযোগ ও দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।
'এটা আমাদের সকলের অর্জন, এটা আমাদের ধরে রাখতে হবে।'
আলী রিয়াজ আরও বলেন, 'আজকে আমাদের লক্ষ্য ছিল গণভোটের কাঠামো ও সময় ঠিক করা। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন প্রথমে আদেশ জারি করতে হবে।'
বুধবার বিকেলে শুরু হওয়া বৈঠকে সনদ বাস্তবায়নে গণভোট আয়োজনের সময় নিয়ে ঐকমত্য আসেনি।
বিএনপি জাতীয় নির্বাচনের দিন এবং জামায়াতে ইসলামী আগামী নভেম্বরের মধ্যেই গণভোট আয়োজনের কথা বলেছে।
এছাড়া গণভোট আয়োজনে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন অধ্যাদেশ, সংবিধান আদেশ, গণভোটের জন্য আদেশ কিংবা প্রজ্ঞাপন জারি—এসব ব্যাপারেও মীমাংসা হয়নি। তাছাড়া ঐকমত্য হয়নি সনদের 'নোট অভ ডিসেন্ট' নিয়েও।
আলী রিয়াজ বলেন, 'সারাদিনের আলোচনায় দলগুলোর পক্ষ থেকে বিভিন্ন মতামত এসেছে। কিছু দল জাতীয় নির্বাচনের দিন ও কিছু দল নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজন করতে প্রস্তাব দিয়েছে।
'তবে ঐকমত্য আছে যে আগামী সংসদকে সংবিধানের মৌলিক কাঠামো সংশোধনের জন্য প্রথমদিকে নির্ধারিত কিছু সময় দেওয়া হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'আগামী দু-একদিনের মধ্যে বিশেজ্ঞদের সাথে আলোচনা করে সরকারের কাছে সুপারিশ করব এবং দলগুলোকে জানাব।'
'আমরা আশা করি একটি স্বাক্ষরগ্রহণ অনুষ্ঠান করব। ইতিমধ্যে তিন-চতুর্থাংশ দল তাদের প্রতিনিধিদের নাম পাঠিয়েছে। আগামী ১৫ তারিখ না হলেও যেন ১৬-১৭ তারিথে একটি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হয়,' বলেন তিনি।
আলী রিয়াজ বলেন, ১৮ তারিখের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে, যেখানে সমস্ত নথিপত্র ও সব দলের মতামত অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, নভেম্বরের শেষ দিকে আলাদাভাবে গণভোট অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত।
'এটা নভেম্বরে নিশ্চিত হয়ে গেলে এর ওপরে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। এর আগে বাংলাদেশে ১৯ দিনের ব্যবধানেও গণভোট হওয়ার রেকর্ড আছে,' বলেন তিনি।
তাহের বলেন, জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান পরিষ্কার: 'নভেম্বরে গণভোট, ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন'।
জামায়াতের নায়েবে আমির আরও বলেন, 'জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতিতেই গণভোট হয়ে যেতে পারে। শুধু আলাদা ব্যলট ছাপাতে হবে। একটা দলেরই শুধু নোট অভ ডিসেন্ট। তারা তো বলে সংস্কার মানে; কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে আবার নোট অভ ডিসেন্ট দেয়।'
বিএনপির নোট অভ ডিসেন্ট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'একটি পার্টির নোট অভ ডিসেন্ট তো পুরো জাতির ম্যান্ডেটের বিষয় হতে পারে না। নোট অভ ডিসেন্ট মানেই পার্ট অভ ডিসিশন নয়।'
জামায়াতের প্রতিনিধি শিশির মনির বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে একটা আদেশ জারি হবে। 'ওই আদেশে গণভোটের উল্লেখ থাকবে এবং সংসদের দুটি ক্ষমতা থাকবে। একটি হচ্ছে গাঠনিক ক্ষমতাবলে সংবিধান সংশোধন হবে এবং পরে সংসদ হিসেবে কার্যকর হবে।'
অন্যদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ সভায় বলেন, জাতীয় নির্বাচনের দিনই গণভোট আয়োজন করা 'যুক্তিসম্মত ব্যয় ও প্রস্তুতির কারণে'।
তিনি আরও বলেন, তাড়াহুড়ো করে নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজন করার অর্থ হলো জাতীয় নির্বাচন প্রলম্বিত করা।