মানবতাবিরোধী অপরাধ: দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচারে তদন্ত শুরু, তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ

গত বছরের জুলাই- আগস্ট মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে বিচারের মুখোমুখি করতে আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের (আইসিটি) তদন্ত সংস্থা। এরইমধ্যে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) বিষয়টি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন ট্রাইবুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
এর আগে গত রোববার (৫ অক্টোবর) সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু হওয়ার ইঙ্গিত দেন চিফ প্রসিকিউটর। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানিয়েছিলেন।
উল্লেখ্য, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম)-এর চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ গত বছরের ২ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের চিফ প্রসিকিউটর বরাবর অভিযোগ জমা দেন। অভিযোগে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগসহ ১৪টি রাজনৈতিক দল গণহত্যার সরাসরি হুকুমদাতা হিসেবে দায়ী।
মঙ্গলবার চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, 'আমরা অভিযোগের ভিত্তিতে প্রাথমিক তদন্ত শুরু করছি। এটি পুরোদমে শুরু হলে বিষয়টি কতদূর পর্যন্ত যেতে পারে, তা আমরা তখন জানাতে পারব।'
রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
তাজুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তদন্তের প্রক্রিয়া চলমান ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তাও নিয়োগ হয়েছে। খুব দ্রুতই তদন্তকাজ শেষ করবেন তারা। প্রতিবেদন প্রাপ্তি সাপেক্ষে দল হিসেবে বিচারের জন্য আওয়ামী লীগের ব্যাপারেও যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দল হিসেবে সাজা প্রসঙ্গে তাজুল ইসলাম বলেন, 'দলকে তো আর সাজা দেওয়া যাবে না। কিন্তু দলকে কী ধরনের সাজা দেওয়া যাবে, সেটা কিন্তু আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে বলা আছে। যেমন দলকে নিষিদ্ধ করা বা অন্য কোনো প্রক্রিয়ায় সাজা দেওয়া বা তাদের নেতাকর্মীদের ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা ইস্যু করা। এসব আইনে রয়েছে। তবে এ মুহূর্তে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের ব্যাপারেই তদন্ত শুরু হয়েছে। যেসব দল জড়িত ছিল তাদের ব্যাপারেও যদি তদন্ত হওয়া দরকার, তাহলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে তদন্ত সংস্থা।'
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, আওয়ামী লীগের বিচারের ব্যাপারে আবেদন আগেরই ছিল। যেহেতু সব আবেদন একসঙ্গে নিষ্পত্তি করা সম্ভব ছিল না, তাই ক্রমান্বয়ে এসব করা হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে এ তদন্ত শুরু হয়েছে। এছাড়া আদালতে সাক্ষীদের দেওয়া বিভিন্ন জবানবন্দি এক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিক দলিল হিসেবে কাজ করবে। সাক্ষ্যগুলো অন্যতম প্রমাণ হিসেবে গণ্য হবে।
এ সপ্তাহে বেশ কিছু ঘটনা ঘটবে বলা হয়েছিল—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আমরা বলেছি আরও বেশ কয়েকটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল হবে। এ সপ্তাহের মধ্যেই হবে আশা করছি।'
উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন সংশোধন করে জারি করা অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, এই আইন বা প্রযোজ্য অন্যান্য আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, যদি ট্রাইব্যুনালের কাছে প্রতীয়মান হয় যে কোনো সংগঠন এই আইনের ৩ ধারা-উপধারা (২)-এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেছে, আদেশ দিয়েছে, চেষ্টা করেছে, সহায়তা করেছে, উসকানি দিয়েছে, মদদ দিয়েছে, ষড়যন্ত্র করেছে, সহযোগিতা করেছে অথবা অন্য যেকোনোভাবে সেই অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করেছে, তবে ট্রাইব্যুনালের ক্ষমতা থাকবে সংগঠনটির কার্যক্রম স্থগিত বা নিষিদ্ধ করার, সংগঠনের নিষিদ্ধ ঘোষণার, এর নিবন্ধন বা লাইসেন্স স্থগিত অথবা বাতিল করার এবং এর সম্পত্তি জব্দ করার।